বাংলাদেশে ক্যারিয়ারের দুটি গুরুত্বপূর্ণ অপশন

শিক্ষক
প্রফেসর ড. মু. আলী আসগর

‘ক্যারিয়ার’ অর্থ কীভাবে কোন ব্যক্তি তার জীবন অতিবাহিত করবেন বা কোন পেশায় কাজ করবেন। সব মানুষের কাছে সব পেশা ভালো লাগবে না- এটাই স্বাভাবিক। আমার বিবেচনায় বাংলাদেশের শিক্ষার্থী ও উচ্চশিক্ষিত যুবসমাজের ক্যারিয়ারের অন্যতম দুটি গুরুত্বপূর্ণ অপশন হলো -

ক) উচ্চশিক্ষার (এমএস, পিএইচডি) জন্য স্কলারশিপ নিয়ে বিদেশি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি;
খ) বিসিএস ক্যাডার

বিদেশে উচ্চশিক্ষা

বাংলাদেশের মেধাবী শিক্ষার্থীদের অধিকাংশের মধ্যে উচ্চশিক্ষার (এমএস, পিএইচডি) জন্য স্কলারশিপ নিয়ে বিদেশী বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি বিষয়ে বেশ কিছু ভ্রান্ত ধারণা আছে, যেমন-

১) বিদেশে পড়াশুনায় বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক হতে হবে;

২) বিদেশে পড়াশুনা করতে অনেক টাকা খরচ হবে।

৩) খুব ভালো রেজাল্ট থাকতে হবে।

আমি স্পষ্টভাবে বলছি, আমি যখন জাপান সরকারের মনবুশো স্কলারশিপ নিয়ে জাপানে এমএস ও পিএইচডি করতে যাই, তখন আমি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ছিলাম না এবং আমার কোন টাকা খরচ হয়নি। আমাকে জাপান সরকার যাওয়ার জন্য বিশ্বের অন্যতম সেরা এয়ারলাইন্সের টিকেট প্রেরণ করেছিলেন এবং আসার প্লেন খরচ দিয়েছিলেন। জাপানে আমার টিউশন ফি দিতে হতো না এবং আমি প্রতিমাসে জাপান সরকারের মনবুশো স্কলারশিপ ১৮৪,০০০ ইয়েন (বর্তমান হিসেবে বাংলাদেশী টাকায় ১ লক্ষ ৪০ হাজারেরও অধিক টাকা) পেতাম।

বর্তমানে জাপান, অস্ট্রেলিয়া, চীন, দক্ষিণ কোরিয়া, মালয়েশিয়া, জার্মানিসহ বেশ কিছু দেশ বিদেশি শিক্ষার্থীদের উচ্চশিক্ষার (এমএস, পিএইচডি) জন্য স্কলারশিপ দিচ্ছে। এখন প্রশ্ন হলো বিদেশে উচ্চশিক্ষার জন্য মানদণ্ড (Criteria) কি?

বিদেশে উচ্চশিক্ষার জন্য মানদণ্ড হলো —

১) স্নাতক বা স্নাতকোত্তরে জিপিএ ৪-এর মধ্যে ৩.৫ থেকে ৩.৭৫ পয়েন্ট (দেশভেদে ভিন্নতা আছে);

২) আইএলটিএস স্কোর ৭ থেকে ৭.৫ (দেশভেদে ভিন্নতা আছে; আমি আমার Facebook Page https://www.facebook.com/DrMdAliAsgarShanto এ IELTS সম্পর্কে পরবর্তীতে বিস্তারিত আলোচনা করব);

৩) ২/১ টি মোটামুটি ভালো মানের গবেষণা প্রবন্ধ (তবে ২/১টি দেশে এমএস অধ্যয়নের ক্ষেত্রে প্রয়োজন হয় না);

৪) সাধারণত বয়স ৩৫ বা ৩৫ এর কম হতে হবে।

বিসিএস

বর্তমানে বিসিএস নিয়ে প্রচণ্ড আগ্রহ দেখে বুঝতে অসুবিধা হয় না, অধিকাংশ স্নাতক লেভেলে পড়ুয়া শিক্ষার্থী ও শিক্ষিত যুবসমাজের ‘এইম ইন লাইফ’ এর তালিকায় বিসিএস এখন সবার শীর্ষে। কে, কীভাবে পড়াশোনা করে টিকেছেন, কাকে কতটা তীব্র লড়াই করতে হয়েছে- সবই এখন নিউজ আইটেম।

বিসিএস প্রস্তুতিতে যা করণীয় -

১) যারা অনার্স প্রথম বর্ষে পড়ছে, তাদের উচিত নিজ একাডেমিক বিষয়কে অবহেলা না করে ও অপ্রয়োজনীয় কাজে সময় নষ্ট না করে প্রস্তুতি শুরু করা। তবে যারা অন্যান্য বর্ষে পড়ছে, তাদের অবশ্যই অতিরিক্ত পরিশ্রম করতে হবে। প্রবাদ আছে, ‘সময়ের এক ফোঁড় অসময়ের দশ ফোঁড়”। প্রথমেই বিসিএসের প্রিলিমিনারি ও লিখিত পরীক্ষার সিলেবাসটা খুব ভালো করে পড়ে প্রস্তুতি শুরু করতে হবে।

