ঢাবি শিক্ষার্থীর চেষ্টায় জোড়দিয়া শেখপাড়া এখন প্রথম ভ্যাকসিনেটেড গ্রাম

করোনা
ঢাবি শিক্ষার্থী শেখ শাকিল হোসেন

করোনা থেকে নিজের গ্রামের মানুষদের বাঁচাতে তাদের মাঝে সচেতনতা বৃদ্ধি করে ভ্যাকসিনের আওতায় এনেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী শেখ শাকিল হোসেন। সাতক্ষীরা জেলা সদর থেকে ১০ মাইল দূরে ফিংড়ি ইউনিয়নের জোড়দিয়া শেখপাড়া গ্রামে তরুণদের নিয়ে ভ্যাকসিন নিতে আগ্রহী করতে কাজ শুরু করেন। ফলে জোড়দিয়া শেখপাড়াকে প্রথম ভ্যাকসিনেটেড গ্রাম ঘোষণা করেছেন সদর উপজেলার ফিংড়ী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. সামছুর রহমান। 

ভ্যাকসিনভীতি দূর করে বারবার সবাইকে ভ্যাকসিনের প্রয়োজনীয়তা বুঝান তিনি। সেই চেষ্টা বিফলে যায়নি। প্রথমদিকে সাড়া পেতে অনেকটা কষ্ট হলেও এখন তার গ্রামের প্রায় সবাই করোনার টিকা নিয়েছেন বা নিচ্ছেন। গ্রামের প্রায় তিন শতাধিক মানুষকে রেজিস্ট্রেশন করিয়ে ও নানাভাবে সহযোগিতা করে ভ্যাকসিনের আওতায় আনেন তিনি। 

নিজ এলাকার তরুণদের সঙ্গে নিয়ে কাজ করছেন তিনি। গ্রামের তরুণ শিক্ষার্থী আরাফাত হোসেন, মিয়ারাজ হোসেন, হাসানুর রহমান, মোহায়মিনুল ইমন, সাকিবুর রহমান, মাহবুবুল হক, আজগার আলী, তৌফিকুজ্জামান ও রোহেল উদ্দীনসহ অন্যান্যরাও এগিয়ে আসেন তার এই উদ্যোগে। গ্রাম উন্নয়ন কমিটির সভাপতি, ইউপি চেয়ারম্যানসহ এলাকার অনেকেই পাশে দাঁড়ায়েছেন তার এই মহতী উদ্যোগের। 

গ্রামের মানুষদের টিকায় আওতায় আনার বিষয়ে শাকিল বলেন, করোনার এই ঊর্ধ্বগতির সময় আমার গ্রামের অনেকেরই বিভিন্ন লক্ষণ দেখা দেয়। টেস্ট যারা করিয়েছে অধিকাংশেরই করোনা পজিটিভ আসে। কিন্তু এরপরও মানুষ টিকা নিতে আগ্রহী নয়। তাই আমরা শুরুতে মানুষকে ভ্যাকসিন নিতে আগ্রহী করার চেষ্টা করেছি। বারবার বোঝানোর চেষ্টা করেছি কেনো তাদের ভ্যাকসিন নেয়া উচিত। অনেকের ভ্যাকসিনভীতিও ছিল যেমন ভ্যাকসিন নিলে জ্বর হবে, আরো অসুস্থ হয়ে যাবো, টিকা নিবো না ইত্যাদি। তরুণদের সঙ্গে নিয়ে রাস্তাঘাট, বাড়ি-বাড়ি- যেখানে পেয়েছে সেখানেই গ্রামের মানুষদের বুঝিয়েছি। নিজের পরিবারকে টিকা দিয়ে শুরু করেছি। কিন্তু এরপরও শুরুর দিকে মানুষ আমাদের কথা শুনছিল না অনেকেই। তাই পরে আমরা এলাকার ধর্মীয় প্রতিনিধিদের সহযোগিতা নিয়েছি। তাদের দিয়ে মানুষকে সচেতন করেছি।

তিনি আরো বলেন, মসজিদের ইমামের শরণাপন্ন হলে তিনি নামাজের পর মানুষদের টিকা নিতে উৎসাহিত করেছেন। গ্রামের মানুষ সাধারণত ঈমাম ও ধর্মীয় প্রতিনিধিদের কথা শোনেন। তখনই বেশ সাড়া পেয়েছি। গত ৭ জুলাই থেকে তিন সপ্তাহে পুরো গ্রামের সবাই প্রায় ভ্যাকসিনের আওতায় চলে এসেছে। অধিকাংশই ভ্যাকসিনের প্রথম ডোজের আওতায় এসেছেন। বাকিরা এসএমএসের অপেক্ষায় আছেন। গ্রামবাসীরা সাতক্ষীরা সদর হাসপাতাল ও মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল থেকে টিকা নিয়েছেন। 

গ্রামবাসীরা সাতক্ষীরা সদর হাসপাতাল ও মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল থেকে টিকা নিয়েছেন। তরুণদের সাহায্যে ভ্যাকসিন নেয়া ওই গ্রামের খোদেজা খাতুন ডেইলি বাংলাদেশকে বলেন, ভ্যাকসিন নিলে করোনার রোগ সহজে হয় না, এটা জানতাম না। গ্রামের ছেলেরা বাড়িতে এস মোবাইল আর আইডি কার্ড নিয়ে ভ্যাকসিনের বিষয়ে সব করে দিছে। ঈদের পর সদর হাসপাতাল থেকে ১ম ডোজ টিকা নিয়েছি। 

ফিংড়ি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. সামছুর রহমান বলেন, গ্রামের মানুষ প্রথমদিকে টিকা নিতে অনাগ্রহী ছিল আবার ভয়ও পেতো। করোনায় আক্রান্ত হলেও স্বীকার করেনি বা নিজেকে ঘরবন্দী করে না রেখে বাইরে থাকতো। তবে জোড়দিয়া শেখপাড়ার তরুণদের উদ্যোগে পরিস্থিতি বদলে গেছে। তরুণদের প্রচেষ্টায় ওই গ্রামের অধিকাংশ মানুষই এরইমধ্যে ভ্যাকসিনের আওতায় চলে এসেছেন। আবার অনেকেই নেয়ার অপেক্ষায় আছেন। তরুণদেরকে ধন্যবাদ জানাই তাদের প্রচেষ্টার জন্য এবং এই গ্রামকে আমরা প্রথম ভ্যাকসিনেটেড গ্রাম হিসেবে স্বীকৃতি দিলাম।