বেস্টসেলার বই ও লেখক: পাঠকের বিপজ্জনক গতির নির্দেশক

দায় এড়ানো
মূল লেখায় যাওয়ার আগে কিছু দায় এড়িয়ে নিই। প্রথম কথা হচ্ছে, এই লেখায় কোনোভাবেই জনপ্রিয় অনলাইন শপ রকমারি ডটকমকে নেতিবাচকভাবে উপস্থাপন করা হয়নি। বরং গোটা লেখায় তাদের নিয়ে কোনো সমালোচনা নেই। আমি নিজেও রকমারির এখন ক্রেতা। পাঠকের দ্বারে বই পৌঁছে দিতে তাদের যে প্রচেষ্টা সেটা সাধুবাদ পাওয়া যোগ্য। লেখাটি মূলত বাঙালি পাঠকের রুচির দৈন্যতা নিয়ে। দ্বিতীয় কথা এই যে, এই লেখার দায় সম্পূর্ণ এই লেখকের। এই লেখাটি সম্পূর্ণ ব্যক্তি অনুভূতি ও চিন্তা। কারো উপর বিশ্বাসের দায় চাপাচ্ছি না।
 
জ্ঞানতাপস অধ্যাপক আবদুর রাজ্জাক স্যারের একটা কথা দিয়ে শুরু করি৷ তিনি বলেছিলেন, একটা সমাজ কোন দিকে যাইতাছে সেইটা বুঝনের লাইগা আপনি দেখবেন তারা কী খায় আর কী পড়ে। কী খায় সেটা দেখার জন্য যাইবেন কাঁচা বাজারে। আর কী পড়ে সেইটা দেখার জন্য যাইবেন লাইব্রেরিতে। (আহমদ ছফা : যদ্যপি আমার গুরু) মোটামুটি ভাব এটাই, ভাষা কিছুটা ভিন্ন। হুবহু উদ্বৃতি দিতে পারলাম না। রাজ্জাক স্যারের কথাটাকে মানদণ্ড ধরে বাংলাদেশর মানুষের বিশেষ করে যুবা-তুরণদের চিন্তার বিকাশ, দিক ও গতির অবস্থা কী সেটা বুঝার জন্য এবারের বই মেলায় ও রকমারিতে বেস্টসেলার বই ও বেস্টসেলার লেখকদের তালিকাটাই যথেষ্ট।
 
আজকে সকালে রকমারিতে ঢুকে তাদের বেস্টসেলার বই ও লেখকের তালিকাটা দেখলাম। তাতে একজন মাত্র লেখক রয়েছেন যাকে প্রকৃতই লেখক বলা যায়। এবং যার বই পড়ে জ্ঞানগত উন্নতি হবে। তিনি হচ্ছেন মুহিউদ্দীন আহমদ। দুঃখজন সত্য হচ্ছে তিনি তালিকার ৪ নম্বরে আছেন। তার উপরে আছেন আরিফ আজাদ। আমি আরিফ আজাদের বই পড়েছি৷ কিনে পড়ার মতো রুচি নেই৷ 'আরজ আলী সমীপে' বইটা পিডিএফ পড়েছি। 'প্যারাডক্সিক্যাল সাজিদ' বইটা হাতে নিয়ে পুরোটা পড়ার রুচি হয়নি। এতো নড়বড়ে ও দুর্বল গদ্য পড়তে সাধারণত আমার রুচি হয় না। এছাড়া তার 'বেলা ফুরাবার আগে' বইটা একজন উপহার দিয়েছিল সেটাও খানিকটা উল্টে দেখেছি৷ বলতে গেলে ‘পরকালের মোটিভেশনাল’ বই একটা৷ পরকালের মোটিভেশনাল বইকে খারাপভাবে দেখার সুযোগ নাই। বরং এটা দরকার রয়েছে। কিন্তু তার চাইতেও বড় মোটিভেশনাল কেতাব হচ্ছে কুরআন।
 
