পঞ্চাশে ক্যাম্পাস সাংবাদিকতার আঁতুড়ঘর জাবিসাস

জাবিসাস
জাবিসাসের বিশেষ লোগো

স্বাধীনতার সারথী জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়। বাঙ্গালী জাতির সর্বশ্রেষ্ঠ অর্জন মুক্তিযুদ্ধের সমকালীন প্রতিষ্ঠিত এই উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানটি দেশে অনেক কিছুর প্রবক্তা। ধর্ষণবিরোধী আন্দোলন, নারীর স্বাধিকার আন্দোলন, দুর্নীতি বিরোধী সামাজিক আন্দোলনসহ বিভিন্ন সময়ের পরিবেশ রক্ষা আন্দোলনের চারণভূমি ছিলো এই সবুজ ক্যাম্পাস। এসব অর্জনের পেছনে রয়েছে একটি সংগঠনের অনবদ্য অবদান। সেটি হচ্ছে স্বাধীন বাংলাদেশের প্রথম ক্যাম্পাস ভিত্তিক সাংবাদিক সংগঠন ‘জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় সাংবাদিক সমিতি (জাবিসাস)’।

১৯৭২ সালের ৩ই এপ্রিল। নতুন দেশে নতুন ক্যাম্পাস গড়ার প্রত্যয়ে যখন ব্যস্ত প্রশাসন তখন সাতজন ছাত্রের উদ্যোগে প্রতিষ্ঠিত হয় এই সংগঠনটি। বিশ্ববিদ্যালয়ের আল বেরুনী হল ক্যান্টিনের পাশে কয়েকটি চেয়ার ও টেবিল নিয়েই যাত্রা শুরু। সভাপতি পরিসংখ্যান বিভাগের ১ম ব্যাচের রাশেদ আহমেদ আলী, সম্পাদক একই ব্যাচের অর্থনীতি বিভাগের আবুল কাসেম। এই প্রচেষ্টায় সহযোগিতা করেছিলেন তৎকালীন উপাচার্য বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ জিল্লুর রহমান সিদ্দিকী। সেদিনের সেই চিত্র যেন আজ শুধুই স্মৃতি। বর্তমানে বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-শিক্ষক কেন্দ্রে জাবিসাসের রয়েছে দৃষ্টিনন্দন কার্যালয়।

সর্বজনের বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিবাচক ও নেতিবাচক সকল খবরাখবর জানার অধিকার জনগণের রয়েছে। কিন্তু প্রতিষ্ঠানের প্রতি সংকীর্ণ ভালোবাসা জবাবদিহিতার পথ রুদ্ধ করে দিতে চায়। বিশ্ববিদ্যালয়ের অংশীজনদের ইচ্ছানুসারে ‘নিজেদের নেতিবাচক বিষয়গুলো উপস্থাপন করা যাবে না। এতে মানহানি ঘটবে-লোকে খারাপ বলবে’। এ প্রচলিত মিথ ভেঙ্গে সংগঠনটি সাহসের সাথে সত্যকে তুলে ধরেছে। তারা বারবার প্রমাণ করেছে ‘সত্য যত তিক্তই হোক তা বলতে হবে দেশ ও জাতির কল্যাণে’।

জাবিসাস শুরু থেকেই সবকিছুর উপর পেশাদারিত্বকে প্রাধান্য দিয়েছে। কোন এজেন্ডা সৃষ্টি কিংবা বাস্তবায়ন নয় বরং সংগঠনটির কার্যক্রমে ফুটে উঠেছে সততার সাথে সত্যকে তুলে ধরার দীপ্ত প্রয়াস। এই সাংবাদিক সংগঠনটি উদাহরণ সৃষ্টি করেছে কিভাবে মোকাবেলা করতে হয় সুবিধাবাদী শ্রেণীকে, কিভাবে দাড়াতে হয় বঞ্চনার শিকার মানুষের পাশে। পড়াশুনার পাশাপাশি সংগঠনটির প্রত্যেক সদস্য এখনও ‘সাদাকে সাদা বলার সংগ্রামটুকুই করে যাচ্ছেন।’ স্রোতের বিপরীতে দাঁড়িয়ে অকপটে বলছেন নানা অনিয়মের কথা।

সূচনালগ্ন থেকে সংগঠনটি পরিচালিত হয়ে আসছে গণতান্ত্রিক চেতনায়। এই পর্যন্ত ৪০টি কার্যনির্বাহী কমিটি গঠিত হয়েছে সদস্যদের ভোটে। যা দেশের ক্যাম্পাস সাংবাদিকতা ও নেতৃত্ব বাছাইয়ে অনন্য নজির। এখান থেকে সাংবাদিকরা বর্তমানে দেশে-বিদেশে বড় বড় মিডিয়ায় নেতৃত্ব দিচ্ছে। সংগঠনটি সফলতার মূলে ও যোগ্য নেতৃত্ব তৈরিতে বিরাট ভূমিকা রাখছে। বর্তমানে সংগঠনটির সাবেক সদস্যবৃন্দ দেশ ও আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমগুলোর উচ্চপদে কর্মরত রয়েছে।