প্রতি সনদে সই করতে ৬ টাকা নেন উপাচার্য

অধ্যাপক ড. এমএ মাননান
বাউবির সদ্য সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক ড. এমএ মাননান

পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের দৈনন্দিন কার্যাবলির অন্যতম ডিগ্রিধারীদের সনদে স্বাক্ষর করা। তবে কাজটির জন্য আলাদা পারিশ্রমিক নিয়েছেন বাংলাদেশ উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের (বাউবি) উপাচার্য। সনদপ্রতি ৬ টাকা করে স্বাক্ষর ভাতা নেন বাউবির সদ্য সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক ড. এমএ মাননান। উপাচার্যের এভাবে অর্থ নেওয়াকে নজিরবিহীন বলছেন সংশ্লিষ্টরা।

তবে সনদে স্বাক্ষর করে অর্থ গ্রহণের বিষয়টিকে স্বাভাবিক ও যৌক্তিক দাবি করেছেন অধ্যাপক এমএ মাননান। তিনি বলেন, ‘২০১৩ সালে দায়িত্ব নেওয়ার পর দেখি প্রায় পাঁচ লাখ সনদ স্বাক্ষরের অপেক্ষায় রয়েছে। প্রতি শিক্ষাবর্ষে ডিগ্রির প্রায় চার লাখ সনদে সই করতে হয়। কোনো উপাচার্যের পক্ষেই এত সনদে সই করা সম্ভব নয়।’

তিনি বলেন, ‘পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক কার্যালয়ের কর্মকর্তারা জানান, তাদের ওপরও সনদ নিয়ে বেশী চাপ যাচ্ছে। তাদের জন্য সম্মানীর ব্যবস্থা করে সনদ জটিলতা সমাধান হওয়ার কথা বলেন তারা। এরপর একটি নীতিমালা করে অনুমোদন করা হয়। টাকার পরিমাণও বেশি না। প্রতি সনদে ৬ টাকা। এটা যৌক্তিক ও স্বাভাবিক।’ এ সময় জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়েও এমন প্রথা চালু আছে বলে দাবি করেন তিনি।

অবশ্য জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে সনদ স্বাক্ষর করে উপাচার্যের ভাতা নেওয়ার তথ্য পাওয়া যায়নি। শিক্ষার্থী সংখ্যার দিক দিয়ে সবচেয়ে বড় উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠান জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়। সে হিসেবে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যকেই সবচেয়ে বেশি সনদে স্বাক্ষর করতে হয়।

জানা গেছে, ২০১৩ সালে বাউবির উপাচার্য পদে নিয়োগ পান ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক এমএ মাননান। দায়িত্ব গ্রহণের পর সনদ স্বাক্ষরের জন্য ভাতা চালু করেন। দুই মেয়াদে শুধু সনদ স্বাক্ষর বাবদ ১৫ থেকে ২০ লাখ টাকা ভাতা নিয়েছেন তিনি। এজন্য নীতিমালাও প্রণয়ন করেন। সেখানে উপাচার্যের পাশাপাশি পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক ও অন্য কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জন্য পারিশ্রমিকের ব্যবস্থা রাখা হয়।

নীতমালা অনুযায়ী, নিয়মিত কাজের অংশ হিসেবে সুবিধাপ্রাপ্যরা ৩০ শতাংশ সনদ স্বাক্ষর করবেন। আর বাকি ৭০ শতাংশ সনদ স্বাক্ষর করে ভাতা গ্রহণ করবেন।

সূত্র জানায়, বাউবিতে ডিগ্রিধারীর সনদ স্বাক্ষরে উপাচার্যের ভাতা গ্রহণের বিষয়টি জানতে পেরেছে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশন (ইউজিসি)। এরপর বাউবির বাজেট পর্যবেক্ষণে এমন ভাতা বন্ধ করতে নির্দেশনা দিয়েছে কমিশন। পাশাপাশি আগে প্রদানকৃত অর্থ ফেরত দিতে বলা হয়েছে। যদিও সে আলোকে ব্যবস্থা নেয়নি বাউবি কর্তৃপক্ষ।

এ প্রসঙ্গে ইউজিসির সদস্য অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ আলমগীর বলেন, সনদে স্বাক্ষর করা উপাচার্যের স্বাভাবিক কাজ। এখানে সিদ্ধান্ত গ্রহণের কোনো বিষয় নেই। কোনো উপাচার্য এ ধরনের ভাতা নেন বলে জানা নেই আমার। যেকোনো বিষয়কে নীতিমালা প্রণয়ন করেও বৈধতা দেয়ার সুযোগ নেই। সনদে স্বাক্ষরের জন্য একাডেমিক ও প্রশাসনিক প্রধান হিসেবে উপাচার্য  ভাতা নিতে পারেন না।

ক্যাম্পাস হত্যাকাণ্ডের প্রথম বিচার পান যিনি

অপরদিকে দুই মেয়াদে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করে বিদায় নিয়েছেন অধ্যাপক হারুন-অর-রশিদ। সনদে স্বাক্ষর বাবদ উপাচার্যের ভাতা গ্রহণের বিষয়ে তিনি বলেন, ‘আমি দায়িত্বে থাকাকালে এমন কোনো ভাতা গ্রহণ করিনি। স্বাক্ষরের জন্য ভাতা নিলে সরকার এ পদে নিয়োগ দিল কেন? আমার কাজটা কী? এটা আমাদের দায়িত্বের মধ্যেই পড়ে।’

সম্প্রতি জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়েরে উপাচার্য হিসেবে নিয়োগ পাওয়া অধ্যাপক মশিউর রহমান বলেন, ‘আমার আগের উপাচার্যও সনদ স্বাক্ষরের জন্য ভাতা নেননি, আমিও নিচ্ছি না। আগে একসময় এমন সংস্কৃতি ছিল বলে শুনেছি।’

এদিকে অন্য কোনো পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়েও সনদ স্বাক্ষরের জন্য উপাচার্যের ভাতা গ্রহণের তথ্য মেলেনি। বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়েও এমন নীতি চালু নেই।