স্কুল-কলেজের এমপিও নীতিমালা প্রকাশের দাবিতে সংবাদ সম্মেলন

সংবাদ সম্মেলন

অবিলম্বে স্কুল ও কলেজের এমপিও নীতিমালা প্রকাশ এবং চলতি অর্থবছরে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্তির দাবিতে সংবাদ সম্মেলন করেছে নন-এমপিও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান শিক্ষক-কর্মচারী পরিষদ। আজ সোমবার (২২ মার্চ) দুপুরে ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির সাগর-রুনী মিলনায়তন অনুষ্ঠিত সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন সংগঠনের আহবায়ক শরীফুজ্জামান আগা খান।

এসময় উপস্থিত ছিলেন, যুগ্ম আহ্বায়ক এম এ বারী তালুকদার, আবু বক্কর মোঃ এরশাদুল হক, মোঃ শফিকুল ইসলাম, মেহেদী হাসান জুয়েল, মাহবুবুর রহমান, হারুন-অর-রশিদ প্রমুখ।

সংবাদ সম্মেলনে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান শিক্ষক-কর্মচারী পরিষদের পক্ষ থেকে বিদ্যমান বাস্তবতার প্রেক্ষিতে আমরা নীতিমালা প্রণয়নে ৬ দফা সুপারিশ শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের উদ্দেশ্যে পেশ করা হয়। সুপারিশগুলো হচ্ছে-

১) শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে এমন একটি অ্যাপ চালু করা যাতে বাংলাদেশের মানচিত্রের কোন স্থানে ক্লিক করলে ঐ স্থানে নতুন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান স্থাপন করা যাবে কি যাবে না তা নির্দেশ করবে।

২) প্রতি শ্রেণির ন্যূনতম কাম্য শিক্ষার্থী যোগ করে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ন্যূনতম কাম্য শিক্ষার্থী নির্ধারণ। সেই সাথে কোন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ন্যূনতম সংখ্যক শিক্ষার্থী নির্ধারণের পাশাপাশি সর্বোচ্চ সংখ্যক শিক্ষার্থীর সীমা নির্ধারণ।

৩) জাতীয় শিক্ষানীতি ২০১০-এ প্রাথমিক শিক্ষার মেয়াদ ৫ বছর থেকে বৃদ্ধি করে ৮ বছর অর্থাৎ ৮ম শ্রেণি পর্যন্ত সম্প্রসারণের প্রস্তাব করা হয়েছে। সে প্রেক্ষিতে নিম্ন মাধ্যমিক বিদ্যালয় (৬ষ্ঠ-৮ম) এমপিওভুক্তির ক্ষেত্রে সহজ সিদ্ধান্তে আসা।

৪) একটি শ্রেণি থেকে পরবর্তী উচ্চতর শ্রেণিতে শিক্ষার্থীর সংখ্যা কিছুটা কমে। সে কারণে মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে জেএসসি শিক্ষার্থী ও পরীক্ষার্থীর থেকে এসএসসির শিক্ষার্থী ও পরীক্ষার্থীর কাম্য সংখ্যা কিছুটা কম রাখা।

৫) মফস্বলে হাইস্কুলে নবম-দশম শ্রেণিতে মানবিক শাখার শিক্ষার্থীর সংখ্যা সবচেয়ে বেশি। এরপর ব্যবসায় শিক্ষা শাখার শিক্ষার্থী। সবচেয়ে কম শিক্ষার্থী বিজ্ঞান শাখায়। এই বাস্তবতায় কলেজে মানবিক, ব্যবসায় শিক্ষা ও বিজ্ঞান শাখার ন্যূনতম শিক্ষার্থী নির্ধারণ।

৬) স্বীকৃতির মেয়াদ ১০ বছর অতিক্রান্ত হলে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বিশেষ বিবেচনায় এমপিওভুক্তি।

এ সময় সংগঠনের আহবায়ক শরীফুজ্জামান আগা খান বলেন, ২০১৯ সালে নতুন এমপিওভুক্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের তালিকা প্রকাশের অনুষ্ঠানে শিক্ষামন্ত্রী প্রতিবছর এমপিওভুক্তির ঘোষণা দেন। কিন্তু ২০২০ সালে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্ত করা হয়নি। চলতি বছর ১ জানুয়ারি বই বিতরণ অনুষ্ঠানে শিক্ষামন্ত্রী ঐ মাসেই এমপিও নীতিমালা প্রকাশ করে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্তির আশ্বাস দিয়েছিলেন। কিন্তু এখনও স্কুল ও কলেজের এমপিও নীতিমালা প্রকাশ ও আবেদন আহ্বান করা হয়নি। স্বীকৃতিপ্রাপ্ত নন-এমপিও স্কুল ও কলেজের শিক্ষক-কর্মচারীরা অধীর আগ্রহে এমপিও নীতিমালা প্রকাশের অপেক্ষায় রয়েছেন। আমরা অবিলম্বে এমপিও নীতিমালা প্রকাশ করে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্তির দাবি জানাচ্ছি। এক্ষেত্রে এমপিওভুক্তির মান নির্ধারক সূচকে কি সংখ্যক সরকারি ও এমপিওভুক্ত প্রতিষ্ঠান উত্তীর্ণ হতে পারছে না সেই হিসাবটাও সামনে রেখে বাস্তবসম্মত সিদ্ধান্ত গ্রহণের অনুরোধ করছি।

