চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়

বিশ্ববিদ্যালয়ে অনলাইন পরীক্ষা, যা ভাবছেন শিক্ষার্থীরা

অনলাইন পরীক্ষা
অনলাইন পরীক্ষায় ইতিবাচক ও নেতিবাচক, দুটো দিকই দেখছেন শিক্ষার্থীরা

করোনা মহামারীর কারণে গত বছরের মার্চ থেকে অন্যান্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ন্যায় বন্ধ রয়েছে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় (চবি)। এরপর ওই বছরের সেপ্টেম্বর থেকে নানান প্রতিকূলতার মধ্য দিয়ে অনলাইন ক্লাস নেওয়া শুরু হয় চবিতে। বছরের শেষে বিভিন্ন বর্ষের ফাইনাল পরীক্ষার সময় পেরিয়ে গেলেও বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পরীক্ষা নিয়ে এখনও কোন সিদ্ধান্তে আসতে পারেনি।  তবে সম্প্রতি বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশন (ইউজিসি) থেকে দেশের সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক পরীক্ষা অনলাইনে নেয়ার নীতিগত সিদ্ধান্তের কথা জানানো হয়েছে।

এই পরীক্ষা নিতে বেশ কয়েকটি পদ্ধতির কথা উঠে এসেছে। এগুলোর মধ্যে রয়েছে সৃজনশীল কাজ, বহুনির্বাচনী প্রশ্ন, নির্ধারিত সময় ধরে শ্রেণি পরীক্ষা (ক্লাস টেস্ট) ও মৌখিক পরীক্ষা নেওয়া। এসব পরীক্ষা নেওয়ার সময় শিক্ষার্থীদের ডিভাইসের (ল্যাপটপ, কম্পিউটার ও মোবাইল ফোন) ক্যামেরা ও মাইক্রোফোন চালু থাকতে হবে।

কিন্তু বিষয়টি নিয়ে কি ভাবছেন চবির শিক্ষার্থীরা। দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসের সঙ্গে আলাপকালে তারা এই উদ্যোগকে সাধুবাদ জানালেও বেশকিছু সীমাবদ্ধতার কথা তুলে ধরছেন। তাদের মতে, করোনায় এতক বছরেরও বেশি সময় ধরে ক্যাম্পাস বন্ধ থাকাতে অনেক শিক্ষার্থী মানসিকভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে। তাই আসন্ন ঈদ পরবর্তী সময়ে পরিস্থিতি এবং সার্বিক বিষয় মাথায় রেখে পরীক্ষা নেয়া উচিত। তবে অনলাইন পরীক্ষার ক্ষেত্রে ডিভাইস স্বল্পতা, দুর্বল ইন্টারনেট সংযোগ এবং বেশিমূল্যে ইন্টারনেটের ডাটা প্যাকেজের সীমাবদ্ধতার কথা বলছেন তারা।

এ বিষয়ে চবির আইন বিভাগের শিক্ষার্থী ইসরাফিল রনি বলেছেন, করোনাভাইরাস দেশের নানান অঙ্গনে ক্ষতি সাধনের পাশাপাশি স্থবির করে দিয়েছে দেশের শিক্ষাব্যবস্থাকে। এক বছরের অধিক সময় শিক্ষার্থীরা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকে দূরে থেকে কঠিন সময় পার করছে এবং অনেকেই মানসিকভাবে বিপর্যস্ত। এ ক্ষতি কাটিয়ে উঠার জন্য বিকল্প হিসেবে অনলাইন ক্লাস চালুর পর এখন অনলাইনে পরীক্ষা নেয়ার যে বিষয় তা সাধুবাদ জানাই। তবে এ ক্ষেত্রে আমি মনে করি কিছু এ্যাসাইনমেন্ট নিয়ে মৌখিক বেস মান নির্ধারণ তুলনামূলক ভালো হবেঅ এতে করে কারচুপির হার অনেকাংশেই হ্রাস করা করা যাবে।

রাজনীতি বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী সাদিয়া আফরোজ অনলাইন ক্লাস করেও ঠিকমতো অনেক কিছু বুজে উঠতে পারেননি। তিনি বলেন, অনলাইন ক্লাসে শিক্ষকরা কোর্স তো শেষ করাচ্ছে কিন্তু আমরা বুঝে উঠতে পারছিনা ঠিকভাবে। ক্যাম্পাস খুলে কিছুদিন ক্লাস নিয়ে তারপর পরীক্ষা নেয়া উচিত অফলাইনে।

