এসএসসি-এইচএসসি পরীক্ষার সম্ভাবনা কমে আসছে

শিক্ষার্থী
শিক্ষার্থী

করোনাভাইরাসের কারণে গত বছরের ১৭ মার্চ থেকে বন্ধ রয়েছে সব ধরনের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। সবশেষ আগামী ৩০ জুন বাড়ানো হয়েছে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের চলমান ছুটি। করোনার কারণে গতবছরের এইচএসসি পরীক্ষা বাতিল হয়েছে। নির্দিষ্ট সময়ে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলতে না পারায় এবছরের এসএসসি-এইচএসসি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হওয়ার সম্ভাবনা ক্রমেই কমে আসছে। যদিও সংশ্লিষ্টরা বলছেন বিকল্প পদ্ধতিতে মূল্যায়নের মাধ্যমে হলেও এবারের এসএসসি-এইচএসসি পরীক্ষা নেওয়া হবে।

সূত্র জানায়, গত ফেব্রুয়ারি মাসে ২০২১ সালের এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষার জন্য সংক্ষিপ্ত সিলেবাস প্রকাশ করে শিক্ষাবোর্ড। এতে এসএসসি পরীক্ষার্থীদের জন্য ৬০ দিন এবং এইচএসসি পরীক্ষার্থীরা ৮৪ দিনের সংক্ষিপ্ত সিলেবাস দেওয়া হয়। এ সিলেবাস নিয়ে পরিকল্পনা ছিল স্কুল খোলার পর ক্লাসে যতটুকু সিলেবাস পড়ানো হবে ততটুকু ওপর পরীক্ষা হবে। স্কুল খুললে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে বিষয়ভিত্তিক সর্বোচ্চ ৩০ দিনে ক্লাস নেওয়া হবে।

আরো পড়ুন বিকল্প পদ্ধতিতে এসএসসি-এইচএসসি পরীক্ষা: শিক্ষামন্ত্রী

তবে ভাইরাসের কারণে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলতেই পারছে না সরকার। করোনা পরিস্থিতি অনুকূলে না আসায় দফায় দফায় বাড়ানো হচ্ছে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের চলমান ছুটি। সবশেষ ১৩ জুন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার কথা থাকলেও পরিস্থিতি অনুকূলে না আসায় চলমান ছুটি বাড়িয়ে ৩০ জুন করা হয়েছে। এ অবস্থায় সশরীরে পরীক্ষা না নিয়ে বিকল্প পদ্ধতিতে এ দুই পরীক্ষার নেওয়ার বিষয়ে ভাবছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়।

শিক্ষা সংশ্লিষ্টরা বলছেন, জুলাইয়ের ২য় সপ্তাহের মধ্যে স্কুল-কলেজ খোলা না গেলে ৬০ দিন এবং ৮৪ দিন ক্লাস করিয়ে এসএসসি-এইচএসসি পরীক্ষা নেওয়া প্রায় অসম্ভব। এরমধ্যে ২০২২ সালের এসএসসি-এইচএসসি পরীক্ষাও নিতে হবে বোর্ডগুলোকে।

এদিকে জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে, করোনা সংক্রমণ ৫ শতাংশের নিচে না নামলে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দেওয়া ঝুঁকিপূর্ণ। দেশে বর্তমান পরিস্থিতিতে করোনার সংক্রমণ যে পর্যায়ে রয়েছে তাতে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার সম্ভাবনা খুব কম। কারণ দেশে কয়েকদিন ধরে সংক্রমণ যে হারে চলছে তাতে খুব শীঘ্রই সংক্রমণ হার কমবে বলে মনে হচ্ছে না। আর কমলেও সেজন্য কমপক্ষে আরো ৪ থেকে ৫ মাস সময় লাগবে। এছাড়া সামনে কোরবানি ঈদকে সামনে রেখে সংক্রমণ আরেক দফা বাড়ারও আশঙ্কা করছেন বিশেষজ্ঞরা। এমন অবস্থায় আগামী ডিসেম্বরের আগে এসএসসি-এইচএসসি পরীক্ষা নেওয়া সম্ভব নয়।

