অনলাইনে সেমিস্টার ফাইনাল নিয়ে ববি শিক্ষার্থীদের ভাবনা

করোনা
ববি শিক্ষার্থীদের মতামত

মহামারি করোনাভাইরাস সংক্রমণ প্রতিরোধে দীর্ঘ ১ বছর ৬ মাস দেশের অন্যান্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের মতো বন্ধ রয়েছে বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয় (ববি)। তবে শিক্ষার্থীদের দীর্ঘ সেশনজট নিরসনে প্রায় ১ বছর ধরে অনলাইন শিক্ষা কার্যক্রম চালু রয়েছে। সম্প্রতি বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন অনলাইনে মিডটার্ম পরীক্ষাগুলো সফলভাবে সম্পন্ন করায় শিক্ষার্থীদের মধ্যে অনলাইনে সেমিস্টার ফাইনালও নিয়ে নেয়ার পক্ষে জনমত গড়ে উঠেছে। তবে এর বিপক্ষেও রয়েছেন কেউ কেউ।

ইংরেজি বিভাগের স্নাতক চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী মেহেদী হাসান রিতাজ বলেন, 'এই করোনাকালীন সময়ে অনলাইনে পরীক্ষা একটা যুগান্তকারী সিদ্ধান্ত। গত ১৪ জুলাই আমরা ইংরেজি বিভাগের পঞ্চম ব্যাচ ৪র্থ বর্ষ, ২য় সেমিস্টারে মিডটার্ম পরীক্ষা সম্পন্ন করি। যেখানে শতভাগ শিক্ষার্থীর উপস্থিতি ছিল। আমরা চাই বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন খুব তাড়াতাড়ি আমাদের সেমিস্টার ফাইনাল পরীক্ষাগুলো নিয়ে নিবে। কিছু বিশ্ববিদ্যালয় ইতোমধ্যে তাদের সেমিস্টার ফাইনাল পরীক্ষা নিচ্ছে। আমরা চাই বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ও আমাদের অনলাইনে সেমিস্টার ফাইনাল পরীক্ষা নিয়ে শিক্ষার্থীদের বড় ধরনের সেশনজটের হাত থেকে বাঁচাবে।'

লোক প্রশাসন বিভাগের শিক্ষার্থী আনামুল হক বলেন, 'মহামারি করোনাকে পাত্তা না দিয়ে সময় তার নিজ গতিতে বয়ে চলছে। দীর্ঘ ১ বছর ৬ মাস স্বশরীরে সকল শিক্ষা কার্যক্রম বন্ধ। থমকে আছে শিক্ষা কার্যক্রম সেই সাথে থমকে গেছে হাজারো স্বপ্ন নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় আসা শিক্ষার্থীদের স্বপ্ন। অভিভাবক মেয়েদের বিয়ে দিচ্ছে অন্যদিকে ছেলেদের নিয়ে বাবা-মায়ের হতাশার শেষ নেই। কিছু কিছু শিক্ষার্থী হতাশায় প্রতিটা দিন পার করছে। আমাদের অভিভাবক শিক্ষকরা এ বিষয়টা নিশ্চয়ই অবগত আছে। তারাও হয়ত আমাদের নিয়ে বিভিন্ন পরিকল্পনা করছে। আমি একজন শিক্ষার্থী হিসেবে বলতে চাই- প্রয়োজনে মানুষকে সবকিছুই করতে বাধ্য করে। যদি লঞ্চ ডুবে যায় তখন যে সাতার জানে না, সেও সাতরাতে চেষ্টা করে। ঠিক তেমনি এখন সময় এসেছে আমাদের মানিয়ে নেয়ার। জানি আমাদের অনেক সীমাবদ্ধতা আছে। তারপরও সীমাবদ্ধতা বিবেচনায় নিয়ে অনলাইনে পরিক্ষা কার্যক্রম চালিয়ে নেওয়ার জন্য একটা সুপরিকল্পিত কার্যপ্রণালী নিয়ে আগাতে হবে। মার্টিন লুথার কিং জুনিয়র (আফ্রিকান আমেরিকান নেতা) বলেছেন- 'যদি উড়তে না পার, তবে দৌড়াও; যদি দৌড়াতে না পার, তবে হাঁটো; হাঁটতে না পারলে হামাগুড়ি দাও। যে অবস্থাতেই থাকো, সামনে চলা বন্ধ করবে না' এখন সময় এসেছে আইটিকে কাজে লাগিয়ে, আইটির সাথে জীবনকে মানিয়ে নেওয়ার। তাই মনে করি অনলাইনে সকল ধরনের শিক্ষা কার্যক্রমের পরিচালনা করার বিকল্প নেই।'

গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষার্থী মোঃ ইমরান বলেন, 'এই ক্রান্তিকালে ববি প্রশাসনের অনলাইনে সেমিস্টার ফাইনাল নেওয়ার সিদ্ধান্তকে সাধুবাদ জানাচ্ছি। শিক্ষা হচ্ছে জাতির মেরুদণ্ড। শিক্ষা ব্যতীত কোনো জাতির উন্নতি সম্ভব নয়। করোনা মহামারীর প্রভাবে দীর্ঘ ১৫ মাস যাবৎ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে দেশের শিক্ষাখাত। সেশনজট, অনিশ্চিত ভবিষ্যৎ আর অর্থনৈতি টানাপড়েনে সাধারণ শিক্ষার্থীরা আজ মানসিকভাবে হতাশাগ্রস্ত। মানসিক হতাশার অসহ্য যন্ত্রণা থেকে মুক্তি পেতে অনেকেই শামিল হচ্ছেন আত্মহত্যার মিছিলে। যেহেতু করোনার প্রাদুর্ভাব অনুকূলে আসার অনিশ্চয়তা কাঁটছেই না, তাই শিক্ষার ক্ষতি পুষিয়ে নিতে অনলাইন পরীক্ষার বিকল্প নেই।'

কোস্টাল স্টাডিজ অ্যান্ড ডিজাস্টার্স ম্যানেজমেন্ট বিভাগের শিক্ষার্থী হুমায়ন মাহমুদ ইলিয়াস অনলাইন পরীক্ষার বিপক্ষে মত দিয়ে বলেন, দীর্ঘ ১৬ মাস যাবত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ। একজন বিশ্ববিবিদ্যালয় পড়ুয়া শিক্ষার্থীর জন্য কত বড় বোঝা তা বলার অপেক্ষা রাখে না। থমকে রয়েছে এ দেশের শিক্ষার্থীদের জীবন। হচ্ছে নামমাত্র অনলাইন ক্লাস। অনলাইন ক্লাসের কার্যক্রম শুরু হয়েছে তাও প্রায় একবছর। অনলাইন ক্লাসে রয়েছে নানান প্রতিবন্ধকতা এদের মধ্যে অন্যতম ইন্টারনেট সমস্যা। ব্যক্তিগতভাবে অনলাইন পরীক্ষার পক্ষে আমি না! আমার ২ বর্ষের ইয়ার ফাইনালের ৩ টা এক্সাম বাকি। অনলাইন ক্লাস শুরু হয়েছে প্রায় এক বছর সেই এক বছরে তৃতীয় বর্ষের মাত্র ৪ টা কোর্স শেষ হয়েছে, যেখানে আমাদের কোর্স সংখ্যা ১১টা। আমার মতে অনলাইন শিক্ষা কার্যক্রম বাদ দিয়ে যতদ্রুত সম্ভব শিক্ষার্থীদের জন্য টিকার ব্যবস্থা করে বিশ্ববিদ্যালয় খুলে দেওয়া উচিত। আমাদের মতো উন্নয়নশীল দেশের শিক্ষা কার্যক্রম অনলাইনে পরিচালনা করা ফলপ্রসূ হবে না।'