মেকাট্রনিক্স টেকনোলজির ১৫তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী আজ

প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী
মেকাট্রনিক্স টেকনোলজি

মেকাট্রনিক্স টেকনোলজি বাংলাদেশে সর্বপ্রথম রাজশাহী পলিটেকনিক ইন্সটিটিউটে ২০০৬ সালের পহেলা আগস্ট যাত্রা শুরু করে। এজন্য প্রতিবছর “মেকাট্রনিক্স ডে” ১লা আগস্ট পালন করে আসছে শিক্ষার্থীরা। আজ মেকাট্রনিক্স টেকনোলজির ১৫তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী।  বাংলাদেশ ৪টি পলিটেকনিকে এই টেকনোলজি চালু আছে।

পহেলা আগস্ট ২০২১ মেকাট্রনিক্স টেকনোলজির ১৫তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর শুভেচ্ছা জানিয়েছে মেকাট্রনিক্স ইঞ্জিনিয়ার্স এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ।

চলুন আজকে আমরা জানবো মেকাট্রনিক্স টেকনোলজি সম্পর্কে-

মেকাট্রনিক্স শব্দটি Mechanical এর Mecha এবং ইলেক্ট্রনিক্স এর tronic শব্দটি নিয়ে গঠিত। শুধু Mechanical এবং Electronics-ই নয় এর মধ্যে রয়েছে Computer, Automation-সহ আরও অনেক কিছু। বলা যেতে পারে, মেকাট্রনিক্স হল সেই এরিয়া যেখানে Science Fiction বাস্তব রূপ লাভ করে।

মেকাট্রনিক্স এর আবিষ্কার: পৃথিবীতে মেকাট্রনিক্স টেকনোলজির আবিষ্কার প্রথমে করে জাপান। জাপানের প্রকৌশল Tetsuro Mori ১৯৬৯ সালে মেকাট্রনিক্স সম্পর্কে ধারণা দেন। এবং ১৯৭১ সালে সকলের কাছে গ্রহণযোগ্যতা পায়। Tetsuro Mori ইয়াস্কাওয়া ইলেকট্রনিক্স কর্পোরেশনের প্রকৌশলী ছিলেন। মেকাট্রনিক্স শব্দটি জাপানের ট্রেড মার্ক হিসেবে 46-327-14 নাম্বার দিয়ে রেজিস্ট্রেশন করেছিল। পরে আস্তে আস্তে সারা বিশ্বে গ্ৰহণযোগ্যতা পায় মেকাট্রনিক্স টেকনোলজি।

হয়তো বাংলাদেশ অনেক Mechatronics এর নাম শুনে নাই। বাংলাদেশর অনেক গুরুত্বপূর্ণ জায়গায় Mechatronics Engineer দরকার কিন্তু সেখানে অন্য Engineer গন কাজ করছে। মেকাট্রনিক্স বিষয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নিউক্লিয়ার ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. মো. শফিকুল ইসলাম চমৎকার ব্যাখ্যা দিয়েছেন।

তিনি বলেন, মেকাট্রনিক্স ইঞ্জিনিয়ারিং আধুনিক প্রযুক্তির একটি ক্ষেত্র। আমি মনে করি মেকাট্রনিক্স ইঞ্জিনিয়ারিং হচ্ছে সবচেয়ে যুগোপযোগী, উৎকৃষ্ট ও সবচেয়ে স্মার্ট প্রযুক্তি। এর জ্ঞান ও ব্যবহার ছাড়া শিল্প, কলকারখানাসহ কোনো ইন্ডাস্ট্রি তৈরি সম্ভব না। এটা যদি তরুণ প্রজন্মকে হাতে কলমে শুরু করানো যায় তাহলে দেশ দ্রুত এগিয়ে যাবে।

তিনি আরও বলেন, মেকাট্রনিক্স ইঞ্জিনিয়ারিং কয়েকটি বিষয়কে একত্র করে গঠিত। এখানে মেকানিক্যাল, ইলেকট্রিক্যাল ও ইলেকট্রনিক্স এবং একটি কম্পিউটার ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের বিষয় জড়িত। এই বিষয়গুলোর একত্রে সম্মিলন ঘটলে একটি চমৎকার বিষয় তৈরি হয় যার নাম মেকাট্রনিক্স ইঞ্জিনিয়ারিং। 

আধুনিক সব পণ্য এই মেকাট্রনিক্স ইঞ্জিনিয়ারিং মাধ্যমে উৎপাদন করা সম্ভব। আমাদের দেশে এ সম্পর্কে মানুষের একেবারেই ধারণা নেই। তবে উন্নত বিশ্ব অনেক আগেই এই সম্পর্কে কাজ করছে। এখন থেকেই যদি আমরা এর চর্চা না করি, তাহলে আমরা পিছিয়ে পড়বো। উন্নত বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলার জন্য আধুনিক প্রযুক্তি সমৃদ্ধি সম্পন্ন বাংলাদেশ গড়তে মেকাট্রনিক্স ইঞ্জিনিয়ারিং গুরুত্বপূর্ণ।

বর্তমান যুগ বিজ্ঞান ও অটোমেশন এর যুগ। শিল্পবিপ্লবের যুগ। এ যুগে শিল্প উন্নয়ন ও অটোমেশন হচ্ছে অর্থনীতির মুল চালিকা শক্তি। যে দেশে শিল্পকারখানা যত বেশি সে দেশ তত বেশি উন্নত ও অর্থনৈতিকভাবে সমৃদ্ধ। বর্তমান বিশ্বের উন্নত দেশগুলির মধ্যে চীন, জাপান, আমেরিকা, ইংল্যান্ড, জার্মাানী ও ভারত প্রভৃতি দেশ শিল্প উন্নয়নের মাধ্যমে অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি অর্জন করেছে।

ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার লক্ষে সরকার কারিগরি শিক্ষাকে বিশেষ গুরুত্ব দিয়েছেন। এই জন্য মেকাট্রনিক্স টেকনোলজির ভূমিকা অনেক।

বর্তমানে বাংলাদেশের বিভিন্ন বড় বড় কোম্পানিতে মেকাট্রনিক্স ইঞ্জিনিয়ারগণ কর্মরত আছেন। এসব কোম্পানির মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল ইউনিলিভার বাংলাদেশ লিমিটেড, প্রাণ গ্রুপ, বেক্সিমকো, স্কয়ার, এনার্জিপ্যাক, সামিট পাওয়ার, নর্দান পাওয়ার ইত্যাদি।

মেকাট্রনিক্স টেকনোলজি থেকে পাশ মেধাবী ছাত্র-ছাত্রীদের জন্য ডুয়েটসহ বিভিন্ন বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়েও বিএসসি ইঞ্জিনিয়ারিং করার সুযোগ রয়েছে।

অদূর ভবিষ্যতে সকল কাজের জন্য তথা শিল্পকারখানায় যেখানেই অটোমেশন এর প্রয়োজন হবে সেখানেই মেকাট্রনিক্স প্রকৌশলীদের কর্মক্ষেত্র অবারিত থাকবে।