কামরুন নাহার আর ৮-১০টা অধ্যক্ষ-ভিসিদের পার্থক্য কোথায়?

মতামত
লেখক

ভিকারুননিসা নূন স্কুল ও কলেজের অধ্যক্ষ কামরুন নাহার মুকুল আর অন্য আট দশটা স্কুলের অধ্যক্ষ, প্রধানশিক্ষক কিংবা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসিদের পার্থক্য কোথায়? প্রতিনিয়ত তাদের অনেকেই এইরকম আলাপ ফোন বা সরাসরি করছে। পার্থক্য হলো কামরুন নাহার মুকুলের ফোনালাপটা ফাঁস হয়েছে অন্যদেরটা এখনো ফাঁস হয়নি। ঘটনা কিন্তু ঠিকই ঘটছে।

আমি নিশ্চিত আমাদের অধিকাংশ স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধানরা যারা সরকার দ্বারা নিয়োগ প্রাপ্ত হয় তারা এমনই। সিস্টেমই এমন যে তারা এমন হতে বাধ্য। আমার এক ঘনিষ্ট বন্ধু এবং এক কালের সহকর্মী জানিয়েছে যে কামরুন নাহার মুকুল খুবই ঠান্ডা এবং ধীরস্থির। সে তাকে বিশ্ববিদ্যালয় জীবন থেকে চিনে। তারপর একটা লম্বা ছেদ পরেছে। আমার সেই বন্ধু প্রায় ২৫ বছরেরও বেশি সময় ধরে আমেরিকায় থাকে। এই ২৫ বছরেরও বেশি সময়ে বাংলাদেশ আর সেই বাংলাদেশ নাই। এই ২৫ বছরেরও বেশি সময়ে বুড়িগঙ্গা একটি নদী থেকে নর্দমায় পরিনত হয়েছে।

বর্তমান বাংলাদেশের সরকার নিয়ন্ত্রিত স্কুল কলেজ বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান হতে হলে কি করতে হয় তা আমরা জানি। এই প্রসেসের মধ্যে দিয়ে যেকোন ভালো মানুষ গেলেও বের হয়ে আসবে একটা দুরুন্ধর মানুষ হিসাবে। নৈতিকতা, আত্মসম্মানবোধ ইত্যাদির কোন কিছুরই আর অবশিষ্ট থাকবে না। এই সিস্টেমটা আমাদের সরকারেরা গত ৩০-৪০ বছর ধরে অত্যন্ত সুচারুভাবে বানাতে বানাতে আজকের এই পর্যায়ে নিয়ে এসেছে। এর জন্য জনগণও দায়ী। সাধারণ মানুষ এই পর্যায়ে আসতে দিয়েছে। নতুন প্রজন্ম তৈরির কারখানাকেই নষ্ট করে ফেলা হয়েছে।

যে কয়টা স্কুল কলেজ একটু ভালো করছে সেগুলো মিশনারি স্কুল বা কলেজ অথবা প্রাইভেট স্কুল কলেজ। এইভাবে আর যদি ১০টি বছর নিরবিচ্ছিন্নভাবে চলে তাহলে সেই আগামী ১০ বছর পরের বাংলাদেশের ছবি কল্পনা করতে গেলে আমার এখনই জ্বর এসে যায়।

শিক্ষা ব্যবস্থার এই খারাপ পরিবতির জন্য অনেকেই শিক্ষকদের দায়ী করেন। হ্যা, চোখের সামনে এটাই দেখা যায়। তবে একটু তলিয়ে ভেবে ভিতরের চোখ দিয়ে দেখলে আসল সত্যটা জানবেন এবং বুঝবেন। শিক্ষকরা এখানে কেবল দাবার ঘুটি হিসাবে কাজ করছে। খেলছে প্রশাসন আর সরকার। তবে মূলত সরকার। সরকার ঠিক হয়ে গেলে সব ঠিক হয়ে যাবে। যতদিন সরকার তার দলের নেতাদের দিয়ে স্কুল কলেজ বিশ্ববিদ্যালয়ে রাজনীতি ইঞ্জেক্ট করবে, ক্ষমতা ক্ষমতা খেলবে ততদিন এই শিক্ষা ব্যবস্থা খারাপ থেকে আরো খারাপ হতেই থাকবে।

লেখক: অধ্যাপক, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়