ইভ্যালিকে ৫ ও ১০ দিনের মধ্যে পণ্য ডেলিভারির নির্দেশ

বাণিজ্য
ইভ্যালির লোগো

আলোচিত ই-কমার্স প্ল্যাটফর্ম ইভ্যালিকে একই শহরের মধ্যে হলে সর্বোচ্চ পাঁচ দিন এবং ভিন্ন শহর বা গ্রামে হলে ১০ দিনের মধ্যে অগ্রিম মূল্য পরিশোধ করা পণ্য ডেলিভারির নির্দেশ দিয়েছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়।

মন্ত্রণালয়ের সহকারী পরিচালক-১ এস এম নাজিয়া সুলতানা স্বাক্ষরিত গত ৪ মার্চ ইভ্যালির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মো. রাসেলের কাছে পাঠানো এক চিঠিতে এই নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।

চিঠিতে ইভ্যালিকে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ আইন ও জাতীয় ডিজিটাল কমার্স নীতিমালা সঠিকভাবে মেনে ব্যবসা পরিচালনা করতে এবং নীতিমালা অনুযায়ী কোম্পানিটিকে ক্যাশ অন ডেলিভারি পদ্ধতি অনুসরণ করতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। একই সঙ্গে এসব নির্দেশনা বাস্তবায়ন করে তা বাণিজ্য মন্ত্রণালয়কে অবহিত করতে বলা হয়েছে চিঠিতে।

নির্দেশিকায় বলা হয়েছে, অগ্রিম মূল্য পরিশোধ করা পণ্য একই শহরের মধ্যে হলে সর্বোচ্চ পাঁচ দিনের মধ্যে এবং ভিন্ন শহর বা গ্রামে হলে ১০ দিনের মধ্যে ডেলিভারি করতে হবে। আর ক্যাশ অন ডেলিভারি ও আংশিক ক্যাশ অন ডেলিভারির ক্ষেত্রে একই শহরে সর্বোচ্চ সাত দিন এবং ভিন্ন শহর বা গ্রামে হলে সর্বোচ্চ ১৫ দিনের মধ্যে তা সরবরাহ করতে হবে। এই সময়ের মধ্যে পণ্য ডেলিভারি না পেলে ক্রেতা ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ আইনে কোম্পানির বিরুদ্ধে মামলা করতে পারবে, এক্ষেত্রে কোম্পানিকে পণ্যমূল্যের দ্বিগুণ অর্থ জরিমানা দিতে হবে।

বিষয়টি নিশ্চিত করে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের ডাব্লিউটিও সেলের মহাপরিচালক ও কেন্দ্রীয় ডিজিটাল কমার্স সেলের প্রধান মো. হাফিজুর রহমান বলেন, জাতীয় ডিজিটাল কমার্স নীতিমালা, ২০১৮ অনুযায়ী ই-কমার্স সহজীকরণ এবং ভোক্তা ও ব্যবসায়ী উভয়পক্ষের অসন্তোষ নিরসনের স্বার্থে ক্যাশ অন ডেলিভারি পদ্ধতি অব্যাহত রাখতে ইভ্যালিকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।

বাংলাদেশে ই-কমার্সখাতের বিপুল সম্ভাবনা রয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, এ সম্ভাবনা কাজে লাগাতে কোম্পানিগুলোকে ক্রেতাদের আস্থা অর্জন করতে হবে। সেজন্য সময়মত সঠিক পণ্য ডেলিভারি দেওয়া নিশ্চিত করতে হবে। এজন্য আমরা ‘ডিজিটাল কমার্স পরিচালনা নির্দেশিকা, ২০২১’ প্রণয়ন করছি। ২১ মার্চ কনসালটেশন মিটিংয়ের পর আগামী মাসের মধ্যেই নির্দেশিকাটি জারি হবে।

ইভ্যালিসহ ই-কমার্সখাতের সকল কোম্পানিকে ওই নির্দেশনা মেনে ব্যবসা পরিচালনা করতে হবে বলেও জানান তিনি।

২০১৮ সালের ১৬ ডিসেম্বর আনুষ্ঠানিকভাবে যাত্রা শুরু করে ইভ্যালি। মাত্র ৫০ হাজার টাকা পরিশোধিত মূলধন নিয়ে যাত্রা শুরু করে ইভ্যালি। বর্তমানে ইভ্যালির পরিশোধিত মূলধন ১ কোটি টাকা। ইভ্যালির নিবন্ধিত গ্রাহক ৩৭ লাখেরও বেশি এবং মাসিক লেনদেনের পরিমাণ প্রায় ৩০০ কোটি টাকা। বর্তমানে প্রায় ২৫ হাজার বিক্রেতা প্রতিষ্ঠান ইভ্যালির সঙ্গে সম্পৃক্ত। শুরুর দিকে ভাউচার নামক একটি পদ্ধতি চালু করে ইভ্যালি। এ পদ্ধতির আওতায় বিভিন্ন পণ্যে ২০০-৩০০% পর্যন্ত ক্যাশব্যাক করতো। বর্তমানে ১০০-১৫০ পর্যন্ত এবং কিছু কিছু ক্ষেত্রে ৪০% পর্যন্ত ক্যাশব্যাক সুবিধা দিয়ে থাকে। ক্যাশব্যাকসহ বিভিন্ন লোভনীয় অফারে আকৃষ্ট হয়ে ক্রেতারা ইভ্যালির দিকে ঝুঁকছে।

ইভ্যালির বিরুদ্ধে অগ্রিম মূল্য নেওয়ার পর সময়মত পণ্য ডেলিভারি না দেওয়ার অভিযোগ রয়েছে। গত মাসে বাংলাদেশ ব্যাংককে চিঠি দিয়ে ইভ্যালির বিরুদ্ধে আর্থিক ব্যবস্থাপনার ত্রুটি খতিয়ে দেখতে চিঠি দেয় বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। ইভ্যালির বিরুদ্ধে পাওয়া বিভিন্ন অভিযোগ সিআইডির অর্গানাইজড ক্রাইম বিভাগ দ্বারা তদন্ত করে প্রতিবেদন দিতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগেও চিঠি পাঠানো হয়।

এছাড়া ইভ্যালি প্রতিমাসে কি পরিমাণ পণ্যের অর্ডার সংগ্রহ করছে এবং কি পরিমাণ পণ্য ডেলিভারি দিচ্ছে, তা মনিটরিং করতে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরকে চিঠি দিয়েছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়।

এ বিষয়ে পুলিশ সদরদপ্তরের তদন্ত প্রতিবেদনে ইভ্যালির বিরুদ্ধে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ আইনের ৪৫ ও ৫৩ ধারা লঙ্ঘনের করার কথা বলা হয়েছে। এ দু'টি ধারা অনুযায়ী কোন ব্যক্তি প্রদত্ত মূল্যের বিনিময়ে যথাযথভাবে প্রতিশ্রুত পণ্য সরবরাহ না করলে এক বছরের কারাদণ্ড এবং সেবা প্রদানকারীর অবহেলা ও দায়িত্বহীনতায় সেবাগ্রহীতার অর্থ বা স্বাস্থ্যহানি ঘটলে তিন বছরের কারাদণ্ড বা অর্থদণ্ড হতে পারে।