আরিফ আজাদের বইয়ের জনপ্রিয়তা এটাই প্রমাণ করে যে বাংলাদেশের মুসলমান সমাজ ইসলামের বেসিক জ্ঞানার্জনের জন্য কুরআন-হাদিস তো পড়েই না এমনকি ইসলামের প্রাথমিক যুগে রচিত মৌলিক কিতাবাদিও তারা পড়ে না। বলতে গেলে নামই শুনে নাই। এই নাম শুনে নাই এটার প্রমাণ এই লেখক নিজেই। কারণ আমি ক্যাম্পাসে (ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়) ধর্মতত্ত্বে পড়ুয়া অনেকের সাথেই ইসলামের নানা বিষয়ে ঘণ্টার পর ঘণ্টা আলাপ করেছি। তাদের দৈনতা আমাকে বিস্মিত করেছে, ব্যথিত হয়েছি। আমি এমনও পেয়েছি আল-হাদিসে অনার্স করছে কিন্তু ড. মুহাম্মদ ত্বহানের 'তাইসিরুল মুস্তালাহাল হাদিস' বইটা ‘টপ টু বটম’ পড়ে নাই। এমনকি হাদিস শাস্ত্র নিয়ে তার বেসিক ক্লিয়ার নাই। আরিফ আজাদের বই বিক্রি এতো হওয়ার বড় একটা কারণ এটা। মানে বাঙালি মুসলিমদের মধ্যে ইসলাম নিয়ে বেসিক ক্লিয়ার নাই। তাছাড়া রয়েছে আরিফ আজাদ যে যুক্তি দিয়েছে এগুলো বাঙালি মুসলিম সমাজের মাথায় আসেইনি; আসলেও তারা উপস্থান করতে পারেনি। তারা যখন দেখছিল আধুনিকতার মুখোমুখি দাঁড়িয়ে ইসলাম প্রশ্নবানে জর্জরিত তখন তাদের বিশ্বাসের দরজা দারুণ আঘাতের শিকার হয়েছে৷ যখন আরিফ আজাদ সেই আহত ইমানের পাশে তার একেবারেই নড়বড়ে যুক্তি নিয়ে অবতীর্ণ হয়েছে তখন তাকে গিলে খেয়ে ইমান তাজা করতে চেষ্টার কসুর করেনি। অথচ কুরআন বলছে, 'যখন তাদের সামনে আমার আয়াত পাঠ করা হয় তাদের ইমান বৃদ্ধি পায় এবং রবের প্রতি তাদের আস্থা দৃঢ় হয়।' (…)
 
তালিকায় তিন নম্বরে আছে মিজানুর রহমান আজহারী নামে একজন প্রসিদ্ধ ওয়াজেন। যিনি বেশ ভালো ওয়াজ করেন তবে প্রচুর বির্তকের জন্ম দিয়েছেন। হাদিসে আছে মহম্মদ স. বলেছেন, 'কিছু কিছু বক্তার বক্তব্যে সম্মোহনী ক্ষমতা প্রবল।' (মিশকাত) খেয়াল করার বিষয় হচ্ছে বক্তার বক্তব্যে সম্মোহনী ক্ষমতা বেশি থাকা মানেই সে সঠিক বিষয়টা এমন নয়। মিজানুর রহমান আজহারীর ওয়াজ আমি অনেক শুনেছি। তাকে বুঝতে চেষ্টা করা, তাকে স্টাডি করা থেকেই শুনেছি। তিনি বেশ সুরেলা কণ্ঠের মানুষ ও বক্তব্যে বেশ রসিয়ে সুরেলা কণ্ঠে মানুষকে আকর্ষণ করতে পারেন। তবে তার বক্তব্যের ভ্রান্তির দিক হলো তিনি যখন কুরআন বা হাদিসের আরবি এবারত বাংলায় বলেন সেটা বিকৃত করে ফেলেন। বলতে গেলো রং চড়িয়ে অনুবাদ করেন। যেটা করা ঠিক নয় কারণ এতে কুরআন ও হাদিসের অর্থের ভুল ব্যাখ্যার সূচনা হয়। তাছাড়া বক্তব্যের মধ্যে যখন কুরআন বা হাদিস থেকে তার বলা কথার প্রমাণ দেয়া দরকার তখন তিনি ইসলামি সঙ্গীত গেয়ে সেটার জরুরত মিটিয়ে দেন। যেটা পুরোপুরিই ভুল। এবার আসি তার বই নিয়ে। তার বই হয়তো সপ্তাহে খানেকের মধ্যে প্রকাশিত হয়েছে। তাই এখনও পড়া হয়নি। কিন্তু যারা পড়েছেন এমন দু একজনের সাথে আলাপ করেছি এবং বইটির রিভিউ পড়েছি। এতে যা বুঝেছি এটাও ইসলামি মোটিভেশনাল বই। তিনি বইয়ে কী বিষয়ে লেখেছেন, তার লেখার ধরন কী হতে পারে এবং তার জ্ঞানগত গভীরতা কত সেটা বুঝার জন্যই তার ওয়াজ নিয়ে উপরের পর্যালোচনা করলাম। বিভিন্ন সময় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ও সংবাদমাধ্যমে দেখেছি তার মাহফিলেও লাখ লাখ জমায়েত হতো। এরা তার ভক্ত। এদের বড় একটা অংশ স্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া যুবা-তরুণ। তারাই মূলত আজহারীর বইয়ের খদ্দের। আজহারী যে ধরনের ও যে মানের বক্তব্য দেন সেটাকে উচ্চমার্গের বলার সুযোগ নাই। এই যে উচ্চমার্গের না হওয়া এটা তার ব্যক্তির সংকট। এই সংকটের দায় কোনোভাবেই ইসলাম নিবে না। তার এই সংকট থেকে বইটি মুক্ত কি না আমি জানি না৷ তবে বুঝতে বাকী নেই যে, আজহারীর বইয়ের ক্রেতা মূলত কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়ুয়া তরুণ প্রজন্ম। এবং তারা আরিফ আজাদের বইয়ের ক্রেতাও বটে৷
 
