প্রাথমিকের ২১ হাজার শিক্ষক পাচ্ছেন না প্রশিক্ষণের টাকা

শিক্ষক
প্রাথমিক বিদ্যালয়

সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে নিয়োগ পাওয়া ২১ হাজার শিক্ষক প্রশিক্ষণের পরও পুরো ভাতা পাননি বলে জানা গেছে। করোনাকালে তিন মাস সরাসরি প্রশিক্ষণ দিয়ে পরে তাদের অনলাইনে ক্লাস নেয়া হয়। গত বছরের জুলাই থেকে চলতি বছরের জুন পর্যন্ত এ প্রশিক্ষণ ভাতার পরিমাণ ৭৫ কোটি ৬০ লাখ টাকা বকেয়া হয়েছে বলে জানা গেছে।

শিক্ষকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, দেশের সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের কর্মদক্ষতা ও অভিজ্ঞতা বাড়াতে নিয়োগের পরপরই তাদের এক বছর মেয়াদি সিইনএড (সার্টিফিকেট ইন এডুকেশন) অথবা দেড় বছর মেয়াদি বুনিয়াদি ডিপিএড (ডিপ্লোমা ইন প্রাইমারি এডুকেশন) প্রশিক্ষণ দেয়া হয়। প্রাইমারি ট্রেনিং ইনস্টিটিউটগুলোতে (পিটিআই) এ প্রশিক্ষণ নেন তারা। ডিপিএড প্রশিক্ষণ চলার সময় প্রশিক্ষণার্থী শিক্ষকরা প্রতি মাসে তিন হাজার টাকা করে ভাতা এবং কিট অ্যালাউন্স বাবদ এককালীন ১৮ হাজার টাকা পেয়ে থাকেন। গত বছর ২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষের প্রশিক্ষণার্থীরা তিন মাস ক্লাস করার পরপরই মহামারি করোনার কারণে সরাসরি আর ক্লাস করতে পারেননি।

তবে সরাসরি না পারলেও অনলাইনে তাদের নিয়মিত ক্লাস করতে হয়েছে এবং স্বাস্থ্যবিধি মেনে প্রতি সপ্তাহে অ্যাসাইনমেন্ট তৈরি করে তা পিটিআইয়ে গিয়ে জমা দিতে হয়েছে। অনলাইনে ক্লাস করা এবং নিয়মিত অ্যাসাইনমেন্ট তৈরি করে পিটিআইয়ে পৌঁছে দিতে হতো বলে পিটিআই কর্তৃপক্ষ তাদের প্রশিক্ষণ ভাতার পাশাপাশি অতিরিক্ত অর্থ দেয়ার আশ্বাস দিয়েছিল। তবে অতিরিক্ত অর্থ দূরে থাক, নিয়মিত ভাতাই এখনো পাননি বলে অভিযোগ করেছেন প্রশিক্ষণার্থীরা।

শিক্ষকদের অভিযোগ, ২০২০ সালের জানুয়ারি থেকে জুন এই ছয় মাসের ভাতা দেয়া হলেও গত বছরের জুলাই-২০২০ থেকে চলতি বছরের এপ্রিল পর্যন্ত ১০ মাসের ভাতা তারা এখনো পাননি। যদিও করোনার মধ্যেই তারা সরাসরি পিটিআইয়ে গিয়ে চূড়ান্ত পরীক্ষায় অংশ নিয়েছেন। হঠাৎ চূড়ান্ত পরীক্ষা হওয়ার কারণে অনেক প্রশিক্ষণার্থীকে স্বাভাবিকের তুলনায় দ্বিগুণ-তিনগুণ বেশি টাকা দিয়ে সংশ্নিষ্ট পিটিআইয়ের আশপাশে বাসা ভাড়া করতে হয়েছে। কিন্তু পিটিআই কবে তাদের প্রাপ্য ভাতা দেবে, তা অনিশ্চিত।

প্রশিক্ষণার্থী শিক্ষকরা জানান, করোনাজনিত পরিস্থিতিতে অনলাইনে ক্লাস করার জন্য তাদের প্রত্যেককে ১৫ থেকে ২০ হাজার টাকার স্মার্টফোন, ওয়াই-ফাই কানেকশন, ওয়াই-ফাইয়ের মাসিক বিল, সংস্থাপন খরচ, অ্যাসাইনমেন্ট খরচ, বিজ্ঞান ব্যবহারিক খরচ, এক্সপ্রেসিভ আর্টের খরচ, বার্ষিক পরীক্ষার ফরম ফিলআপের টাকা ছাড়াও বার্ষিক পরীক্ষার সময় বাসা ভাড়া ও করোনার জন্য বাড়তি সুরক্ষা খরচ ইত্যাদি মিলিয়ে প্রায় ২০ হাজার টাকা ব্যয় করতে হয়েছে। কিন্তু এ পর্যন্ত প্রশিক্ষণার্থী শিক্ষকরা পেয়েছেন মোটের ওপর ছয় মাসের ভাতা। আর এ ক্ষেত্রেও কয়েকটি পিটিআইয়ের বিরুদ্ধে জালিয়াতির অভিযোগ এনেছেন তারা। তাদের কাছ থেকে ছয় মাসের স্বাক্ষর নেয়া হলেও এসব পিটিআইয়ে ভাতা দেয়া হয়েছে মাত্র তিন মাসের।

এ বিষয়ে বাংলাদেশ প্রাথমিক বিদ্যালয় সহকারী শিক্ষক সমিতির কেন্দ্রীয় সভাপতি মোহাম্মদ শামছুদ্দীন মাসুদ বলেন, ‘ডিপিএড প্রশিক্ষণার্থীদের ভাতা পাওয়া তাদের অধিকার। এ বিষয়ে আমরা নেপ মহাপরিচালক এবং প্রাথমিক শিক্ষা অধিদফতরের মহাপরিচালকের সঙ্গে কথা বলেছি। আশা করি, দ্রুতই তারা ভাতা পাবেন।’

এ বিষয়ে জাতীয় প্রাথমিক শিক্ষা একাডেমির (নেপ) মহাপরিচালক মো. শাহ আলম বলেন, ‘কিছু জটিলতার কারণে শিক্ষকরা প্রশিক্ষণ ভাতা পাননি। এ প্রশিক্ষণ মূলত ফেস টু ফেস দেয়া হবে। করোনা এসে যাওয়ায় প্রশিক্ষণ অনলাইনে দেয়া হয়েছে। এখন জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় একটি নীতিমালা করে দিয়েছে, করোনাকালে অনলাইনে প্রশিক্ষণ, সেমিনার করা যাবে। আশা করছি, খুব শিগগির শিক্ষকরা এ ভাতা পেয়ে যাবেন।’