করোনায় বিপর্যস্ত তরুণেরা, কমছে আয়

সানেম ও অ্যাকশনএইড বাংলাদেশের ওয়েবিনার

চলমান করোনা পরিস্থিতিতে অন্যান্য ক্ষতির পাশাপাশি বড় ধরণের ক্ষতির মধ্যে পড়েছে তরুণরা। আত্মনির্ভরশীল কিংবা নিজেই ব্যবসা পরিচালনা করে—এমন প্রায় ৭৯.৭ শতাংশ তরুণের মাসিক আয় কমেছে। আর বেতনভুক্ত ৫৭.৪ শতাংশ তরুণের আয় কমে গেছে। সাউথ এশিয়ান নেটওয়ার্ক অন ইকোনমিক মডেলিং (সানেম) ও অ্যাকশনএইড বাংলাদেশের এক জরিপে এই তথ্য উঠে এসেছে।

গতকাল রবিবার ‘২০২১-২২ অর্থবছরের বাজেট : প্রেক্ষিত তরুণ জনগোষ্ঠী’ শীর্ষক এক ওয়েবিনারে জরিপ প্রতিবেদনটি প্রকাশ করা হয়।

তরুণদের ওপর করোনার প্রভাব নিয়ে সানেম ও অ্যাকশনএইড গত বছরের ২ নভেম্বর থেকে ১৭ ডিসেম্বর পর্যন্ত এই জরিপ পরিচালনা করে। পাঁচ হাজার ৫৭৭টি খানার ওপর এই জরিপটি চালানো হয় ফোনকলের মাধ্যমে।

জরিপ প্রতিবেদনটি উপস্থাপন করেন সানেমের জ্যেষ্ঠ গবেষণা সহযোগী ইশরাত শারমীন।

প্রতিবেদনে বলা হয়, মাত্র ২২ শতাংশ শিক্ষার্থী নিয়মিত অনলাইন ক্লাসে অংশগ্রহণ করছে। সরকারের নেওয়া সময়োচিত একটি পদক্ষেপ ‘অ্যাডোলেসেন্ট ফ্রেন্ডলি হেলথ কর্নার’ সঠিকভাবে বাস্তবায়িত না হওয়ায় তরুণরা, বিশেষত নারীরা পর্যাপ্তভাবে এর সুযোগ গ্রহণ করতে পারছে না। চারটি জেলার তরুণদের ওপর চালানো জরিপের ফল অনুযায়ী, ৫৭.৭% তরুণ করোনার সময়ে শিক্ষাসংক্রান্ত কাজে কোনো ডিজিটাল ডিভাইস পেতে সক্ষম হয়নি।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক ও সানেমের গবেষণা পরিচালক ড. সায়মা হক বিদিশার সঞ্চালনায় অনুষ্ঠিত ওয়েবিনারে সভাপতিত্ব করেন অ্যাকশনএইড বাংলাদেশের প্রধান ফারাহ কবির। প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য নাহিম রাজ্জাক। বিশেষ বক্তব্য উপস্থাপন করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক ও সানেমের নির্বাহী পরিচালক ড. সেলিম রায়হান। ওয়েবিনারে বাংলাদেশের বিভিন্ন অঞ্চলের অর্ধশতাধিক অর্থনীতিবিদ, গবেষক, সাংবাদিক, শিক্ষক ও শিক্ষার্থী অংশ নেন।

আগামী অর্থবছরের বাজেট বিশ্লেষণ করে ওয়েবিনারে বলা হয়, ২২টি মন্ত্রণালয় ও বিভাগ তরুণদের উন্নয়নের জন্য কাজ করে। তবে আগামী অর্থবছরের বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচিতে (এডিপি) এসব মন্ত্রণালয় ও বিভাগে যে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে, তার মধ্যে মাত্র ১৪ শতাংশ সরাসরি তরুণদের কেন্দ্র করে। ৬০ শতাংশ বরাদ্দ তরুণদের কাজে লাগে না। আর বাকি ২৬ শতাংশ আংশিকভাবে তরুণদের জন্য বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগ, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়, বেসামরিক বিমান চলাচল ও পর্যটন মন্ত্রণালয়, কৃষি মন্ত্রণালয়—এগুলোতে তরুণদের জন্য কোনো বরাদ্দ নেই।

ড. সেলিম রায়হান বলেন, ‘একটি বিষয় আমরা সবাই একমত হচ্ছি যে তরুণদের জন্য বাজেটে বরাদ্দ ভীষণভাবে অপর্যাপ্ত। তরুণদের জন্য বাজেটে বরাদ্দ আগে থেকেই অপর্যাপ্ত ছিল। করোনা পরিস্থিতিতে তরুণদের শিক্ষায়, স্বাস্থ্যসেবায়, কর্মসংস্থান সৃষ্টিতে যেখানে বরাদ্দ বাড়ানোর প্রয়োজন ছিল, প্রস্তাবিত বাজেটে আমরা তা দেখিনি। এমন পরিস্থিতিতে তরুণদের বিভিন্ন সংকট মোকাবেলায় যে অসাধারণ উদ্যোগ দরকার, সে জায়গায় ঘাটতি রয়ে গেছে।’

প্রধান অতিথির বক্তব্যে সংসদ সদস্য নাহিম রাজ্জাক বলেন, ‘তরুণ জনগোষ্ঠী এখনো করোনার টিকা পায়নি। ফলে তরুণ উদ্যোক্তাদের জন্য আমরা এখনো যথেষ্ট সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করতে পারিনি। প্রণোদনা প্যাকেজ তরুণরা পাচ্ছে না সঠিক উপায়ে। এই বরাদ্দ সঠিকভাবে দিতে হবে। আর নতুন উদ্যোক্তা সৃষ্টি করতে হবে। নীতি প্রণয়ন, বাস্তবায়ন ও মূল্যায়ন—এই তিনটি জায়গায় আমাদের সংস্কার প্রয়োজন। যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয় থেকে একটি ইয়ুথ কাউন্সিল গঠন করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।