তার মানে দাঁড়াচ্ছে বাংলাদেশের তরুণ প্রজন্ম ইসলাম জানার জন্য কুরআন-হাদিস সরাসরি অধ্যয়ন ও ইসলামের প্রাথমিক যুগে সালফে সালেহীনদের রচিত কিতাবাদি অধ্যয়নের চাইতে বেশি নির্ভরশীল হচ্ছে উক্ত বইগুলোর  উপর। তারা যে স্পিরিট থেকে উক্ত বইগুলো পড়ছে সেটা হচ্ছে ধর্মকে ভালোভাবে জানা। কিন্তু তারা সত্য উদ্দেশ্য নিয়ে যা পড়ছে এতে তারা ধর্মের বিশ্বাসকে যৌক্তিকতা থেকে অন্ধত্বে পরিণত করবে। যা ইতোমধ্যে শুরু হয়েছে। কুরআনের প্রথম নির্দেশ 'ইকরা' (সূরা আলাক)। এই পড়া বলতে কেবল ধর্মীয় পড়া নয়; পড়াটা ব্যাপকার্থে পড়া। তার একটা উদাহরণ হচ্ছে, বদর যুদ্ধে (ইসলামের প্রথম যুদ্ধ) যে সব অমুসলিম আটক হয়েছিল মহম্মদ স. তাদের কিছু লোকের মুক্তিপণ হিসেবে নির্ধারণ করেছি মুসলিম যুবকদেরকে শিক্ষা দেয়া। তার মানে জ্ঞান শিক্ষা সেটা অমুসলিমের কাছে হলেও করতে হবে। অন্য আরেকটি উদাহরণ হচ্ছে নবী স. একবার এক সাহাবীর বিয়ের মহর ধার্য করেছিলেন কুরআনের কিছু আয়াত শিক্ষা দেয়াকে। (তিরমিযি) ইসলাম এটার সমর্থন করে। কুরআনে নবীকে নির্দেশ দেয়া হয়েছে, 'আপনি জেনে রাখুন/ জ্ঞানার্জন করুন আল্লাহ ছাড়া কোনো ইলাহ তথা উপাস্য নাই।' (মুহাম্মদ : ১৯) তার মানে বিশ্বাসের মৌলিক যে ভিত্তি সেটাকেও জেনে করতেই নির্দেশ দেয়া হয়েছে। তাই বাঙালি মুসলিম তরুণদের মধ্যে ধর্মকে জানার যে স্পিরিট সেটা দারুণ ইতিবাচক কিন্তু তারা যে মাধ্যম থেকে জানছে সেটা তাদেরকে নির্মম নেতিবাচক বিশ্বাসী করে তুলছে এবং তুলবে। কারণ তারা ধর্মকে জানতে গিয়ে বিজ্ঞান, যুক্তি, অনুভূতি ও ধর্মের ভেদ ভুলে একেবারে জলকাদা করে ফেলছে। আরিফ আজাদ বা এই ধরনের লেখকদের বই পড়ে সেই জলকাদার দশা করাটা খুবই স্বাভাবিক। তাদের বই পড়ে আমি যেটা দেখেছি তারা বিশ্বাসকে সব সময়ই বিজ্ঞান ও যুক্তির নিরিখে মাপতে চেষ্টা করেছেন। এটা ভুলে গেলে চলবে না যে, বিজ্ঞান ও যুক্তি অনুভূতি শূন্য। আর ধর্ম হচ্ছে অনুভূতি ও বিশ্বাসের বিষয়। একটা উদাহরণ এই যে, নবী স. মেরাজে গিয়েছেন এর বৈজ্ঞানিক প্রমাণ উপস্থাপন করা সম্ভব নয়। বরং এটা নবীদের মোজেজা এটাই হচ্ছে বিশ্বাস। একইভাবে নবী স. হাতের ইশারায় চাঁদ দ্বিখণ্ডিত করেছেন এটাও বৈজ্ঞানিকভাবে প্রমাণ সম্ভব নয় কিন্তু মোজেজাগত দিক থেকে এটা একটা বিশ্বাস। নবী মেরাজ থেকে এসে প্রথমে আবু বকর রা. বলেছেন তিনি কোনো প্রশ্ন ও যুক্তি উত্থাপন ছাড়াই বিশ্বাস করেছেন।
 
