ভাঙ্গা সড়কের বেহাল দশা, দুর্ভোগে জাবি শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা

দুর্ভোগ
ভাঙ্গা সড়কের বেহাল দশা, দুর্ভোগে জাবি শিক্ষার্থীরা

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাবি) অভ্যন্তরীণ বিভিন্ন সড়কের বেহাল অবস্থার কারণে দুর্ভোগে পড়তে হচ্ছে শিক্ষক-শিক্ষার্থী ও কর্মচারীদের। এই দুর্ভোগে নতুন মাত্রা যোগ করেছে মৌসুমি ঝড়-বৃষ্টি। শিক্ষার্থী ও কর্মচারীদের অভিযোগ অধিকতর উন্নয়ন প্রকল্পের কাজের জন্য চলাচল করা গাড়িগুলোর কারণেই এই অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে।

সরেজমিনে দেখা যায়, বিশ্ববিদ্যালয়ের মেইন গেইট থেকে শুরু করে শহীদ রফিক জব্বার হলের সামনে পর্যন্ত প্রায় পাঁচটি জায়গায় খানা খন্দে ভরে গেছে। এগুলো হলো মেইন গেইটের সামনে, শহীদ মিনার সংলগ্ন মোড়ের কাছে, কলা ভবনের সামনের রাস্তায়, আ.ফ.ম. কামাল উদ্দিন হলের সামনে এবং বটতলা থেকে শুরু মওলানা ভাসানী হলের সামনে পর্যন্ত। মৌসুমি বৃষ্টিতে সৃষ্ট জলাবদ্ধতায় চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়ে এই সড়কগুলি। তবে এসব ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট প্রশাসনের উদাসীনতার অভিযোগ রয়েছে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক শিক্ষার্থী বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের মেইন গেটের সামনের বেহাল অবস্থা দেখলেই ভেতরের রাস্তাগুলির কি অবস্থা তা সহজেই আঁচ করা যায়। একটু বৃষ্টি হলেই এগুলোতে হাঁটা-চলা করা যায় না। দাপ্তরিক বিভিন্ন কার্যক্রমে আমাদের এসব রাস্তা ব্যবহার করতে হয়। অথচ এ ব্যাপারে প্রশাসনের কোনো মাথাব্যথা নেই।

বিশ্ববিদ্যালয় সংলগ্ন গেরুয়া এলাকায় অনেক কর্মচারী থাকেন। তাদেরকে অনেক বেশী ভোগান্তির শিকার হতে হয়। রাতের বেলা রাস্তার এই দূরবস্থার কারণে মানুষের চলাচল কম থাকে। এতে ছিনতাইয়ের মতো ঘটনার আশংকা বাড়ে বলে তারা জানান।

অভ্যন্তরীণ সড়কের বেহাল দশা

এ প্রসঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মচারী ইউনিয়নের সভাপতি শরীফ মিয়া বলেন, আমরা প্রায় এক মাস আগে রেজিস্ট্রার মহোদয়ের সঙ্গে কথা বলেছি। হলের ঢালাইয়ের কাজ শেষ হলে রাস্তার কাজ হবে বলে রেজিস্ট্রার মহোদয় জানিয়েছেন। আমি আশা করি শিগগিরি রাস্তাগুলোর সংস্কার কাজ সম্পন্ন হবে।

এ নিয়ে জানতে বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার (ভারপ্রাপ্ত ) রহিমা কানিজকে মুঠোফোনে কল করা হলে তিনি কল রিসিভ করেননি।

সড়কের বেহাল দশা নিয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করে এর দ্রুত সংস্কার দাবি করেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ে ক্রিয়াশীল ছাত্র সংগঠনের ছাত্র নেতারা।

