শহরের পর করোনার ভয়াল থাবা গ্রামেও

করোনা ভাইরাস
লেখক

বন্ধু- বান্ধব ও আত্নীয় স্বজনের মাধ্যমে একটু খোঁজ নিলেই জানতে পারবেন, দেশের প্রায় প্রতিটি গ্রামের প্রায় প্রতিটি পরিবারে এখন জ্বর, কাশি, শারীরিক দুর্বলতা, খাবারে স্বাদ- গন্ধ না পাওয়া এমন উপসর্গ নিয়ে অনেক মানুষ অসুস্থ হয়ে আছে। খুব সম্ভবত ঈদের কয়েকদিন আগে শহর থেকে গ্রামে আসা মানুষজন মৃদু উপসর্গ বা উপসর্গবিহীন অবস্থায় করোনা বহন করে গ্রামে এসে অবাধ মেলামেশা করে সবার মধ্যে ছড়িয়েছে।

আরও পড়ুন: জুলাইয়ে ৬১৮২ মৃত্যু, সামনে আরও বিপদ

তবে গ্রামের মানুষজন করোনার প্রায় সবগুলো উপসর্গ থাকা সত্ত্বেও এই জ্বরকে নরমাল জ্বর হিসেবেই নিচ্ছে এবং কোভিড টেস্ট না করে মাস্কবিহীন স্বাভাবিক চলাফেরা করছে। হতেই পারে এটা সিজনাল জ্বর কিংবা আসলেই কোভিড। অদ্ভুত ব্যাপার হচ্ছে, এই জ্বরে আক্রান্ত হওয়ার কয়েকদিন পরেই গ্রামের মানুষ সুস্থ হয়ে যাচ্ছে।

কোভিড টেস্ট করানোর পর, পজিটিভ আসলে যে আতঙ্কটা শহরের মানুষের মধ্যে দানা বাঁধে এটাই সম্ভবত তাদেরকে অধিকতর দুর্বল করে দেয়। মানসিকভাবে দুর্বল হয়ে তাদের মনে কেবল হাসপাতালে আইসিইউর অভাব এবং শ্বাসকষ্টে মারা যাবে এমন চিত্র ভাসতে থাকে। শারীরিক দুর্বলতার সাথে মানসিক দুর্বলতা এই দুই মিলে মানুষটা যতটা না অসুস্থ তারচেয়েও বেশি অসুস্থ হয়ে পড়ে। এই ব্যাপারটা কিন্তু গ্রামে নাই। গ্রামে মানুষজন আক্রান্তও হচ্ছে, আবার সেরেও যাচ্ছে। টেস্ট করিয়ে পজিটিভ আসার পরের আতঙ্কটা তাদের মধ্যে ভর করে না বলেই হয়তো দ্রুত সেরে উঠতে পারে।

আমার মনে হয়, গ্রামের মানুষজন সহজাতভাবে কর্মঠ হয় এবং ভেজালমুক্ত অরগানিক খাবার খায় বলে তাদের ইম্যুনিটি তুলনামূলক স্ট্রং হয়ে থাকে। এই স্ট্রং ইম্যুনিটির কাছে কোভিড কিংবা সিজনাল জ্বর অতিশয় দুর্বলভাবে ধরাশয় হয়ে বিদায় নেয়। আবার এটাও হতে পারে যে, শহরের কালো ধোঁয়া অস্বাস্থ্যকর পরিবেশ থেকে একজন আক্রান্তের মাধ্যমে বহন হয়ে আসা করোনা ভাইরাসটি গ্রামের খোলামেলা বিশুদ্ধ আলো-বাতাসে ভরা পরিবেশে এসে জলবায়ুগত কারণেও কিছুটা দুর্বল হয়ে পড়ে। যার দরুণ করোনা গ্রামের মানুষকে আক্রান্ত করেও শ্বাসকষ্ট কিংবা আইসিইউ সাপোর্টে নেওয়ার মতো এতোটা ক্ষতি করতে পারে না।

তবে গ্রামের এই জ্বরে আক্রান্ত মানুষগুলোকে কোভিড টেস্ট করালে কিন্তু অনেকেরই কোভিড পজিটিভ আসবে। করোনার এই স্ট্রেইনটি দুর্বল হয়ে আক্রান্ত করুক বা গ্রামের মানুষের স্ট্রং ইম্যুনিটির কাছে দুর্বল হয়ে পড়ুক- যেটাই হোক না কেন এটাকে হালকাভাবে নেওয়ার কোনো সুযোগ নেই। আমার ধারণা, এটা মোটেই সিজনাল জ্বর নয়। এটা কোভিডেরই একটি ভ্যারিয়েন্ট। শুনতে সিলি শোনালেও আমি এর নাম দিয়েছি, "গ্রাম ভ্যারিয়েট!" 

এবার, মূলকথায় আসা যাক। শহর কিংবা গ্রামে যেখানেই বলেন না কেন করোনা থেকে বাঁচতে, দেশে স্বাভাবিক অবস্থা ফিরিয়ে আনতে আমাদের সামনে কিন্তু ভ্যাকসিন নেওয়ার বিকল্প কোন পথ নেই। এখন ২৫ বছরের উপরে হলেই ভ্যাকসিন এর জন্য রেজিস্ট্রেশন করা যাচ্ছে, এক-দুই সপ্তাহ পর বয়স ১৮ এর উপরে হলেই ভ্যাকসিন এর জন্য রেজিষ্ট্রেশন করা যাবে। আমরা নিজে ভ্যাকসিন নেই এবং পরিবারের সবাইকে ভ্যাকসিন নেওয়ার ব্যবস্থা করে দেই।

ভ্যাকসিন নিলেই যে করোনায় আক্রান্ত হবো না এমনটা না, তবে ভ্যাকসিন নিয়ে নিলে পরে করোনায় আক্রান্ত হলেও মৃত্যু হয় না বললেই চলে। তাই ভ্যাকসিন নেওয়ার পরেও আমরা সবাই নিচের কাজগুলো করার চেষ্টা করি-

১) যথাসম্ভব সামাজিক দূরত্ব মেনে চলি এবং মাস্ক পরি;

২) নিয়মিত ব্যায়াম করার চেষ্টা করি। কার্ডিও এবং নিঃশ্বাসের ব্যায়াম;

৩) স্বাস্থ্যকর খাবার খাওয়ার চেষ্টা করি। ভিটামিন সি সমৃদ্ধ ফলমূল এবং প্রচুর পানি অধিক গুরুত্বের সাথে;

৪) আশেপাশের অস্বচ্ছল মানুষদের পাশে থাকার চেষ্টা করি। সরকারি ত্রাণ এবং নিজ উদ্যোগে সহায়তা করার চেষ্টা করি।

আগস্ট মাসটা খুব গুরুত্বপূর্ণ। খুবই গুরুত্বপূর্ণ! এই মাসটাতে সবাই সর্বোচ্চ সতর্ক থাকি। প্রতিমাসে ১ কোটি করে মোট ২১ কোটি ভ্যাকসিন আসতেছে দেশে। প্রতিটা মানুষ ভ্যাকসিন পাবে, একজনও বাদ যাবে না। দেশটা যখন আবার স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে আসবে  আশেপাশের সবাইকে যেন ফিরে পাই, একটা মানুষকেও হারাতে চাই না। প্লিজ!

ভ্যাকসিন নিন। অন্যকে ভ্যাকসিন নিতে উদ্ধুদ্ধ করুন। সতর্ক থাকুন, নিরাপদে থাকুন। 

লেখক: শিক্ষার্থী, শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়।