এরপর তালিকায় আছে সাদাত হোসাইন। আমি তার লেখায় একদমই মুখ দিতে পারি নাই৷ আমার এই কথায় সাদাত ভক্তদের চেতে যাওয়ার কারণ নাই। প্রথমেই শরৎচন্দ্রের সাহিত্য নিয়ে জনৈক সমালোচকের একটা উদ্বৃতি দিই। সেটা হচ্ছে, শরৎচন্দ্র বাংলা সাহিত্যে টিকে যাবেন যদি না বাঙালি পাঠক সমাজের রুচির বিকাশ না হয়। মূলভাব এটাই ভাষা একটু হেরফের হতে পারে। সাদাত হোসাইন কিম্বা তার সমকালীন আর যে সমমনা লেখকগণ যা লেখছেন সেখানে আসলে জীবন বলে কিছু নাই৷ নিরেট ফ্যান্টাসিই তাদের লেখার উপাদান। এই ফ্যান্টাসি মানুষের মধ্যে আছে কিন্তু সেটা কালের খুবই ক্ষুদ্র সময়। অনেকটা সাময়িক নেশার। ঘোর কেটে গেলে যেটা আর থাকে না। সাদাত হোসাইনদের লেখার মান এটাই। নড়বড়ে গদ্য, অসংলগ্ন স্টোরি, সংলাপ, বাস্তবতা বিবর্জিত চরিত্র দিয়ে বই করেছে। তিনিও আছেন সেরা লেখকের তালিকায়। এই সাদাত হোসাইন ভক্ত হচ্ছে মূলত কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া প্রজন্ম।
 
অন্যদিকে আছে কিছু মোটিভেশনাল স্পিকারের বই। গত কয়েক বছরে বই মেলার ‘পরিবেশ দূষণ’ হচ্ছে এই ধরণের বইয়ের দরুন। কেবল সেই সেলিব্রেটির প্রতি জনপ্রিয়তা থেকেই মানুষ বই কিনছে। এই বইয়ের ক্রেতাও হচ্ছে স্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া যুবা-তরুণরা। এই বই কেনার ‍দুটি দিক রয়েছে। এক. তরুণ প্রজন্ম নিজের বিষয়ে হতাশ তাই মোটিভেশনার স্পিকারের বই পড়া তার জন্য প্রয়োজনীয়। যদি এটা হয়ে থাকে তাহলে সামনে আরেক নতুন বিপদ আসছে। কারণ এই বই পড়ে তো ডিপ্রেশন কমবেই না বরং বইয়ের প্রতি মন উঠে যাবে এবং তারা একটা বিপজ্জনক প্রজন্ম হয়ে উঠবে। দুই. এই বইগুলো কিনে নিরেট ব্যক্তির জনপ্রিয়তা ও শো অফ করার প্রবণতা থেকে। অন্যদিকে তালিকায় মুনজেরিন শাহেদ নামে একজন লেখক আছেন টপে। তিনিও মৌলিক কোনো লেখক নন। ভোকাবুলারি নিয়ে বই লেখেছেন৷ এই বইয়ের দরকার আছে এবং প্রয়োজনীয়ও বটে। কিন্তু এই বইগুলো যখন সর্বোচ্চ বিক্রিত বই হয় তখন একটু ভাবনার কারণ আছে। এই হলো বাঙালির তরুণ প্রজন্মের পাঠের তালিকা। এটা সংখ্যাগরিষ্ঠের হিসাব। এই প্রজন্ম ইতিহাস, দর্শন, বিজ্ঞান, সাহিত্য, অর্থনীতি, রাজনীতি নিয়ে দারুণ ‘অশিক্ষিত’ ও অসচেতন। উক্ত বিষয়ে অশিক্ষিত একটা প্রজন্ম মূলত জড়বস্তু। তাদের চেতনা বলে আসলে কিছু থাকে না। যাচাই করে দেখতে পারেন বাংলাদেশের তরুণ প্রজন্মের সংখ্যাগরিষ্ঠ অংশ মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস নিয়ে স্বচ্ছ ধারণা রাখে না। যে হাজার বছরের ইতিহাসের কথা আওড়ানো হয় সে বিষয়ে তাদের কোনো ধারণাই নাই।
 
