প্রার্থনা করছি, ডেসটিনির মতো ইভ্যালি যেন ডুবে না যায়

মাহবুব কবির মিলন
মাহবুব কবির মিলন

ইভ্যালি প্রসঙ্গে পরে আসছি। আমরা কেউই চাই না, আমাদের দেশের কোনো কোম্পানি ক্ষতিগ্রস্ত হোক। জিডিপিতে তার অবদান ছোট হয়ে যাক। তার প্রতি জনগণের আস্থা কমে যাক। যদিও এটা স্বীকার করে নিতেই হবে যে, আমরা এক আস্থাহীন সময় পার করছি।

খাদ্য শিল্পের কথাই যদি ধরি, কোম্পানি যতই ভাল হোক বা প্রোডাক্ট যতই ভাল কিংবা অন্তত ক্ষতিকর না হলেও আমাদের কাছে তা ভয়াবহ এক আতংকের নাম। যদিও জনগণকে তার জন্য দোষ দেয়া যায় না।

কিন্তু সত্য না হলেও শুধু ভুল বা ভ্রান্ত ধারণার বশবর্তী হয়ে পণ্য থেকে মুখ ফিরিয়ে নিলে দিন শেষে ক্ষতি হবে জাতির। দেশের একটি খাদ্য প্রস্তুতকারক কোম্পানি স্ট্রবেরী, অরেঞ্জ জ্যাম বানাচ্ছে। নিশ্চিত বলতে পারি দামে ও মানে বিদেশি যে কোনো দেশের জ্যামের চেয়ে অনেক ভাল। দুইশত টাকায় ৪৫০ গ্রাম বোতল ভরা স্ট্রবেরী পাল্প। নিঃসন্দেহে অত্যন্ত ভাল মানের।

একটা কোম্পানি মেয়োনিজ (Mayonnaise) বানাচ্ছে। খেয়ে বললে বাধ্য হবেন, তা বিদেশে ব্রান্ডের চেয়ে দামে মানে অনেক ভাল। ৮০-৯০% কনসেন্ট্রেটেড সুইটেন্ড জুস বানাচ্ছে একটি দেশিয় প্রতিষ্ঠান। বিদেশি আমদানি করা উচ্চমূল্যের অরেঞ্জ জুসের চেয়ে দুইশত টাকা লিটারের আমাদের জুস কোনো অংশেই খারাপ বা নিন্মমানের নয়।

কিন্তু আফসোসের বিষয়, আমরা নিশ্চিত ধরে নিয়েছি, জুস বা ড্রিংস মানেই মিস্টি কুমড়া আছে তার মধ্যে। এ ধরনের ভ্রান্ত ধারণা আমাদের শিল্পায়নকে মারাত্মকভাবে ব্যহত করবে।

আমরা কজনে জানি এমন উন্নতমানের প্রোডাক্ট দেশে তৈরি হচ্ছে। কজনে বিশ্বাস করবেন তা! স্যাকারিন, এসেন্স, কালার আর জিলাটিনের যুগ থেকে বের হয়ে আসছি আমরা ধীরে ধীরে। নানান সমস্যার মাঝেও কিন্তু সুস্পষ্ট আলোর রেখা দৃশ্যমান।

আমি আমদানি করা জুস, জ্যাম এবং মেয়োনিজ কেনা একেবারেই ছেড়ে দিয়েছি। অন্যসব প্রতিষ্ঠানের মত ইভ্যালি ডুবে যাক সব বিনিয়োগকারী নিয়ে, তা আমরা কখনোই চাইব না। প্রতিষ্ঠান দাঁড়াক, অ্যামপ্লয়মেন্ট সুযোগ সৃষ্টি হোক, বিনিয়োগ বাড়ুক, কম দামে ভাল পণ্যের সুবিধা পাক জনগণ।

কিন্তু তারা যেভাবে আগ্রাসী বিনিয়োগ টানছে, তাতে বিপদ না হলেই হলো। আজ বাংলাদেশ ব্যাংক তাদের উপর করা এক প্রতিবেদনে বলেছে, গ্রাহক ও মার্চেন্টদের কাছে ইভ্যালীর দেনার পরিমাণ ৪০৩.৮০ কোটি টাকা যেখানে কোম্পানিটির চলতি সম্পদ মাত্র ৬৫.১৭ কোটি টাকা। এই বিশাল গ্যাপ কিভাবে দূর করবে ইভ্যালি, তা দেখার বিষয়। কাঁঠালের আঠার মত যদি তা জড়িয়ে যেতেই থাকে, তবে আসলেই এক মহাবিপদ।

নির্দিষ্ট ডেলিভারি সময়ের বাইরে গ্রাহকের বিনিয়োগ করা টাকা যে মাসের পর মাস পড়ে থাকে, তা যদি হয় ইভ্যালির একটি আয়ের সোর্স, তবে তা কতটুকু এ্যাথিক্যাল, সে বিষয়ে প্রশ্নের অবকাশ থেকেই যায়।

সেলেব্রিটিতে ভরপুর ইভ্যালি কখনোই ডুবে না যাক সে প্রার্থনা করছি এবং তাদেরসহ এরকম লগ্নিকারী সব প্রতিষ্ঠানকে নজরদারিতে রাখার দায়িত্ব সরকারের সংশ্লিষ্ট দপ্তরগুলোকে নেয়ার অনুরোধ করছি। আমরা পেছনে ফিরে যেতে চাই না। আগে থেকেই সাবধানতা অবলম্বন করা প্রয়োজন, যাতে ডেসটিনির ভাগ্যবরণ করতে না হয় কাউকে। আমাদের দেশের প্রতিটি প্রতিষ্ঠান আকাশের তারা হয়ে জ্বলুক, সেই কামনাই করছি। [ফেসবুক থেকে সংগৃহীত]