অভ্যন্তরীণ সড়কের বেহাল দশা-২

ছাত্র ইউনিয়ন জাবি সংসদের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক রাকিবুল রনি বলেন, একে তো উন্নয়ন কাজ তদারকির ঘাটতি, প্রচলিত নানান আইনের ব্যত্যয় ঘটিয়ে চলমান। তার উপর আবার ক্যাম্পাসে ঢুকলেই চোখে পড়ে তথাকথিত উন্নয়নের ক্ষত। প্রশাসনের উচিৎ রাস্তাঘাট দ্রুত ঠিক করার উদ্যোগ নেওয়া।

জাবি শাখা ছাত্রলীগের উপ-দপ্তর সম্পাদক এম মাইনুল হোসেন রাজন বলেন, “জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিকতর উন্নয়ন প্রকল্পের কাজ ইতোমধ্যে দৃশ্যমান হয়েছে, কিন্তু একটা নির্দিষ্ট রাস্তার ( বটতলা হতে গেরুয়া) মেরামতের কোন দৃশ্যমান অগ্রগতি এখনো চোখে পড়েনি। ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের উচিত বিশ্ববিদ্যালয়ের উন্নয়ন প্রকল্পের কাজ যথাসময়ে শেষ করা পাশাপাশি অতিদ্রুত রাস্তাগুলোর মেরামত কাজ শুরু করা। আশা করি বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক কার্যক্রম শুরু করার পূর্বে বিশ্ববিদ্যালয়ের রাস্তাগুলো শতভাগ ব্যবহার উপযোগী নিশ্চিত করতে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহন করবে।"

বিশ্ববিদ্যারয় শাখা সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্টের আহ্বায়ক শোভন রহমান বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের কাজ তড়িঘড়ি করে করার কারণেই রাস্তার এই অবস্থা হয়েছে। অভিযোগ করেন উন্নয়ন কাজ তদারকি কমিটির দায়িত্বে যারা আছেন তাদেরকে জোর করে রাখা হয়েছে।

তিনি আরো বলেন, কাজ করতে গেলে কি কি সমস্যা হচ্ছে এগুলো দেখার দায়িত্ব ছিল তদারকি কমিটির ।এরকম তড়িঘড়ি করে দায়িত্বজ্ঞানহীন জবাবদিহিতাহীন ভাবে কাজ করার কারণে ইতিপূর্বেও অনেক ভোগান্তি হয়েছে, একজন শ্রমিকের জীবন গেছে, এখন ক্যাম্পাসে যারা আবাসিক তাদের ভোগান্তি হচ্ছে, এবং ভবিষ্যতেও বড় ধরণের দুর্ঘটনা ঘটার আশঙ্কাও রয়েছে।

জাবির প্রধান ফটক

প্রকৌশল অফিসের ভারপ্রাপ্ত প্রধান প্রকৌশলী সালাম মো. শরীফকে এ ব্যাপারে জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি বলেন, এটা সংস্কার করা আমাদের দায়িত্ব না। অধিকতর উন্নয়ন প্রকল্পের কাজের জন্য যেসব রাস্তা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে সেসব ওই প্রকল্পের লোকজন সংস্কার করবে। এটা তাদের দায়িত্ব।

অধিকতর উন্নয়ন প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালক প্রকৌশলী নাসির উদ্দিন করোনাক্রান্ত হওয়ায় প্রকৌশল অফিসের প্রকৌশলী (সিভিল) আহসান হাবীব উক্ত দায়িত্বে রয়েছেন।

রাস্তা সংস্কার নিয়ে তিনি বলেন, রাস্তা আগেও যখন খারাপ হয়েছিল তখনও ঠিক করা হয়েছে। এখন খারাপ হয়েছে এখনও ঠিক করা হবে। প্রকল্পের কাজ চলমান থাকায় এখন সংস্কার করলে কিউরিং টাইম পাওয়া যাবে না। তাই ঈদের ছুটিতে প্রকল্পের কাজ বন্ধ থাকবে। এর মধ্যেই সংস্কার কাজ সম্পন্ন করা হবে।