ছাত্রলীগের কর্মকাণ্ড নিয়ে আক্ষেপ সাবেক নেতার

ছাত্রলীগের কর্মকাণ্ড নিয়ে আক্ষেপ সাবেক নেতার
লোগো

বাংলাদেশ ছাত্রলীগের বর্তমান কর্মকাণ্ডের সমালোচনা করে সংগঠনটির সভাপতি আল নাহিয়ান খান জয় ও সাধারণ সম্পাদক লেখক ভট্টাচার্যকে চিঠি লিখেছেন নাজিরপুর উপজেলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক মো. মোশারেফ হোসেন খান। চিঠিতে মোশারেফ নিজেকে সংগঠনটির সাবেক একনিষ্ঠ কর্মী বলে দাবি করেছেন।

বর্তমান সভাপতি আল নাহিয়ান খান জয় ও সাধারণ সম্পাদক লেখক ভট্টাচার্যকে উদ্দেশ্য করে লেখা এ সংক্রান্ত চিঠিটি ইতিমধ্যে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়েছে। চিঠিটি অনেকে শেয়ার করে বর্তমান কমিটির নেতৃবৃন্দের দৃষ্টি আকর্ষণ করছেন। মো. মোশারেফ হোসেন খানের লেখা চিঠিটি দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসের পাঠকদের জন্য তুলে ধরা হলো-

প্রিয় জয়-লেখক,
সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক
বাংলাদেশ ছাত্রলীগ

আমাদের অস্তিত্ব সংগ্রামে মিশে থাকা সংগঠন, আদর্শিক অঙ্গীকারে জীবন বাজি রাখা সংগঠনের দায়িত্ব তোমাদের হাতেই অর্পিত। সেই ১৯৬২ সালের শিক্ষা আন্দোলনের সময় স্কুলে প্রথম শুনি ছাত্রলীগের নাম।১৯৬৯ সালে সারাদেশে আন্দোলন হয় ‘জেলের তালা ভাঙবো,শেখ মুজিবকে আনব’।

ছোটবড় সব ছেলেরা আন্দোলন করে, আমিও যোগ দিলাম ছাত্রলীগের মিছিলে। তখন এত কাগজ কলম ছিল না, এত পোস্ট পজিশন ছিল না, বুক ভরা সাহস ছিল আর ছিল মুজিবের প্রতি ভালোবাসা। কলেজ শেষ করে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়ে মনির ভাই (মনিরুল হক চৌধুরি) ও প্রধান ভাইয়ের (শফিউল আলম প্রধান) নেতৃত্ব আমরা ছাত্রলীগে যোগ দেই ও নানা গঠনমূলক কাজে অংশগ্রহন করি।

১৯৭৫ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে এস.এম হল শাখা ছাত্রলীগের সদস্য থাকা অবস্থায় ১৫ আগস্ট আমরা মিছিল নিয়ে ধানমন্ডি যাওয়ার পথে পুলিশ আটকে দেয়,ধানমন্ডি ২-এ। এরপরে পড়াশোনা শেষ করে আব্বার ইচ্ছায় গ্রামে ফিরে এসেছিলাম বঙ্গবন্ধুর আদর্শের প্রতি নতুন করে অবিচল হতে।

অনেক চড়াই উৎরাই পেরিয়ে ২০০৫ সালে নাজিরপুর উপজেলা আওয়ামিলীগের যুগ্ম আহ্বায়ক হওয়ার পরে আরো সাংগঠনিক ভাবে ছাত্রলীগকে একত্রিত করেছি। বিএনপি জামাতের দুঃসময়ে মামলার আসামি হলে দিনের পর দিন কোর্টের বারান্দায় দাড়িয়ে থেকে ওদের জামিনের ব্যবস্থা করিয়েছি।

রক্তে মেশা অনুভূতি থেকে আমি আমার দুই মেয়েকে ছাত্রলীগে পাঠিয়েছিলাম আদর্শ আর নীতিতে অটল থেকে আপোষহীন বেড়ে ওঠার সংগ্রাম শিখবে বলে। মৌলী ঢাকা মহানগরে পোস্ট পাওয়ার পর শুনেছিলাম এখন নাকি সবাই রাজনীতিতে আসে টাকার জন্য, তখনই ওকে বলেছিলাম জায়গা বিক্রি করে তোমাকে টাকা আমি পাঠাবো কিন্তু রাজনীতির জন্য কারো কাছে হাত পাতবে না।

শুনেছি ও অনেক ভালো কর্মী ছিল, শুনতাম ওর কেন্দ্রীয় কমিটিতে একটা পোস্ট পাওয়ার তীব্র আকাংঙ্খার কথা। আমরা সাবেক হয়েছি অনেক আগে, বয়সের পরিক্রমায় ছাত্রলীগ থেকে এখন আওয়ামীলীগে যুক্ত হয়েছি কিন্তু আমাদের সেই স্বপ্নের যে বীজ আমরা বুনেছিলাম তা এখন পরিপক্কতায় রূপ নেওয়ার কথা ছিলো।

স্বপ্নভংগের মতো দুঃখ ভারাক্রান্ত মনে আজ আমার সেই ছাত্রলীগকে দেখি ভিন্নচিত্রে। এরা এখন ক্ষমতার রাজনীতিতে নীতির সাথে আপোষ করে। দলের ভিতর উপদল গড়ে তোলে।

কথাটার প্রমান পেলাম নাজিরপুরের ছাত্রলীগের কমিটি ভাঙার পরই। এই ছোট ছোট ছেলেমেয়েগুলো মিছিল মিটিংয়ের নামে নেতার বাসায় হাজিরা দেয়। এক নেতার কাছে আরেক নেতার সমালোচনা করে সুযোগের পিছনে ছুটে বেড়ায়। এদের দেখে ভাবি, আমরাও তো বঙ্গবন্ধুর ছাত্রলীগই করতাম। এটাই কি সেই ছাত্রলীগ?

যারা আমার সন্তান সমতূল্য হয়ে আমাদের হেয় প্রতিপন্ন করতে দ্বিধাবোধ করে না, ইউনিয়ন নির্বাচনে প্রকাশ্য দিবালোকে নৌকার বিরোধিতা করে-আপার সিদ্ধান্তকে প্রশ্নবিদ্ধ করতে চায় তখন লজ্জায়, ঘৃণায় আমরা কুঁকড়ে যাই। আমরা ভুলে যেতে চাই আমরা সেই দুঃসময়ের ছাত্রলীগের সাবেক কর্মী ছিলাম।

‘আমার রেখে আসা ছাত্রলীগ তো এমন ছিলো না। তোমাদের হাতে আদৌ ভালো আছে তো আমাদের সেই বঙ্গবন্ধুর ছাত্রলীগ’।

ধন্যবাদান্তে
মো. মোশারেফ হোসেন খান
সাবেককর্মী বাংলাদেশ ছাত্রলীগ এবং সাধারণ সম্পাদক, নাজিরপুর উপজেলা আওয়ামীলীগ।