১৮ মাস ধরে প্রথম সেমিস্টারে ১৯-২০ সেশনের শিক্ষার্থীরা

ক্যাম্পাসে ঘোরাফেরা করছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা
ক্যাম্পাসে ঘোরাফেরা করছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা

দেশে মহামারি করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়ার ফলে সরকার আরোপিত বিধিনিষেধের সবচেয়ে বিরূপ প্রভাব পড়েছে শিক্ষাখাতে। একেবারে শুরু থেকে না হলেও বন্ধের সময়সীমা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে শিক্ষাব্যবস্থায় চালু হয়েছে অনলাইন ক্লাস। তবে এটি তেমন একটা সুফল বয়ে আনতে পারেনি বলে মত দিচ্ছেন শিক্ষার্থীরা। উল্টো বিষয়টি নিয়ে শিক্ষার্থীদের মাঝে সমালোচনা ও অসন্তোষই বেশি দেখা গেছে। এবার এসেছে অনলাইন পরীক্ষার নির্দেশনা। কিন্তু এসবেও শিক্ষাব্যবস্থায় দৃশ্যমান কোনো অগ্রগতি দেখা যাচ্ছে না।

বিশ্ববিদ্যালয় জীবন শুরুর পরপরই ক্যাম্পাস ছেড়ে এখনো প্রথম সেমিস্টার শেষ করতে না পারা বেশ কয়েকজন শিক্ষার্থী দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসের কাছে অভিযোগ করেছেন, তারা গত ১৮ মাস ধরে প্রথম সেমিস্টারে পড়াশোনা করছেন। দীর্ঘ এ সময়ে পরীক্ষা না হলেও চলমান ছিল অনলাইন ক্লাস। কিন্তু এ অনলাইন ক্লাস থেকে তারা তেমন কোনো ইতিবাচক ফল পাননি।

দেশের শিক্ষাব্যবস্থায় ১৯-২০ সেশনের শিক্ষার্থীদের ভর্তি পরীক্ষা হয় ২০১৯ সালের শেষ কয়েক মাসে। এরপর ২০১৯-এর শেষ এবং ২০২০-এর শুরু দিকে এসব শিক্ষার্থী নিজ নিজ বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি কার্যক্রম শেষ করে ক্লাস শুরু করেন। কিন্তু দেশে গত বছরের মার্চ মাসে প্রথম করোনা আক্রান্ত রোগীর খবর পাওয়া গেলে ১৭ মার্চ তারিখ থেকে সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ হয়ে যায়। কয়েক দফা ছুটি বাড়ানোর পর আগামী ২৪ মে থেকে বিশ্ববিদ্যালয়গুলো খোলার কথা রয়েছে।

পড়ুন: বিশ্ববিদ্যালয় খোলা না খোলা নিয়ে যা জানা গেল

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের দর্শন বিভাগের (১৯-২০ সেশন) শিক্ষার্থী এইচ আর বাদশাহ বলেন, দেশের শিক্ষাব্যবস্থা ধ্বংসের পথে হাঁটছে। এখানে করোনাভাইরাসের মধ্যে অনলাইন ক্লাসের নামে আমাদের চুরি শেখানো হচ্ছে। কীভাবে একজনের অ্যাসাইনমেন্ট দশজন কপি করে চালাতে হবে অনলাইন ক্লাসের মাধ্যমে আমরা তা শিখছি। এ করোনার বন্ধে আমাদের এ ব্যাচটাই সবচেয়ে বেশি ভুক্তভোগী।

এদিকে, অনলাইন ক্লাসের পর গত বৃহস্পতিবার (৬ মে) পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে অনলাইন পরীক্ষারও অনুমোদন দিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশন (ইউজিসি)। তবে ইউজিসির এ সিদ্ধান্ত এরই মধ্যে প্রত্যাখ্যান করে আগামী ২৪ মে থেকে বিশ্ববিদ্যালয় খুলে দেওয়ার দাবি জানিয়েছেন শিক্ষার্থীদের একাংশ। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ রাখতেই নতুন এ সিদ্ধান্ত বলে মনে করেন তারা। তাদের সঙ্গে ১৯-২০ সেশনের শিক্ষার্থীরাও একাত্মতা জানিয়েছেন।

পড়ুন: শিক্ষা মন্ত্রণালয় ১ম ২য় ৩য় বর্ষের শিক্ষার্থীদের কথা ভুলে গেছে

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে আরবি বিভাগের শিক্ষার্থী আবুল কালাম আজাদ বলেন, ক্লাস শুরুর প্রথম দুমাসের মাথায় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ হয়ে গেছে। এর মাধ্যমে বিশ্ববিদ্যালয় জীবন শুরু আগেই আমরা শিক্ষার্থীরা ঘরবন্দি হয়ে পড়ি। আমাদের শিক্ষার্থীদের খোঁজখবর কেউ নিচ্ছে না। যেখানে আমাদের তৃতীয় সেসিস্টারে থাকার কথা সেখানে আমরা এখনো প্রথম সেমিস্টার শেষ করতে পারিনি।

তিনি বলেন, অনলাইন ক্লাসের এক বছর শেষে এখন শুনছি ইউজিসি অনলাইন পরীক্ষার অনুমোদন দিয়েছে। এটা আমাদের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে প্রহসনের শামিল। আমরা কর্তৃপক্ষের কাছে গুরুত্বহীন হয়ে পড়েছি। এ কারণে তারা যেকোনো সময় তাদের মনগড়া সিদ্ধান্ত আমাদের ওপর চাপিয়ে দিতে পারেন। দেশে সবকিছু স্বাভাবিকভাবে চলছে, শুধুমাত্র শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ছাড়া। এভাবে চলতে থাকলে দেশের শিক্ষাব্যবস্থা অচিরেই ভেঙে পড়বে।

বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের শিক্ষার্থী রিজওয়ান আহমেদ রায়হান বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়ার পর দীর্ঘ ১৮ মাস ধরে প্রথম সেমিস্টারে পড়ে আছি। এভাবে আর কতো? আমাদের কি ভবিষ্যৎ বলতে কিছু নেই? আমরা এ অবস্থার পরিবর্তন চাই। আমরা সশরীরে ক্যাম্পাসে ফিরতে চাই। সবকিছু স্বাভাবিক প্রক্রিয়ায় চলতে পারলে শুধুমাত্র দেশের শিক্ষা ব্যবস্থাটা বসে থাকতে পারে না।