বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীরাও যুক্ত হচ্ছেন ‘কিশোর গ্যাংয়ে’

কিশোর গ্যাং
বেপরোয়া হচ্ছে ‘কিশোর গ্যাং’ সদস্যরা

করোনা পরিস্থিতিতে দেশের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় রাজধানীসহ সারাদেশে বেড়েছে ‘কিশোর গ্যাংয়ের’ প্রভাব। এসব কিশোর গ্যাংয়ে যুক্ত হচ্ছেন বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ুয়া শিক্ষার্থীরাও। সামান্য ঘটনাকে কেন্দ্র করে জড়িয়ে পড়ছে বড় ধরণের সহিংসতায়।  

পড়াশোনাসহ বাড়তি চাপ না থাকায় বিভিন্ন পাড়া মহল্লায় টইটই করে ঘুরে বেড়াচ্ছে স্কুল-কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ুয়া তরুণেরা। এ সময় তারা ইভটিজিং, ছিনতাই ও মাদকসেবনসহ নানা অপকর্মে যুক্ত হচ্ছে। জড়িয়ে যাচ্ছে হত্যাকাণ্ডের মতো ঘটনায়। বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের স্থানীয় নেতাদের কছে ব্যবহার হয়েই এসব কাজে জড়িয়ে যাচ্ছে ‘কিশোর গ্যাং’ নামীয় এই তরুনেরা।

আনন্দ আর আড্ডার ছলে বিভিন্ন নেশাজাতীয় দ্রব্য সেবন করে মাতলামী করছে তারা। এ সময় অনেকে আত্মহননের পথও বেছে নেয়।

সম্প্রতি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী হাফিজ নিখোঁজ হওয়ার ৮ দিন পরে তার লাশ পাওয়া যায়। পরে তদন্ত প্রতিবেদন অনুযায়ী জানা যায় সে কিশোর গ্যাংয়ে নিজেকে জড়িয়ে মাদক সেবন করে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বহিষ্কৃত ও বর্তমানে নর্থসাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র সাকিব ওরফে রূপলের নেতৃত্বে গড়ে ওঠে তাদের গ্যাং। এছাড়াও রয়েছে আরও দুইজন সদস্য। ঘটনার পরে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ তাদের গেপ্তার করে। গ্রেফতারকৃত অন্য দুইজন হলো নর্থসাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র আসহাব ওরফে তূর্য এবং ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি আব বাংলাদেশের (আইইউবি) ছাত্র আদিব আশরাফ।

গ্রেফতারকৃতরা জানিয়েছে, হাফিজ এলএসডিতে আসক্ত ছিলেন। আসক্ত অবস্থায় ১৫ মে রাতে ঢাকা মেডিকেল কলেজের বহির্বিভাগের সামনে ভ্রাম্যমাণ ডাবের দোকান থেকে দা নিয়ে তা দিয়ে নিজের গলায় নিজে কুপিয়ে আত্মহত্যা করেছেন। গ্রেফতার ব্যক্তিদের কাছ থেকে ছয় লাখ টাকার এলএসডি উদ্ধার করা হয়েছে।

আরও দেখুন: এলএসডি মাদকসহ তিন শিক্ষার্থী আটক

গত ১৬ মে রাজধানীর পল্লবীতে সাত বছর বয়সি শিশুসন্তানের সামনে প্রকাশ্যে কুপিয়ে হত্যা করা হয় সাহিনুদ্দিন নামের এক যুবককে। এর নেপথ্যেও ছিল গ্যাং কালচার। সুমনের নেতৃত্বে পল্লবীতে গড়ে উঠেছিল একটি গ্যাং।

সাবেক এমপি এমএ আউয়াল ছিলেন সুমন বাহিনী হিসাবে পরিচিত এই গ্যাং সদস্যদের ‘গডফাদার’। তার পরিকল্পনায় এ হত্যাকাণ্ড ঘটেছে বলে জানিয়েছেন ডিবি কর্মকর্তারা । এ ঘটনায়  আউয়াল-সুমনসহ ১১ জনকে গ্রেফতার করেছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, রাজধানীতে শতাধিক কিশোর গ্যাং সক্রিয়। এ বিষয়ে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি, ডিবি) অতিরিক্ত কমিশনার একেএম হাফিজ আক্তার বলেন, কিশোর গ্যাং এবং উঠতি সন্ত্রাসীদের তালিকা আপডেট করা হচ্ছে। শিগগিরই তাদের বিরুদ্ধে অভিযান চালানো হবে।

ডিবির যুগ্ম কমিশনার হারুন অর রশিদ বলেন, গোপনে আমরা কিশোর গ্যাং এবং সন্ত্রাসী বাহিনীগুলোর গডফাদার, টিম লিডার এবং সদস্যদের তথ্য সংগ্রহ করে তালিকা প্রস্তুত করছি। তালিকা হয়ে গেলেই আমরা অভিযান চালাব।  

র‌্যাবের করা তালিকা অনুযায়ী ঢাকার উত্তরা এলাকায় গ্যাং সদস্যের সংখ্যা বেশি। এসব এলাকায় পাওয়ার বয়েজ, ডিসকো বয়েস, বিগ বস, নাইন স্টার, নাইন এমএম বয়েস, এনএনএস, এফএইচবি, জিইউ, ক্যাকরা, ডিএইচবি, ব্ল্যাক রোজ, রনো, কে-নাইন, ফিফটিন গ্যাং, পোঁটলা বাবু, সুজনা ফাইটার, আলতাফ জিরো, ক্যাসল বয়েজ, ভাইপার, তুফান, থ্রি গোল, শাহীন-রিপন ও নামিজ উদ্দিন গ্যাং রয়েছে।

এছাড়াও তালিকায়  তেজগাঁওয়ের মাঈনুদ্দিন গ্যাং, কাফরুলের নয়ন গ্যাং, তুরাগের তালাচাবি গ্যাং, ধানমন্ডির নাইন এমএম, একে ৪৭, ফাইভ স্টার গ্রুপ, রায়েরবাজারের স্টার বন্ড গ্রুপ ও মোল্লা গ্রুপ, মোহাম্মদপুরের গ্রুপ টোয়েন্টিফাইভ, লাড়া দে, লেভেল হাই, দেখে ল-চিনে ল, কোপাইয়া দেসহ নানান  গ্যাংয়ের নাম উঠে এসেছে।