এই লেখা শেষ করছি ছোট একটা ঘটনা বলে। সেটা হচ্ছে আমার অনার্স চতুর্থ বর্ষের 'তুলনামূলক সাহিত্য তত্ত্ব' কোর্সের ক্লাসের একটা ঘটনা। এখানে পাঠ্য ছিল ফরাসি লেখক আলবের ক্যমুর 'দ্য আউটসাইডার' উপন্যাসটি৷ 'দ্য আউটসাইডার'র সাথে তুলনা ছিল মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের 'দিবারাত্রির কাব্য' উপন্যাসের। এই দুটা উপন্যাস পড়তে গেলে অস্তিত্ববাদ ও অ্যাবসার্ডইজম নিয়ে মোটামুটি একটা পড়াশোনা থাকা লাগবে। তার সাথে সমকালীন ইয়োরোপের ও ভারতের ইতিহাস নিয়ে ধারণা থাকতে হবে। তা না হলে উপন্যাস দুটা কেবল পড়াই হবে। লেখক কী নিয়ে এবং কেন লেখেছেন সেটা অজানাই থাকবে। হয়েছেও তাই। কোর্স টিচার যেমন পারেননি অস্তিত্ববাদ ও অ্যাবসার্ডইজম বুঝাতে তেমন ছাত্ররাও শতভাগ সফলতার সাথে ব্যর্থ হয়েছে এসব বুঝার ক্ষেত্রে। কিন্তু পরিক্ষার খাতায় মার্ক তারা ভালো পাইছে। এই রহস্যের কারণ সবার জানা।
 
বাংলাদেশের মানুষের ধর্ম নিয়ে যে উগ্রানুভূতি সেটা ভারত, পাকিস্তানের মুসলিম বাদের বিশ্বের আর কোনো মুসলিম সমাজের নেই। দেশের ইতিহাস নিয়ে তো আরও মূর্খ। মূর্খতার পরিমাণ কত সেটা বুঝার জন্য রাজনৈতিক নেতাদের বক্তব্য শুনলেই স্পষ্ট ধারণা পাবেন। একই সাথে দর্শন চর্চা বাংলাদেশে কতটা গরিবানা হালতে আছে সেটা এই লাইনে যে এক কদম দিয়েছে সেও জানে। বাংলাদেশে ধর্ম শিক্ষার অবস্থা আরও খারাপ। মাদ্রাসা শিক্ষা বলতে যে কাঠামো আছে এই কাঠামো ধর্ম সম্পর্কে প্রচুর বিভ্রান্তির জন্ম দিয়েছে। ইসলামের শিক্ষার প্রসার করলেও যে ধরনের বিভ্রান্তির জন্ম দিয়েছে সেটা মারাত্মক।
 
বই মেলা ও রকমারি ডটকমের এই বেস্টসেলার বই ও লেখকদের নিয়ে যে আলাপটা দিলাম এটা নিয়ে ভাবনা আমাদের খুবই কম। বিশেষ করে কেন এই প্রবণতা বৃদ্ধি পাচ্ছে সেটা নিয়ে নতুন করে আলাপ আলোচনা দরকার রয়েছে। সেটা হয়নি। কিন্তু এই গতিটা যে বিপজ্জনক দিকে যাচ্ছে সেটা একটু বুদ্ধি খাটালেই বুঝতে পারবেন।
 
লেখক: সাংবাদিক ও লেখক
ই-মেইল: sadikiu099@gmail.com