বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি কাণ্ড

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়
মেয়াদের শেষ দিন পুলিশি পাহারায় ক্যাম্পাস ছাড়েন সদ্য রাবির সাবেক ভিসি অধ্যাপক এম আব্দুস সোবহান

কখনো নিয়োগ বাণিজ্য, কখনো স্বজনপ্রীতি, কখনো দুর্নীতি-নানা কারণে বিভিন্ন সময় আলোচনায় উঠে এসেছেন দেশের বিভিন্ন সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসিরা৷ সর্বশেষ এই তালিকায় যুক্ত হলেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) সদ্য সাবেক ভিসি অধ্যাপক এম আব্দুস সোবহান। আজকের আয়োজনে থাকছে এমন কয়েকজনের কথা-

এম আব্দুস সোবহান
প্রথম মেয়াদে নিয়োগ পেয়ে করেছিলেন স্বজনপ্রীতি৷ মেয়ে এবং মেয়ের জামাইকে চাকরি দিয়েছিলেন৷ দ্বিতীয় মেয়াদের শেষ কর্মদিবসে শিক্ষক, কর্মকর্তা ও কর্মচারী পদে ১৪১ জনকে অস্থায়ী নিয়োগ দিয়ে যান রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের এই উপাচার্য ৷ এই নিয়োগে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের নিষেধাজ্ঞাও উপেক্ষা করা হয়েছে৷ অভিযোগ, ৫০ লাখ টাকা নিয়েছেন নিয়োগ দিতে৷

নাজমুল আহসান কলিমুল্লাহ
রংপুরের বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. নাজমুল আহসান কলিমুল্লাহর বিরুদ্ধে নির্মাণ কাজে ইউজিসি দুর্নীতির প্রমাণ পেয়েছে৷ অভিযোগ উঠেছে, উপাচার্য চার বছরে ১৪৬০ দিনের মধ্যে রংপুরে উপস্থিত থেকে অফিস করেছেন মাত্র ১১৮ দিন৷ এছাড়া আপ্যায়ন ভাতার নামে প্রচুর অর্থ তুলেছেন৷ কলিমউল্লাহর অনিয়ম-দুর্নীতি ও স্বেচ্ছাচারিতার ১১১টি দুর্নীতির শ্বেতপত্র প্রকাশ করা হয়েছে৷

খোন্দকার নাসিরউদ্দিন
গোপালগঞ্জের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য খোন্দকার নাসিরউদ্দিন ২০১৯ সালে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের মুখে পদত্যাগ করেন৷ তার বিরুদ্ধে ক্ষমতার অপব্যবহারসহ দায়িত্ব পালনকালে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন সাধারণ শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে মাত্রাতিরিক্ত ভর্তি ফি, হল ভাড়া, ক্রেডিট ফি, চিকিৎসা ফি আদায়ের অভিযোগ করেছিলেন শিক্ষার্থীরা৷

শহীদুর রহমান খান
খুলনা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য শহীদুর রহমান খানের বিরুদ্ধে পরিবারের সদস্যদের অস্বচ্ছ প্রক্রিয়ায় নিয়োগ দেওয়াসহ অন্তত ১৫টি অভিযোগ আছে৷ অভিযোগ, তিনি নিজের ছেলেকে ‘অ্যাডহক’ ভিত্তিতে সেকশন অফিসার হিসেবে নিয়োগ দিয়েছেন৷ অস্বচ্ছ প্রক্রিয়ায় নিজের মেয়েকে নিয়োগ দিয়েছেন শিক্ষক হিসেবে৷ 

মো. আলাউদ্দিন
টাঙ্গাইলে মাওলানা ভাসানী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য মো. আলাউদ্দিনের বিরুদ্ধে নিয়োগে অনিয়ম, সম্মানী নেওয়ায় নয়ছয় করাসহ বেশ কিছু অভিযোগ রয়েছে৷

কামাল উদ্দিন আহাম্মদ
শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে (শেকৃবি) শিক্ষক-কর্মকর্তা নিয়োগে অনিয়মের অভিযোগ আছে এই উপাচার্যের বিরুদ্ধে৷ ২০১৭ সালে চারটি অনুষদে অ্যাসোসিয়েট প্রফেসর, অ্যাসিস্ট্যান্ট প্রফেসর ও লেকচারার পদে ৭৫ জন শিক্ষক নিয়োগের বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়৷ অথচ ১০১ জনকে শিক্ষক হিসেবে নিয়োগের জন্য সুপারিশ প্রদান করা হয়, এর মধ্যে ২১ জনকে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের অনুমোদনের অপেক্ষায় রাখা হয়, যা ইউজিসি আইনের পরিপন্থি৷

এম রোস্তম আলী
পাবনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য প্রফেসর এম রোস্তম আলীর বিরুদ্ধে বিভিন্ন অনিয়ম ও দুর্নীতির সুনির্দিষ্ট অভিযোগ তুলেছিলো শিক্ষা মন্ত্রণালয়৷

ফারজানা ইসলাম
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম নারী উপাচার্য অধ্যাপক ফারজানা ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রায় দেড় হাজার কোটি টাকার উন্নয়নমূলক কাজে দুর্নীতি করেছেন বলে অভিযোগ রয়েছে৷ অবশ্য তার আনা পাল্টা চাঁদাবাজির অভিযোগে ছাত্রলীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক পদ থেকে শোভন-রাব্বানীকে সরিয়ে দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা৷

মো. আনোয়ারুল আজিম আরিফ
২০১৪ সালে প্রথম আলোর অনুসন্ধানী প্রতিবেদনে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের এই উপাচার্যের দুর্নীতির চিত্র ফুটে ওঠে৷ তিনি একাই ২১টি পদের দায়িত্বে ছিলেন৷ এছাড়া তিন বছরে অর্থের বিনিময়ে আড়াইশ’ শিক্ষক নিয়োগ দেয়ার অভিযোগ আছে তার বিরুদ্ধে৷ নিজের ছেলেকে অবৈধভাবে নিয়োগ, কম যোগ্যদের নেওয়া, বিজ্ঞাপিত পদের বাইরে নিয়োগ দেওয়াসহ শিক্ষক নিয়োগে আর্থিক লেনদেনের মতো স্পর্শকাতর অভিযোগ উঠে আসে প্রতিবেদনে৷

সূত্র: ডয়েচে ভেলে