পশ্চিমবঙ্গে মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষা বাতিলের সুপারিশ

পাবলিক পরীক্ষা
শিক্ষা দপ্তরে দেওয়া প্রতিবেদনে পরীক্ষা বাতিলের সুপারিশ করা হয়

করোনার কারণে ভারতের পশ্চিমবঙ্গে মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষা বাতিলের সুপারিশ করেছে বিশেষজ্ঞ কমিটি। রাজ্যে মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষা হবে কি না, এ বিষয়ে রাজ্য সরকার ৬ সদস্যের একটি বিশেষজ্ঞ কমিটি গঠন করেছিল। ওই বিশেষজ্ঞ কমিটির পক্ষ থেকে শুক্রবার (৪ জুন) শিক্ষা দপ্তরে দেওয়া প্রতিবেদনে পরীক্ষা বাতিলের সুপারিশ করা হয়।

রাজ্যের শিক্ষাসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের দেওয়া তথ্যমতে, বিশেষজ্ঞ কমিটি পরীক্ষা বাতিলের সুপারিশ করলেও এ বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবে পশ্চিমবঙ্গ সরকার। তবে ইতিমধ্যে ইংরেজি মাধ্যমের দিল্লির কেন্দ্রীয় বোর্ড সিবিএসই এবং সিআইএসসিই বোর্ড দ্বাদশ শ্রেণির চূড়ান্ত পরীক্ষা বাতিল করে দিয়েছে।

বিশেষজ্ঞ কমিটির প্রতিবেদনে বলা হয়, করোনার কারণে শিক্ষার্থীদের স্কুলে গিয়ে পরীক্ষা দেওয়া বাস্তবসম্মত হবে না। তাই পরীক্ষা না হওয়ার পক্ষে সুপারিশ করা হয়েছে। এখন এ ব্যাপারে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবে পশ্চিমবঙ্গ সরকারই।

প্রতিবেদনে পরীক্ষার্থীদের মূল্যায়নের সম্ভাব্য পদ্ধতি নিয়েও প্রস্তাব রাখা হয়েছে। বিশেষজ্ঞ কমিটির প্রতিবেদনে বলা হয়, উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষার্থীদের ক্ষেত্রে হোম অ্যাসাইনমেন্টের মাধ্যমে মূল্যায়ন হতে পারে। এর সঙ্গে থাকবে ল্যাবরেটরি–ভিত্তিক বিষয়ে ৩০ নম্বর এবং নন–ল্যাবরেটরি বিষয়ের জন্য ২০ নম্বরের প্রজেক্টে ছাত্র-ছাত্রীদের প্রাপ্ত নম্বর। কমিটি বলছে, পরীক্ষার্থীদের মূল্যায়নের ক্ষেত্রে ওই সব নম্বরকে গুরুত্ব দেওয়া যেতে পারে। আর মাধ্যমিকের ক্ষেত্রে পরীক্ষার্থীদের নবম শ্রেণির বার্ষিক পরীক্ষা অথবা ষাণ্মাসিক ও বার্ষিক পরীক্ষার নম্বর যোগ করে গড় নম্বর দেওয়া যেতে পারে।

মূলত গত ২ মে ছিল পশ্চিমবঙ্গের মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষার সূচি ঘোষণার দিন। দুই বোর্ডের প্রধানেরা ওই দিন দুপুরে উচ্চ মাধ্যমিক বোর্ড বিদ্যাসাগর ভবনে এক যৌথ সাংবাদিক সম্মেলনে পরীক্ষার সূচি ঘোষণা করার কথা ছিল। সেখানে উপস্থিত থাকার কথা ছিল উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ডের সভাপতি মহুয়া দাস এবং মাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ডের সভাপতি কল্যাণময় গঙ্গোপাধ্যায়ের। কিন্তু ওই দিন সকালে রাজ্য শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে সূচি ঘোষণার দিন বাতিলের কথা জানানো হয়।

এর আগে কলকাতার বিকাশ ভবনে গত মঙ্গলবার এই পরীক্ষা নিয়ে একটি উচ্চপর্যায়ের বৈঠক হয়েছিল। সেখানেই করোনা পরিস্থিতি এবং পরবর্তী অবস্থা নিয়ে বৈঠক হয়। সেখানে উপস্থিত ছিলেন শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসুসহ মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক বোর্ডের সভাপতি ও অন্যান্য শীর্ষ কর্মকর্তা।

সেদিনই এই দুই পরীক্ষা নিয়ে ছয় সদস্যের একটি বিশেষজ্ঞ কমিটি গঠন করার সিদ্ধান্ত হয়। বৈঠকে বলা হয়, এই বিশেষজ্ঞ কমিটি মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষা গ্রহণের বিষয়ে ৭২ ঘণ্টার মধ্যে বিস্তারিত প্রতিবেদন দেবে। কমিটির প্রতিবেদনের পরই রাজ্য সরকার সিদ্ধান্ত নেবে পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে কি না। এবার পশ্চিমবঙ্গে মাধ্যমিকে ১২ লাখ ও উচ্চমাধ্যমিকে ৯ লাখ পরীক্ষার্থীর অংশ নেওয়ার কথা রয়েছে।

সরকারের সংশ্লিষ্ট দপ্তরের সূত্রমতে, পশ্চিমবঙ্গ সরকার করোনার সময়ে পরীক্ষা নেওয়ার ঝুঁকি নিতে চাইছে না। বিধানসভা নির্বাচন ও করোনা পরিস্থিতির কারণে এই রাজ্যের মাধ্যমিক পরীক্ষা পিছিয়ে ১ জুন নেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছিল। গত ২৭ মে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ঘোষণা দিয়েছিলেন, আগামী জুলাই মাসে উচ্চমাধ্যমিক এবং আগস্ট মাসে মাধ্যমিক পরীক্ষা হবে।