২) গাইডকে কম গুরুত্ব দিয়ে বিসিএস সিলেবাস সংশ্লিষ্ট বেসিক বইগুলো বিভাগের একাডেমিক পড়ার পাশাপাশি পড়াটা গুরুত্বপূর্ণ। যেমন নির্বাচন করে ক্লাস সিক্স টু ক্লাস টেন এর বোর্ডের বইসহ এইচএসসি এর পৌরনীতি ও কম্পিউটার বই মনোযোগ সহকারে পড়াটা আবশ্যক।

৩) কোচিং সেন্টারে বা টিউশনে ইংরেজি, গণিত বা বিজ্ঞান পড়ালে তা বিসিএস প্রস্তুতিতে নিজেরও কাজে লাগবে এবং একই সাথে বিসিএস ভাইভায় কথা বলার আড়ষ্টতা কাটবে।

৪) স্নাতক অনার্স প্রথম বর্ষে ভর্তির শুরু থেকে বা স্নাতক অনার্স ভর্তির যত শীঘ্র সম্ভব ভালো মানের বাংলা ও ইংরেজি দৈনিক পত্রিকা নিয়মিত মনোযোগ সহকারে পড়ে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য খাতায় নোট রাখলে বাংলাদেশ বিষয়াবলী ও আন্তর্জাতিক বিষয়াবলী প্রস্তুতিতে ভিত (Base) তৈরি করতে সহায়ক হবে। পাশাপাশি বিবিসি বাংলা খবর ও বিবিসির বিশ্লেষণধর্মী আন্তর্জাতিক নিউজ এই প্রস্তুতিতে কাজে লাগবে।

৫) বিসিএস সিলেবাস অনুযায়ী ইংরেজি গ্রামার ও লিটারেচার প্র্যাকটিসের পাশাপাশি ইংরেজি শব্দভাণ্ডার (vocabulary) নিয়মিত বৃদ্ধি করাটা জরুরি। ইংরেজি পত্রিকা থেকে প্রতিদিন অন্তত ৫টি Words (প্রত্যেকটির Synonyms and Antonyms সহ) মেমোরাইজ করে নোট খাতায় লিখে রাখতে হবে এবং শেখা শব্দগুলো পরে পুনরায় প্র্যাকটিস করতে হবে।

৬ ) বাংলা সাহিত্য ও ইংরেজি লিটারেচারের কবি ও সাহিত্যিকদের পরিচিতি ও বইগুলোর নাম ইন্টারনেটের মাধ্যমে সংগ্রহ করে নোট খাতায় লিখে বারবার চর্চা করতে হবে।

বিসিএস প্রস্তুতিতে গুরুত্বপূর্ণ বইগুলো —

বিসিএস প্রস্তুতিতে কিছু মৌলিক বই আছে। যেমন-

১) অসমাপ্ত আত্মজীবনী (শেখ মুজিবুর রহমান)
২) লাল নীল দীপাবলি (ড. হুমায়ুন আজাদ)
৩) বিদ্যাকোষ; বাংলা ভাষার ব্যাকরণ ও নির্মিতি (ড আবুল কালাম মনজুর মোরশেদ)
৪) Applied English Grammar and Composition (P. C. Das; ভুল এড়ানোর জন্য ভারতের অরিজিন্যাল বইটি বেশী উপকারী)
৫) A Passage to the English Language (S. M. Zakir Hussain)
৬) বিশ্ব রাজনীতির ১০০ বছর (ড. তারেক শামসুর রেহমান)
৭) বাংলাদেশের ইতিহাস (১৯০৫-১৯৭১) লেখক ড. আবু মো. দেলোয়ার হোসেন
৮) নয়া বিশ্বব্যবস্থা ও সমকালীন আন্তর্জাতিক রাজনীতি (ড. তারেক শামসুর রেহমান)।

খ্যাতিমান Mentor Myron Sta. Ana উক্তি করেছেন, "A good plan is a success half-done whereas a bad plan is a possible failure in progress." অর্থাৎ একটি সুন্দর পরিকল্পনা সাফল্য সুসম্পন্নের অর্ধেক; পক্ষান্তরে খারাপ পরিকল্পনা সাফল্যের পথে ব্যর্থতার কারণ হয়ে দাঁড়ায়। কোন কঠিন কাজে সফল হতে হলে, নিজের সর্বোচ্চ দিয়েই তা অর্জন করতে হয়। যথাসময়ে সঠিক তথ্য সমৃদ্ধ পন্থায় ক্যারিয়ার প্ল্যানিং করতে পারলে ও প্ল্যান অনুযায়ী কঠোর পরিশ্রম করলে জীবনে সফল হওয়ার সম্ভাবনা ১০০%। এটি আমার হৃদয়ের দৃঢ় বিশ্বাস।

লেখক: ক্রপ সায়েন্স এন্ড টেকনোলজি বিভাগ, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়