শুধু হাসপাতালেই নয় চাপ বেড়েছে কবরস্থানেও, খোঁড়া হচ্ছে সারি সারি কবর

করোনার চাপ যে শুধু হাসপাতালেই বেড়েছে তেমনটি নয়। কবরস্থানেও এর প্রত্যক্ষ প্রভাব চোখে পড়ে। রাজধানীর রায়েরবাজার বধ্যভূমি স্মৃতিসৌধ সংলগ্ন কবরস্থানের বর্তমান চিত্র দেখে দেখলে করোনায় মৃত্যুর পরিস্থিতি অনেকটাই ধারণা করা যায়। 

সরেজমিনে দেখা গেছে, মূল ফটক দিয়ে কবরস্থানে প্রবেশ করতেই মসজিদের সামনে রাখা ভেকু মেশিন (এক্সকেভেটর)। এরপর হাতের বাম পাশ ফিরে রাস্তা ধরে উত্তরদিকে হাঁটলেই ৮ নম্বর ব্লক। করোনায় আক্রান্ত হয়ে মৃতদের দাফনের জন্য নির্ধারিত এই ব্লক।

দেখা গেছে, ৮ নম্বর ব্লকের দক্ষিণ পাশ থেকে মৃতদেহ কবর দেওয়া হচ্ছে। আর পূর্ব ও পশ্চিম পাশে আগে থেকেই খুঁড়ে রাখা হয়েছে সারি সারি কবর। দায়িত্বপ্রাপ্ত গোরখোদকরা ব্যস্ত সময় পার করছেন। কবর খুঁড়ে খুঁড়ে ক্লান্ত সবাই। ঠিকমতো কথা বলার সময়টুকুও পাচ্ছেন না তারা।

কাজের ফাঁকেই বললেন, করোনায় মৃতের সংখ্যা হঠাৎ করে বেড়ে যাওয়ায় মৃতদেহ আগের তুলনায় বেশি আসছে। তাই এত ব্যস্ততা। চাহিদা বেশি থাকায় ভেকু মেশিন (এক্সকেভেটর) দিয়ে মাটি খুঁড়ে রাখা হয়। আমরা শুধু বাকি কাজ সম্পন্ন করি। 

তথ্যমতে, রাজধানীতে করোনার সংক্রমণে মৃত ব্যক্তিদের দাফনের জন্য প্রথমে ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের (ডিএনসিসি) অঞ্চল-৩ এর খিলগাঁও তালতলা কবরস্থা;ন ব্যবহৃত হয়। পরবর্তীতে স্থান সংকুলান না হওয়ায় বর্তমানে ডিএনসিসির অঞ্চল-৫ এর রায়েরবাজার বধ্যভূমির। স্মৃতিসৌধ সংলগ্ন কবরস্থানের ৮ নম্বর ব্লকে দাফন করা হচ্ছে।

ডিএনসিসির সহকারী সমাজ কল্যাণ কর্মকর্তা আব্দুল হাই তালুকদার বলেন, ডিএনসিসির আওতায় ছয়টি কবরস্থান রয়েছে। এর মধ্যে রায়েরবাজার বধ্য ভূমি সংলগ্ন কবরস্থানের ৮ নম্বর ব্লকে করোনায় মৃত ব্যক্তিদের দাফন করা হচ্ছে। সংক্রমণে প্রাণহানি বেড়ে যাওয়ায় আগের চেয়ে চাপ বেড়েছে। যার কারণে আগে থেকেই কবর খুঁড়ে রাখা হচ্ছে। 

এ পরিস্থিতিতে এক অন্যরকম অভিজ্ঞতার মধ্য দিয়ে সময় কাটছে কবরস্থানের গোরখোদকদের। গোরখোদকরা জানান,  করোনার আগে প্রতিদিন চার থেকে পাঁচটি লাশ দাফনের জন্য আসত। যাদের অধিকাংশই ছিল স্বাভাবিকভাবে মৃত্যুবরণ করা মানুষ। কিন্তু করোনার পর প্রতিদিন প্রায় ১৫ থেকে ২০টি লাশ দাফন করতে হচ্ছে। যার মধ্যে প্রায় ১০ থেকে ১২টি লাশ করোনা আক্রান্ত হয়ে মারা যাওয়া ব্যক্তিদের। ৮ নম্বর ব্লকে মেশিন দিয়ে খুঁড়া কবর শাবল ও কোদাল দিয়ে ঠিক করেছিলেন গোরখোদক সিরাজ ভূঁইয়া।

তিনি বলেন, প্রতিদিন করোনায় মারা যাওয়া মানুষের লাশই বেশি আসছে। যার কারণে কোদাল দিয়ে মাটি খুঁড়ে কুলিয়ে উঠতে পারছি না। তাই ভেকু দিয়ে মাটি খুঁড়া হচ্ছে। আমরা শুধু কবর সাইজ করছি।

কবর পরিচর্চার কাজে নিয়োজিত আবুল কালাম বলেন, এখানে ২৮ জন গোরখোদক রয়েছেন। সবাই এই মুহূর্তে ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন। বছরের শুরুতে এই ব্লকে লাশ দাফনের পরিমাণ অনেক কম ছিল। কিন্তু এখন আবার বেড়েছে। তাছাড়া কবর পরিচর্যায় যারা নিয়োজিত তারাও বেশ ব্যস্ততার মধ্যেই রয়েছেন। নতুন কবরে ঘাস লাগানো, পানি দেওয়া, কফিন পোড়ানোসহ আনুষঙ্গিক কাজে ব্যস্ত সময় কাটছে।

রায়েরবাজার কবরস্থানের সিনিয়র মোহরার আব্দুল আজিজ বলেন, প্রথমদিকে করোনায় মৃতদের দাফন নিয়ে কিছুটা ভীতি কাজ করত। এখন আর সেটি নেই। এখানে যারা দায়িত্বপ্রাপ্ত রয়েছেন সবাই সর্বাত্মক চেষ্টা করেন যেন কবরস্থানে দাফন করতে আনা মৃতদেহের দাফন দ্রুততম সময়ের মধ্যে শেষ করা যায়।