লোকপ্রশাসন বিভাগের শিক্ষার্থী রুবাইয়া রাখি বলেন, অনলাইনে যে পরীক্ষা নেয়ার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে সেটিতে বেশিরভাগ শিক্ষার্থী সমস্যায় পড়বে। কারণ এটাতে তারা অভ্যস্ত নয়। তবে যে কোন উদ্যোগই শিক্ষাক্রম কিংবা অন্য যে কোন কাজে নেয়া প্রথমদিকে কঠিনই হয়। ধীরে ধীরে অভ্যস্ত হয়ে গেলে অনলাইন পরীক্ষাও দেখা যাবে সব শিক্ষার্থীদের আয়ত্তে চলে এসেছে।

তিনি আরও বলেন, দীর্ঘদিন ক্যাম্পাস বন্ধ থাকাতে শিক্ষার্থীরা মানসিকভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে। তাই যেভাবেই হোক ঈদ পরবর্তী সময়ে পরিস্থিতি এবং সার্বিক বিষয় ভেবে সুবিধাজনক উপায়ে পরীক্ষা নিয়ে নেয়া উচিত।

হিসাববিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী কামরুল হোসেন অনিক বলেন, অনলাইন এক্সামের অনেক সীমাবদ্ধতা রয়েছে। তার মধ্যে অন্যতম হলো, ডিভাইস প্রবলেম, দুর্বল ইন্টারনেট সংযোগ এবং ইন্টারনেটের ডাটা প্যাকেজ। যেই সীমাবদ্ধতাগুলো আমার ব্যক্তিগতভাবে আছে। এই সীমাবদ্ধতাগুলোর কারণে আমি ঠিকভাবে ক্লাস করতে পারিনি তাহলে এখন পরীক্ষা দিব কিভাবে?

তিনি বলেন, আমার মত আরো অনেক শিক্ষার্থীর এই সমস্যাগুলো আছে। আর আমরা সবাই জানি যে, পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের বেশিরভাগ শিক্ষার্থী গ্রামের। গ্রামে যে স্বল্পগতির ইন্টারনেট বা দূর্বল নেটওয়ার্ক ব্যবস্থা বিদ্যমান তা আমরা সবাই জানি। আর একটি কথা অনলাইন পরীক্ষার মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের মেধার মূল্যায়ন আমাদের দেশে সম্ভব নয়। এমতাবস্থায় আমার মতো আরো হাজারো শিক্ষার্থীর কথা বিবেচনা করে অনলাইনে পরীক্ষা না নেওয়ায় আহ্বান করছি। প্রয়োজনে স্বাস্থ্যবিধি মেনে ঈদের পরে বিশ্ববিদ্যালয় খুলে পরীক্ষা নেওয়ার অনুরোধ করছি। 

রাজনীতি বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী ইফতেখার রাহমান মাহি বলেন, আমি অনলাইন এক্সামের বিপক্ষে। কারণ অনলাইন এক্সামের প্রিপারেশন নিতে আমাদের বিশ্ববিদ্যালয় কত সময় নেয় তা আল্লাহ মালুম। আমরা এমনিতেই সেশনজটে আটকা পড়ছি, এতে দেরি করলে আরও সেশনজটে আটকা পড়ব ।

দ্বিতীয়ত, আমাদের বিভাগে মাত্র ৫০% ছাত্র ক্লাস করে। মাঝে মাঝে তারও কম করে। এখন বাকি ৫০% শিক্ষার্থী (যারা অনলাইন ক্লাস করতে পারে না) তারা কিভাবে অনলাইনে এক্সাম দিবে সেটিই চিন্তার বিষয়। আমাদের অনেকে অস্বচ্ছল শিক্ষার্থী আছে তাদের এখনো স্মার্টফোন দেওয়া হয়নি। তাছাড়া ইন্টারনেট প্রোবলেম তো আছেই।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক নৃবিজ্ঞান বিভাগের এক শিক্ষার্থী বলেন, পড়াশোনা করার যথেষ্ট ম্যাটেরিয়ালস/রিসোর্স ছিল না। অনলাইন ক্লাসের নামে একটা ২ চাকা ভাঙ্গা ভ্যানগাড়ি চলছে কোনোমতে।” আমাদের বিভাগের ১ম ও ২য় বর্ষের রেজাল্ট এখনও প্রকাশিত হয়নি। তাছাড়া অনার্স ফাইনাল ইয়ারের এক্সাম অর্ধেকে গিয়ে আটকে আছে। যারা রেজাল্টই পায়নাই তারা সাপ্লিমেন্ট/ইম্প্রুভ/ব্যাকলগ এর খবর জানেনা, এসবের তো প্রস্তুতি নিতে হবে।