তিনি আরো বলেন, ২০১৮ সালে এমপিও নীতিমালা প্রকাশিত হলে ৯ হাজার ৬১৫টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্তির আবেদন করে। এর মধ্যে ২ হাজার ৭৩০টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্ত হয়। এমপিও নীতিমালা নির্ধারিত কাম্য শিক্ষার্থী, পরীক্ষার্থী এবং পাশের হার পূরণ করতে না পারা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষক-কর্মচারী ও ম্যানেজিং কমিটির সদস্যরা বিগত দুই বছর নীতিমালার কাক্সিক্ষত মান অর্জনের জন্য যথাসাধ্য চেষ্টা করেছেন। এই তিনটি সূচকের ভিতর পাশের হারের জন্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের দায় বর্তালেও শিক্ষার্থী ও পরীক্ষার্থীর সংখ্যাবৃদ্ধি পুরোপুরি প্রতিষ্ঠানের আয়ত্তে নেই। সর্বপ্রকার প্রচেষ্টা সত্ত্বেও কোন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ২০২১ সালের নীতিমালায় উল্লেখিত কাক্সিক্ষত শিক্ষার্থী ও পরীক্ষার্থীর সংখ্যা পূরণ করতে না পারলে ভবিষ্যতে আর এই দুই শর্ত পূরণ করতে পারবে কিনা সন্দেহ। এমতাবস্থায় এই প্রশ্ন সামনে আসে, কাম্যমান অর্জন করতে না পারা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান শুকিয়ে মারা পড়বে নাকি বিকল্প কোন ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে?

তিনি বলেন, শিক্ষা মন্ত্রণালয় এবং সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন দপ্তরের পলিসি ও পরিকল্পনার ওপর বহুলাংশে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের মান নির্ভর করে। আমরা উদ্বেগের সাথে লক্ষ্য করছি, শিক্ষা মন্ত্রণালয় অতীতে যত্রতত্র শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান স্থাপনের অনুমতি দিয়েছে এবং এখনো দিয়ে চলেছে। নতুন কোন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান স্থাপিত হলে স্বাভাবিকভাবেই পার্শ্ববর্তী শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থী সংখ্যা হ্রাস পায়। এলাকাবিশেষে অতিরিক্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান অনুমোদন দেওয়ায় এমপিওপ্রত্যাশী শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের জন্য নির্ধারিত শিক্ষার্থী ও পরীক্ষার্থীর কাম্যমান অর্জন করা সম্ভব হয়ে উঠছে না। একদিকে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান স্থাপনে বেহিসাবী অনুমতি অন্যদিকে নন-এমপিও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের জন্য নীতিমালায় নির্দেশিত শিক্ষার্থী ও পরীক্ষার্থীর উচ্চমানের যূপকাষ্ঠে আমরা বলি হচ্ছি। একটি উল্লেখযোগ্য সংখ্যক নন-এমপিও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এখনো বিল্ডিং পায়নি। প্রতিষ্ঠাকালীন দুর্বল অবকাঠামো শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের আকর্ষণ করতে পারছে না।

শরীফুজ্জামান আগা খান বলেন, আমরা মুজিববর্ষের কালপর্ব অতিক্রম করছি। বঙ্গবন্ধু আজীবন বঞ্চিত-অবহেলিত মানুষের পক্ষে কথা বলেছেন, তাদের মুক্তির জন্য লড়াই করেছেন। দুখী মানুষের মুখে হাসি ফুটাতে চেয়েছেন। নন-এমপিও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষক-কর্মচারীরা দীর্ঘ ১৫-২০ বছর চরম অবহেলা ও বঞ্চনার শিকার। দুঃখ-কষ্ট ও অসম্মানের দরুণ আমাদের মুখে হাসি নেই। আমরা মুজিববর্ষে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্তির একটি সামগ্রিক সমাধান প্রত্যাশা করি। তাহলেই কেবল আমাদের মুখে হাসি ফুটবে।