করোনার ছুটিতে স্কুল বেদখল, পালন করতে দেয়া হয়নি বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী 

বিদ্যালয়
কুতুবপুর পিয়ারজান সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়

ময়মনসিংহের নান্দাইল উপজেলার দক্ষিণ কুতুবপুর পিয়ারজান সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের বয়স প্রায় ৪৭ বছর। কিন্তু করোনায় বন্ধের সুযোগে এক সপ্তাহ ধরে এই বিদ্যালয়ের মাঠ ট্রাক্টর দিয়ে চষে কলাগাছ রোপণ করেছেন জমিদাতার উত্তরসূরিরা।

গতকাল বুধবার (১৭ মার্চ) সকালে জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী ও জাতীয় শিশু দিবসের অনুষ্ঠান করতে গেলে শিক্ষকদের বাধা দেওয়া হয় বলে জানা যায়। এ ছাড়া অনুষ্ঠান করতে বিঘ্ন সৃষ্টি করে। একপর্যায়ে শিক্ষকরা অনুষ্ঠান শেষ না করে থানায় এসে লিখিত অভিযোগ করেন।

স্থানীয় সূত্র জানায়, ১৯৭৪ সালে আছর আলীর স্ত্রী পিয়ারজান বিবি ৫১ শতাংশ জমি দান করেন বিদ্যালয়ের নামে। এর পর থেকে বিনা বাধায় বিদ্যালয়টি পরিচালিত হয়ে আসছে। আশপাশে কোনো বিদ্যালয় না থাকায় শিক্ষার্থীর সংখ্যাও আশানুরূপ। এর মধ্যে ২০১৩ সালে রেজিস্টারে এই বিদ্যালয়টি জাতীয়করণ হয়। এরপর নড়েচড়ে বসেন পিয়ারজান বিবির দুই ছেলে ও তাঁদের সন্তানরা। জমির মালিকানা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন। এক ছেলে তোফাজ্জল হোসেন (৭৫) এবং এই পক্ষের নাতি আবুল ইসলাম বাচ্চু (৩৮), মো. মোস্তফা (৪২) ও আল-আমীন ব্ল্যাকবোর্ড, শহীদ মিনারের সিঁড়ি ও শৌচাগারের খুঁটি ভাঙচুর করেন।

এই বিদ্যালয়ের জ্যেষ্ঠ শিক্ষিকা খালেদা আক্তার জানান, ১৯৭৫ সালে পিয়ারজান বিবি বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার জন্য ৫১ শতাংশ জমি জেলা প্রশাসকের নামে দলিল করে দিয়েছেন। তাই বিদ্যালয়টি নামকরণ ওই নারীর নামেই হয়েছে। এখন তার নাতিরা জমির মালিকানা নিয়ে কিভাবে প্রশ্ন তোলেন? ওই সময় তো তাদের জন্মই হয়নি। শুধু প্রশ্নই তোলেননি পেয়ারজান বিবির দুই ছেলে তোফাজ্জল হোসেন ও বাহাউদ্দিন এবং তিন নাতি গত ২০১৯ সালের ১৮ আগস্টে ঈশ্বরগঞ্জের জ্যেষ্ঠ সহকারী জজ আদালতে মোকদ্দমা করেন।

মামলায় বিদ্যালয়ের পাঁচ শিক্ষক ও ৯ জন সরকারি কর্মকর্তাকে বিবাদী করা হয়। ওই মোকাদ্দমায় বিদ্যালয় আঙিনায় কোনো স্থাপনা (ভবন) নির্মাণ না করার নিষেধাজ্ঞা চাওয়া হয়। একই বছর ১৬ সেপ্টেম্বর আদালত মামলাটি খারিজ করে দেন। এরপরও কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত ভবন করতে দেননি অভিযুক্তরা। এখন বিদ্যালয়ের সামনে-পেছনে কলাগাছ রোপণ করে দখলে নিয়েছেন তাঁরা।

এসব জমিদাতা পরিবারের সদস্য আবুল ইসলাম বাচ্চু বলেন, ‘আগে কেলা জমি দিছে এইডা আমরার জানার দরকার নাই। অহন এই সম্পত্তির কাগজপত্রে মালিক আমরা। আমরার জমি আমরা দখলে নিছি। এতে কার কি সমস্যা?’

মোয়াজ্জেমপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আবু বক্কর সিদ্দিক জানান, এ ধরনের আবদার অযৌক্তিক ও হাস্যকর। তিনি দলিলপত্র ঘেঁটে দেখেছেন, এই জমি বিদ্যালয়ের নামে পিয়ারজান বিবি লিখে দিয়েছেন।

নান্দাইল উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মোহম্মদ আলী সিদ্দিক বলেন, ‘এ ধরনের ঘটনা তৈরি করা খুবই দুঃখজনক। এ বিষয়ে প্রধান শিক্ষককে বাদী করে থানায় লিখিত অভিযোগ দেওয়া হয়েছে।’

এ ব্যাপারে নান্দাইল থানার পরিদর্শক মিজানুর রহমান আকন্দ জানান, দ্রুত আইনি ব্যবস্থা নেওয়ার প্রক্রিয়া চলছে।