মিষ্টি কম হলেও পুষ্টিগুণে সমৃদ্ধ বাঙ্গি

ফুটি, বাঙ্গী বা বাঙ্গি বা কাঁকুড় এক রকমের শশা জাতীয় ফল। ছোট এবং লম্বাটে জাতকে চিনাল বলা হয়। ফুটি বেশ বড় আকারের হয়, কাচা ফল সবুজ, পাকলে হলুদ রঙের হয় এবং ফেটে যায়। ফলের বাইরের দিকটা মিষ্টি কুমড়ার মত হালকা ডোরা কাটা খাঁজযুক্ত। খেতে তেমন মিষ্টি নয়, বেলে বেলে ধরনের। এর ভেতরটা ফাঁপা থাকে।

বাংলাদেশে এপ্রিল-মে মাস বাঙ্গির মৌসুম। এখন বাজার ভরপুর গ্রীষ্মের এই ফলে। রসাল ফলটির মিষ্টি কম হওয়ায় অনেকে খেতে আগ্রহ দেখায় না। কিন্তু পুষ্টিগুণে এর জুড়ি নেই। তাই বাঙ্গিকে অবহেলা নয়। বাঙ্গির পুরোটাই জলীয় অংশে ভরপুর। এটি ভিটামিন ‘সি’ ​শর্করা ও সামান্য ক্যারোটিন সমৃদ্ধ। চলুন জেনে নেওয়া যাক ফলটি খেলে কী কী উপকার হয়।

চট্টগ্রাম ডায়াবেটিক জেনারেল হাসপাতালের প্রধান পুষ্টি কর্মকর্তা হাসিনা আকতার জানান, গর্ভবতী মায়েদের জন্য খুব উপকারী বাঙ্গি। নিয়মিত বাঙ্গির শরবত খেলে খাবারে অরুচি, নিদ্রাহীনতা, আলসার ও অ্যাসিডিটি দূর হয়। তা ছাড়া এই ফলে নেই কোনো চর্বি বা কোলেস্টেরল। তাই বাঙ্গি খেলে মুটিয়ে যাওয়ার ভয় নেই একেবারেই। তিনি এর কয়েকটি উপকারিতার কথা জানিয়েছেন।

বয়স ধরে রাখে: বাঙ্গি ত্বকের বয়সের ছাপ দূর করে। এটি ত্বকের কোষ নষ্ট হয়ে গেলে তা ঠিক করতে সাহায্য করে। বাঙ্গির প্রোটিন কম্পাউন্ড ত্বককে করে সুন্দর। বাঙ্গি মধুর সঙ্গে মিশিয়ে ত্বকে লাগিয়ে ২০ মিনিট রেখে দিন। এভাবে নিয়মিত ব্যবহার করুন।

দূর করে ব্রণ, একজিমা: ব্রণ বা একজিমার সমস্যায় ভুগলে প্রতিদিন এক গ্লাস বাঙ্গির শরবত খান। এ ছাড়াও বাঙ্গি ভালো করে ব্লেন্ড করে ছেঁকে রসটুকু বের করে তা লোশনের মতো ব্যবহার করুন। এতে ব্রণ এবং একজিমার সমস্যা দূর হয়।

চুল পড়া কমায়: বাঙ্গিতে আছে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন ‘বি’। এর একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান ‘ইন্সনিটোল’, যা আমাদের চুল নতুন করে গজাতে সাহায্য করে এবং চুল পড়া প্রতিরোধ করে থাকে। তাই নিয়মিত বাঙ্গি খেলে চুলের অনেক উপকার পাওয়া যায়। এ ছাড়া ব্লেন্ড করা বাঙ্গি শ্যাম্পু করার পর চুলে কন্ডিশনারের মতো ব্যবহার করাও ভালো।

কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে: বাঙ্গিতে আছে প্রচুর পরিমাণে আঁশ বা ডায়াটারি ফাইবার, যা খাবার হজমে সাহায্য করে। কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে।

বাঙ্গির চাষাবাদ

গ্রীষ্মকালে বাংলাদেশের প্রায় সব এলাকায় বাঙ্গি জন্মে। শরীর ঠাণ্ডা রাখতে তরমুজের পর বাঙ্গি দ্বিতীয় তালিকায় রয়েছে। বাঙ্গিগাছ দেখতে অনেকটা শসা গাছের মতো, লতানো। অনেকে কাঁচা বাঙ্গি সবজি হিসেবে রান্না করে খেয়ে থাকে। ফল পাকলে হলুদ রঙ ধারণ করে।

বাঙ্গি মূলত পাকা ফলের সুমিষ্ট সৌরভের কারণে বিখ্যাত। একটু বেশি পেকে গেলে বাঙ্গি ফেটে যায়। তাই অধিকাংশ বাঙ্গিকে ফাটা দেখতে পাওয়া যায়। ফলের ওজন এক থেকে চার কেজি পর্যন্ত হতে পারে। এটি চাষের খরচ তুলনামূলক কম, আয় বেশি। তাই চাষিরা বাঙ্গি চাষে বেশ আগ্রহী।

জাত: বাংলাদেশে প্রধানত দুই জাতের বাঙ্গি দেখা যায়। বেলে ও এঁটেল বাঙ্গি। বেলে বাঙ্গির শাঁস নরম। খোসা খুব পাতলা, শাঁস খেতে বালি বালি লাগে। তেমন মিষ্টি নয়। অন্যদিকে এঁটেল বাঙ্গির শাঁস কচকচে, একটু শক্ত ও তুলনামূলক বেশি মিষ্টি।

জলবায়ু ও মাটি: বাঙ্গি চাষের জন্য শুষ্ক ও উষ্ণ জলবায়ু সবচেয়ে উপযোগী। উর্বর বেলে দোআঁশ ও পলি মাটি বাঙ্গি চাষের জন্য সর্বোত্তম। যেহেতু শিলাবৃষ্টি ও অতিবৃষ্টি বাঙ্গি চাষের জন্য উপযোগী নয়, সেহেতু বর্ষাকালে এ ফল চাষ করা যাবে না।

চারা রোপণ: জমিতে আড়াআড়ি চাষ ও মই দিয়ে বাঙ্গি চাষের জন্য জমি উপযুক্ত করে নিতে হবে। জাত ভেদে বাংলা সনের কার্তিকের মাঝামাঝি অর্থাৎ নভেম্বরে বপন করা হয় বাঙ্গির বীজ। আড়াই থেকে তিন মাসের মধ্যে গাছে ফল ধরতে শুরু করে। মাঘের শেষ অর্থাৎ ফেব্রুয়ারির শেষে ফলের দেখা মেলে।

প্রায় পাঁচ ফুট থেকে ৬ দশমিক ৬৭ ফুট অন্তর মাদা তৈরি করতে হবে। মাদা অবশ্যই চওড়া ও গভীর হতে হবে। প্রতি মাদায় চার থেকে পাঁচটি বীজ বপন সম্ভব। বীজ থেকে চারা গজানোর পর সুস্থ দুই-তিনটি গাছ রেখে বাকিগুলো তুলে ফেলতে হয়। যেহেতু বাঙ্গি গাছ লতানোভাবে বেড়ে উঠে, তাই ঘন গাছ না রেখে পাতলা রাখতে হবে। এ গাছের আয়ুষ্কাল খুবই কম। ফল ধরার দেড় থেকে দুই মাস পর্যন্ত ক্ষেত থেকে বাঙ্গি তোলা যায়।