আরো পড়ুন এসএসসি-এইচএসসি অনলাইনে নেওয়ার বিষয়টি চিন্তারই: নেহাল আহমেদ

এদিকে রোববার (১৩ জুন) গত ২৪ ঘণ্টায় দেশে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে ৪৭ জন মানুষ যান। আর এই সময়ে নতুন করে আক্রান্ত হন ২ হাজার ৪৩৬ জন। এ নিয়ে দেশে মোট শনাক্ত কোভিড-১৯ রোগীর সংখ্যা দাঁড়ালো আট লাখ ২৬ হাজার ৯২২ জন। করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন মোট ১৩ হাজার ১১৮ জন। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সর্বশেষ তথ্য মতে, গত ২৪ ঘণ্টায় নমুনা পরীক্ষার তুলনার রোগী শনাক্তের হার ১২ দশমিক ৯৯ শতাংশ। এ পর্যন্ত শনাক্তের হার ১৩ দশমিক ৩৯ শতাংশ। গত ২৪ ঘণ্টায় নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে ১৮ হাজার ৭৪৯টি নমুনা।

এমন পরিস্থিতিতে জুলাইয়ে শিক্ষা-প্রতিষ্ঠান খোলার সম্ভাবনা কতটুকু তাও অনিশ্চিত। তাই এসএসসি-এইচএসসি পরীক্ষা নিয়েও বিকল্প চিন্তা করছে সংশ্লিষ্টরা। এ অবস্থায় সরাসরি পরীক্ষা না নিয়ে বিকল্প হিসেবে অনলাইন কিংবা অ্যাসাইনমেন্ট মূল্যায়ন করে ফলাফল প্রকাশ করা যায় কিনা সে চিন্তাও করছে সংশ্লিষ্টরা।

এ বিষয়ে অনলাইনে শ্রেণিভিত্তিক ও পাবলিক পরীক্ষা আয়োজনে গঠিত সুপারিশ কমিটির সভাপতি এবং ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান অধ্যাপক নেহাল আহমেদ বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে অনলাইনে পরীক্ষা নেওয়ার অনুমতি দিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন। সেখানে বিভাগ বা অনুষদভিত্তিক পরীক্ষা হয়। ক্ষেত্রবিশেষে ৬০-৭০ জনও পরীক্ষার্থী থাকে। তাদের পরীক্ষা নেওয়া সহজ। কিন্তু ২০-২২ লাখ পরীক্ষার্থীর ক্ষেত্রে তত সহজ নয়। এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষা কেন্দ্র হাওর-চরাঞ্চলেও আছে। ওই অঞ্চলে বিদ্যুৎ ও ইন্টারনেট নিশ্চিত করাটা বড় চ্যালেঞ্জ। কম্পিউটার বা ল্যাপটপও সবার নেই। এ জন্য এত বড় পরীক্ষা অনলাইনে নেওয়ার বিষয়টি চিন্তারই।

এদিকে রোববার (১৩ জুন) প্রেসক্লাবে এক অনুষ্ঠানে অংশ নিয়ে শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি এসএসসি-এইচএসসি নিয়ে বিকল্প চিন্তার কথা জানিয়েছেন। তিনি বলেন, এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষা কীভাবে নেয়া যায় সে বিষয়ে চিন্তাভাবনা করা হচ্ছে৷ প্রচলিত নিয়মে পরীক্ষা নেয়া সম্ভব না হলে বিকল্প উপায়ে নেয়া যায় কিনা সে বিষয়টিও গুরুত্ব সহকারে দেখা হচ্ছে। প্রয়োজনে বিকল্প পদ্ধতিতেই পরীক্ষা নেয়া হবে।

তিনি আরও বলেন, আমরা অনলাইনের মাধ্যমে পাঠদান অব্যাহত রেখেছি। সেই সাথে বিকল্প পদ্ধতিও বের করার চেষ্টা করছি। শিক্ষার্থীদের অনুরোধ করবো, তোমরা বাসায় থেকে সিলেবাস শেষ করো। জীবন থেকে একটি বছর চলে গেলে তেমন কোনো ক্ষতি হবে না। আমাদের সবারই সুস্থ থাকতে হবে।