করোনায় বাংলাদেশ ভেরিয়েন্টের শঙ্কা, ভাবাচ্ছে গরম আবহাওয়া

করোনা
কোভিড-১৯

দেশে হু হু করে বাড়ছে করোনা সংক্রমণ। শঙ্কা দেখা দিয়েছে পুরনো চিত্র ফেরার। বিজ্ঞানী ও গবেষকরা বলছেন, বাংলাদেশে হঠাৎ করেই এই করোনা সংক্রমণের প্রধান কারণ হলো গরম আবহাওয়া। এছাড়া যুক্তরাজ্যের পরিবর্তিত ধরন বা ইউকে ভেরিয়েন্ট দেশে দ্রুত সংক্রমিত হওয়ার ক্ষমতা ও স্বাস্থ্যবিধি অগ্রাহ্য করে অবাধ চলাফেরাকেও দায়ী করছেন বিশেষজ্ঞরা। এ অবস্থা চলতে থাকলে ‘বাংলাদেশ ভেরিয়েন্ট’ও তৈরি হতে পারে বলে শঙ্কা অণুজীববিজ্ঞানীদের।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তর গতকাল শুক্রবার (১৯ মার্চ) দেশে ১ হাজার ৮৯৯ জন নতুন রোগী শনাক্তর তথ্য জানিয়েছে। নমুনা পরীক্ষার তুলনায় নতুন রোগী শনাক্তের হার ১০ দশমিক শূন্য ৪ শতাংশ। আগের দিনও শনাক্তের হার ১০ শতাংশের বেশি ছিল। এক সপ্তাহের বেশি সময় ধরে আক্রান্ত ও আক্রান্তের হার বেশি দেখা যাচ্ছে। দেশে সংক্রমণ শুরু হওয়ার এক বছর পর সংক্রমণ পরিস্থিতির নতুন মাত্রায় মানুষের মধ্যে বেশ উদ্বেগ লক্ষ করা যাচ্ছে।

এর মাঝে নতুন আতঙ্ক হয়ে দাঁড়িয়েছে করোনার ইউকে ভেরিয়েন্ট। করোনাভাইরাসের যুক্তরাজ্যে পরিবর্তিত ধরন বা ইউকে ভেরিয়েন্ট দেশে ছড়িয়ে পড়ছে বলে জানিয়েছেন অণুজীববিজ্ঞানী ড. সমীর সাহা। তিনি বলেন, ‘ভাইরাস এখন একটু বেশি ছড়িয়ে পড়ছে। দেশে অন্য ভেরিয়েন্ট ছিল, এখন ইউকে ভেরিয়েন্ট ছড়াচ্ছে। যত ছড়াবে, ভাইরাসের রূপান্তরের আশঙ্কা তত বেশি। রূপান্তরিত হয়ে ‘বাংলাদেশ ভেরিয়েন্ট’ হওয়ার ঝুঁকিও আছে।’

বাংলাদেশ বিজ্ঞান ও শিল্প গবেষণা পরিষদ (বিসিএসআইআর) সূত্র বলছে, বিসিএসআইআর সর্বশেষ ১২০টি করোনারভাইরাসের জিন বিশ্লেষণের কাজ শেষ করেছে গত বৃহস্পতিবার। এর মধ্যে ৭০ শতাংশ ছিল ইউকে ভেরিয়েন্ট।

গত বছরের শুরুর দিকে চীনের হুবেই প্রদেশের উহান শহর থেকে করোনাভাইরাস সারা বিশ্বে ছড়িয়ে পড়ার পর এ ভাইরাসের ২০ হাজারের বেশি রূপান্তর ঘটেছে বা মিউটেশন হয়েছে। গত বছরের ডিসেম্বরে যুক্তরাজ্যে রূপান্তরিত নতুন ধরন শনাক্ত হয়। নতুন এ ধরনের সংক্রমণ করার বা মানুষ থেকে মানুষে ছড়িয়ে পড়ার ক্ষমতা অনেক বেশি, প্রায় ৭০ গুণ।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন রোগতত্ত্ববিদ বলেন, এক মাস আগে একাধিক পরীক্ষাকেন্দ্রের নমুনায় ইউকে ভেরিয়েন্ট পাওয়া গিয়েছিল। কন্ট্যাক্ট ট্রেসিংসহ (আক্রান্তদের সংস্পর্শে আসা ব্যক্তিদের খোঁজা) অন্যান্য নিয়ন্ত্রণমূলক ব্যবস্থা নেওয়ার কথাও বলা হয়েছিল। তবে সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে মাঠপর্যায়ে কার্যকর কোনো পদক্ষেপ দেখা যায়নি।

তবে বাংলাদেশের উষ্ণ আবহাওয়া নিয়েও আশঙ্কা করছেন বিশেষজ্ঞরা। কেননা বাংলাদেশে করোনার সংক্রমণ ব্যাপকভাবে ছড়িয়েছিল মূলত গত বছর মার্চ থেকে আগস্ট মাসে। এই ছয় মাসের আবহাওয়া মূলত উষ্ণ থাকে। শীতের আবহাওয়ায় সংক্রমণ বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কার কথা বলা হলেও বাস্তবে তা হয়নি। শীত শেষে উষ্ণ আবহাওয়া শুরু হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে সংক্রমণ আবার বাড়ছে।

বর্তমান সংক্রমণ পরিস্থিতির বিষয়ে ভাইরাস বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক নজরুল ইসলাম বলেন, শীতের এ দেশে জ্বর, সর্দি, নিউমোনিয়া, ইনফ্লুয়েঞ্জার ভাইরাসের প্রকোপ থাকে। এদের উপস্থিতির কারণে নোবেল করোনাভাইরাসের প্রাবল্য কম ছিল। উষ্ণ আবহাওয়ায় অন্য ভাইরাস অনেকটা স্তিমিত হয়ে পড়েছে, এককভাবে করোনাভাইরাসের উপস্থিতি এখন বেশি। তাই সংক্রমণ বাড়ছে।

সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে টিকাদান ছাড়া বাংলাদেশে বর্তমানে দৃশ্যমান কোনো কর্মকাণ্ড মাঠপর্যায়ে নেই। একমাত্র শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ছাড়া আর সবকিছু চলছে মহামারি শুরু হওয়ার আগের অবস্থায়। গত বছর এই সময় সংক্রমণ পরিস্থিতি এখনকার চেয়ে অনেক কম ছিল। তারপরও ২৬ মার্চ থেকে সারা দেশে সাধারণ ছুটি ঘোষণা করেছিল সরকার। কিন্তু ১৯ মার্চ বিসিএসসহ বিভিন্ন পাবলিক পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হচ্ছে। যার ফলে বাড়ছে লোক সমাগম। এছাড়াও নানা ধরনের জাতীয় অনুষ্ঠান পালিত হচ্ছে।