পরিবারের প্রতি প্রতিশ্রুতিবদ্ধ রক্ষণশীল মেয়েরা উচ্চশিক্ষায় আসছে

অধ্যাপক ফারজানা ইসলাম
দেশের প্রথম নারী উপাচার্য জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ফারজানা ইসলাম

দেশের প্রথম নারী উপাচার্য জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের নৃবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ফারজানা ইসলাম। বর্তমানে তিনি দ্বিতীয় মেয়াদে টানা সাত বছর ধরে তার ওপর অর্পিত দায়িত্ব পালন করে চলেছেন। তবে তাঁর পরিচয় শুধুমাত্র ‘দেশের প্রথম নারী উপাচার্য’ নয়, তিনি দক্ষিণ এশিয়ার অন্যতম নৃবিজ্ঞানী ও গবেষক। ১৯৮২ সালে অধ্যাপনা পেশায় যোগদানকারী এই মহিয়সী ২০০১ সালে সাসেক্স বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পিএইচডি ডিগ্রি অর্জন করেন এবং ২০১৪ সালে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ১৮তম উপাচার্য হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করেন। অধ্যাপনা ছাড়াও তিনি বেসরকারি সংস্থা ‘নাগরিক উদ্যেগ’ এর চেয়ারপারসন হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। তাঁর আমলেই জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদ কর্তৃক অনুমোদিত উন্নয়ন প্রকল্পের অধীনে বিশ্ববিদ্যালয়টির অবকাঠামো উন্নয়নে যুগান্তকারী পরিবর্তন সাধিত হয়েছে। এছাড়াও সম্প্রতি শিক্ষাক্ষেত্রে অবদানের স্বীকৃতি স্বরুপ তিনি পেয়েছেন অপরাজিতা পুরস্কার।

লিঙ্গ বৈষম্য, নারী অধিকার, নারীর প্রতি সহিংসতা রোধে কাজ করার কারণে তিনি দেশব্যাপী সমাদৃত হয়েছেন। নারী দিবস উপলক্ষ্যে করোনা মহামারিতে নারী অধিকার, নারীর প্রতি সহিংসতা ও সম্প্রতি ধর্ষণ বিরোধী আন্দোলন ছাড়াও দায়িত্ব পালনের অভিজ্ঞতা নিয়ে অধ্যাপক ফারজানা ইসলামের সাথে একান্তে কথা বলেছেন দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসে’র বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধি বেলাল হোসেন

দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাস: মাননীয় উপাচার্য আপনাকে নারী দিবসের শুভেচ্ছা।
উপাচার্য ফারজানা ইসলাম: তোমাকেও শুভেচ্ছা।

দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাস: নারী দিবস নিয়ে আপনার ভাবনা কী?
উপাচার্য ফারজানা ইসলাম: আমি শুধু একটি দিবস নিয়ে ভাবি না। এ দিবসটি একটি প্রতীকী তাৎপর্য বহন করে আমার কাছে। এর মাধ্যমে দুনিয়ার সকল নারীর সাথে একাত্মতা প্রকাশ করা যায়। একদিনের জন্য হলেও আমাদের কথা বলার সুযোগ হয়, সাহস বোধ করি। এ বছরের প্রতিপাদ্যে বলা হয়েছে, করোনার মধ্যে নারীরা কীভাবে উৎসাহিত হতে পারে। এজন্য হতাশা-বিষন্নতা, অসুস্থতার মধ্যে নারীরা যেন ধৈর্য ও সাহসের সাথে মোকাবেলা করতে পারে, সেই আশাবাদ ব্যক্ত করছি।

দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাস: বর্তমানে দিবসটি উদযাপন করা কেন তাৎপর্যপূর্ণ বলে আপনি মনে করেন?
উপাচার্য ফারজানা ইসলাম: যে কোন দুর্যোগে নারী তার পরিবারকে, স্বজনকে ও সম্পদকে রক্ষার জন্য অসম্ভব রকমের প্রচেষ্টা করে। তাঁর যে অনন্য ভূমিকা থাকে, সেটার জন্য করোনার মধ্যেও প্রশংসার দাবি রাখে। এর গুরুত্ব উপলদ্ধি করার জন্য দিবসটি এ সময়ে উদযাপন করা জরুরি।

দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাস: করোনা মহামারির মধ্যেও নারীর ক্ষমতায়ন সূচকে বাংলাদেশ দক্ষিণ এশীয় প্রতিবেশীদের ছাড়িয়ে গেছে। ব্যাপারটিকে কীভাবে দেখছেন? এরপরও কি বাংলাদেশী নারীরা মনস্তাত্ত্বিকভাবে স্বাবলম্বী হতে পেরেছে বলে মনে করেন?
উপাচার্য ফারজানা ইসলাম: আমি মনে করি যে, কাঠামোগত দিক থেকে অনেক পরিবর্তন হয়েছে। করোনা থাকা সত্ত্বেও নারীদের বেকারত্ব বৃদ্ধি পায়নি। বাংলাদেশের নারীরা বিভিন্ন ধরনের কাজ করছে। নারীরা যে কাজ করছে এটি আমাদের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ ইঙ্গিত বহন করে। নির্মাণ শ্রমিক, পোশাক শ্রমিক এবং আমরা যারা বুদ্ধিবৃত্তিক পেশার সাথে জড়িত আছি তারাও কাজ করছি। এতে বোঝা যায় যে একটা প্রবাহ শুরু হয়েছে, যা ভারত পাকিস্তান হতে ভিন্ন এবং উন্নতির ধারায় চলমান রয়েছে। বাংলাদেশে যে যেখানে আছে সে সেখান থেকে ভালো অবস্থানে যেতে চায়। সবাই উন্নয়ন প্রত্যাশী। এটা চলমান প্রক্রিয়ায় রয়েছে। এভাবেই মূলত বাংলাদেশী নারীরা মনস্তাত্ত্বিকভাবে স্বাবলম্বী হতে শুরু করেছে।

দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাস: করোনা মহামারিতে লকডাউনের মধ্যে নারীরা ঘরের প্রিয়জনের কাছেই সহিংসতার স্বীকার হচ্ছে। এ থেকে উত্তোরণের উপায় কী?
উপাচার্য ফারজানা ইসলাম: দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে যে সমস্ত খবর আমরা পাই তার মধ্যে বালিকার প্রতি অত্যাচার, নির্যাতন ও নৃশংসতার সীমা ছাড়িয়ে যাচ্ছে। নির্যাতনকারীরা পাশবিকতা বাড়ানোর জন্য অভিনব ও অদ্ভুত উপায়ে নির্যাতন করছে। রাস্তা, অফিস-আদালত থেকে শুরু করে নিজের ঘরেও নিরাপদ বোধ করছে না অনেক নারী ও শিশু। এ ব্যাপারে ছেলেদের পাশাপাশি আমাদের নারী সমাজকেও সচেতন হতে হবে। নারীকে অত্যাচার করা মানে নিজের জন্যই অত্যাচার বয়ে আনা। কারণ ভবিষ্যতে তার ওপরেও নির্যাতন আসতে পারে।

দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাস: আইন থাকা সত্ত্বেও নারীর প্রতি সহিংসতা বাড়ছে। এ ব্যাপারে নতুন কোন উদ্যেগ সহিংসতা রোধে সহায়ক হতে পারে কিনা?
উপাচার্য ফারজানা ইসলাম: আইন তো আছে, কিন্তু সবক্ষেত্রে আইন ব্যবহার করা যায় না, কারণ কিছুক্ষেত্রে অপব্যবহারের সম্ভাবনা রয়েছে। এজন্য নারী পুরুষের সম্পর্ক হচ্ছে এমন একটা সর্ম্পক, অমর্ত্য সেন এ ব্যাপারে বলেছিলেন, ইন্ডাস্ট্রিয়াল মালিক এবং শ্রমিকের ক্ষেত্রে দেখা হওয়ার সম্ভাবনা কম হলেও দাম্পত্য জীবনে নারী ও পুরুষের অন্ততপক্ষে রাতে দেখা হয়। প্রতিনিয়তই দেখা হয়, সেখানে নারীর প্রতি অবজ্ঞা ও অসম্মানের সুযোগ থাকে। নির্যাতন করতে পারে। সর্ম্পকটি এতটাই আষ্ঠেপৃষ্ঠে বাধা যে, দিন শেষে তাদের একসঙ্গে থাকতে হয় হোক সে বাবা, ভাই কিংবা স্বামী। সর্ম্পকগুলো ভালো করতে হলে প্রত্যেককেই ত্যাগ স্বীকার করতে হবে। সামাজিক শিক্ষার দিকটা গুরুত্ব দিতে হবে। শাস্তিবিধানের যে সুযোগ আছে সেটা শুধু আইন প্রয়োগ করেই হবে না। আইন ছাড়াও প্রাতিষ্ঠানিক, সামজিক, কমিউনিটি উদ্যেগের ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে নারীর প্রতি শব্দ চয়নে সতর্ক হতে হবে।

দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাস: ধর্ষণবিরোধী আন্দোলনে জনগণের স্বতঃস্ফুর্ত ভূমিকা কি নারীর প্রতি জনসাধারণের দৃষ্টিভঙ্গি পরিবর্তনে সহায়ক হবে?
উপাচার্য ফারজানা ইসলামঃ দৃষ্টিভঙ্গি পরিবর্তনে কতটুকু সহায়ক তা মাপা যাবে না। পরিমাপ করা কঠিন। তবে সহায়ক তো হচ্ছে কোন না কোনভাবে। ধরো ধর্ষণবিরোধী আন্দোলন জাহাঙ্গীরনগরে হয়েছিলো বিধায় একটু হলেও এ ধরনের অভ্যাসে জড়িত অপরাধীরা ভয় পান, থেমে যান। অন্যদিক থেকে নারীদেরকে টিজাররা যে অসাধু প্রলোভন দিত, তারাও ভয় ও আতঙ্কে থাকে । এতে ভুক্তভোগী কাউকে না কাউকে বলার জায়গা পায়। যেমন আমাদের জাহাঙ্গীরনগরে মেয়েরা জানাচ্ছে, জেগে উঠছে।

দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাস: বাঙ্গালি সমাজে পুরুষতান্ত্রিক মনোভাব নারীদের জন্য কতটুকু বিপদজনক। এর পরিবর্তনের ধারা সূচিত হবে কীভাবে?
উপাচার্য ফারজানা ইসলাম: একটা দিক হচ্ছে মেয়েদের লেখাপাড়া শেখানো হচ্ছে। মেয়েরা সাইকেল চালিয়ে দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলগুলোতে স্কুলে যাচ্ছে। আগে তাঁরা লুকিয়ে লুকিয়ে জমির আইলের ধার ধরে পড়তে যেতো। এদিকে স্বাস্থ্যসেবার উন্নতি হচ্ছে। নারীরা স্বাস্থ্যকর্মী হিসেবে কাজ করছে। অনেক নারী সেবা নিতে যায়। এছাড়া রিলিফ নিতে মেয়েরা ইউনিয়ন পরিষদে যায়, আইনগতভাবে তারা পারিবারিক সম্পত্তিতে উত্তারাধিকারী হিসেবে স্বীকৃতি পাচ্ছে। এক্ষেত্রে গ্রামের মেয়েরা হয়তো একটু পিছিয়ে আছে। শহরের মেয়েরা তা আদায় করে নিতে শিখেছে। আইনগত ব্যবস্থার বদল হয়েছে, বিয়ে করার বয়সটাকে একটা পরিবর্তনে আনা হয়েছে। এখানেও লুকোচুরি আছে। কিন্তু বেশিরভাগ মেয়ে যদি ১৮ পার হয়ে বিয়ে করে যেটা চার বছর আগেও ১৪ বছরে ছিলো, সেক্ষেত্রে মেয়েরা একটু বড় হচ্ছে নিজেদের কথা ভাবতে পারছে। সেও ঘুরে দাঁড়ানোর একটা শক্তি নিয়ে সংসার-জীবন শুরু করে। এ কাঠামোগুলো পরিবর্তন হয়েছে। কাজের জগৎ পরিবর্তিত হয়েছে। এ ধরনের একটা ঘটনা, একটা মানুষ, একটা উদ্দীপনা অনেকগুলো মানুষকে আলোকিত করবে।

দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাস: বর্তমানে নারীর ক্ষমতায়নে ধর্মীয় চেতনা কী ধরনের প্রতিবন্ধকতা তৈরি করছে?
উপাচার্য ফারজানা ইসলাম: ধর্মীয় চেতনা পুরুষের জন্য যা নারীর জন্যও তা। বাংলাদেশের বেশীরভাগ মানুষই ধর্মনিষ্ঠ। কিছুটা গোড়ামিও আছে অনেকের মধ্যে। সবাইযে এক রকম তা নয়। আমাদের সময়ে বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীরা এতো বোরখা পরতো না। কিন্তু এখন অনেক বোরখা, হিজাব পরিহিত ছাত্রী আমরা দেখি। তাহলে কি ধর্মীয় চেতনা বিকশিত হয়েছে? আামর এখানে সন্দেহ আছে এটা গবেষণার বিষয়।

এক এটা হচ্ছে শিক্ষার্থীর সংখ্যা বৃদ্ধি, মধ্যপ্রাচ্যভিত্তিক আকর্ষণীয় পোশাক বৃদ্ধি পাচ্ছে বাংলাদেশের বাজারে। এটা যে শুধু ধর্মকর্ম বেড়েছে তা নয়। অন্যদিকে অনেক রক্ষণশীল পরিবারের মেয়েরা পরিবারের প্রতি প্রতিশ্রুতিবদ্ধ হয়ে উচ্চশিক্ষায় আসছে এবং বুদ্ধিবৃত্তিক কর্মকাণ্ডে  যুক্ত হচ্ছে। হিজাব পরে তো নারীরা শধু কাজ করে না নিজেদের অস্তিত্বের প্রকাশ ঘটায়। তার পরিবারকে তার সমাজকে সে যখন সহযোগিতা করবে, হিজাব একটা ড্রেস হবে মাত্র।

দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাস: ভারতীয় উপমহাদেশে উগ্র ধর্মীয় চেতনার নবজাগরণ নারীর ক্ষমতায়নকে কীভাবে বাধাগ্রস্থ করছে?
উপাচার্য ফারজানা ইসলাম: উগ্র ধর্মীয় চেতনা সবার গতি বদ্ধ করে দেয়। সন্ত্রাসী হামলায় নারী-পুরুষ সকলেই ভীত হয়। উগ্রতা সবসময় খারাপ সেটা ধর্মীয় হোক আর কোন একটা সমাজব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করতে হোক। উগ্রতা মানুষকে সবসময় প্রতিক্রিয়াশীল করে তোলে। এটা একটা ক্ষতিকর প্রভাব রাখবেই। কিন্তু এটা টেকসই হবে না। ভারতে এলজিবিটি বৈধতা দেওয়ার পরবর্তী প্রতিক্রিয়া কি হতে পারে সেটা এখন দেখার বিষয়। ভারতে রক্ষণশীলতা এবং প্রগতিশীলতার লড়াইয়ে ভালোর দিকেই জনমানুষ ধাবিত হবে।

দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাস: আপনার কর্মজীবনের দীর্ঘ পথ পাড়ি দিতে একজন নারী হিসেবে কী কী প্রতিবন্ধকতা অতিক্রম করেছেন?
উপাচার্য ফারজানা ইসলাম: আমরা মুক্তিযুদ্ধ পরবর্তী শিক্ষার্থী ছিলাম। ৭২ সালে যখন দেশ স্বাধীন হলো তখন অনেক উঠতি বয়সের মুক্তিযোদ্ধারা শুরু করে নতুন ধরনের উৎপাত। তাদের কাছে অস্ত্র থাকায় এর অপব্যবহার করেছিল। তারা আমাদেরই বন্ধু-বান্ধবীদের অস্ত্রের মুখে তুলে নিয়ে গিয়েছিল। এমনকি ক্ষেত্রবিশেষে ঢাকা শহরে মেয়েরা রিকশায় চললে দুষ্কৃতিকারীরা পেছন থেকে মেয়েদের চুলের বেণী কেটে ফেলতো। রাস্তাঘাটে ধাক্কা দেওয়া চিমটি কাটা খুবই সাধারণ বিষয় ছিলো এবং সবসময় একটা আতঙ্কের পরিবেশ বিরাজ করছিল। আমরা যখন বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রী হলাম তখন শিক্ষকদের দ্বারা অশোভন আচরণ আমরা নিজেরাই পেয়েছি। কিন্তু আমরা সচেতন বন্ধুরা মিলে এর প্রতিরোধ করেছি। কিন্তু এখন সেই তারুণ্যের শক্তি কোথায়? এটা আমার একটি কষ্টের প্রশ্ন। আমাদেরকে প্রথমেই কালোহাত প্রতিহত করতে হবে। আমরা যদি ১৯৭৬ সালেই তা করতে পারি, তবে এখন ২০২১ সালে আমাদের মেয়েরা কেনো ব্যর্থ হচ্ছে। আমি মনে করি, মেয়েদের পরিবার থেকে আত্মসম্মানবোধ এবং প্রতিরোধ সক্ষমতার জ্ঞান শেখানো উচিত।

দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাস: দীর্ঘ শিক্ষকতা জীবনের কোন দিকটি সবচেয়ে ভালো উপভোগ করেছেন?
উপাচার্য ফারজানা ইসলাম: প্রতিবছর নবীন শিক্ষার্থীদের অভ্যর্থনা জানাতে আমার খুব ভালো লাগতো। এখনও লাগে। এছাড়াও শিক্ষকতা এবং গবেষণার সময়টুকু ভালো লাগে।

দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাস: উচ্চপদে অধিষ্ঠিত পেশাজীবী নারীর কঠিন সময়ে পরিবারের সহযোগিতা কতটুকু গুরুত্বর্পূণ?
উপাচার্য ফারজানা ইসলাম: শতভাগ গুরুত্বপূর্ণ, একদম পেতেই হবে। না হলে একক ব্যক্তিত্বে টিকে থাকা কঠিন।

বেলাল হোসেন: দায়িত্ব শেষে বিশ্ববিদ্যালয়কে কোন পর্যায়ে দেখে যেতে চান?
উপাচার্য ফারজানা ইসলাম: আর এক বছরের থেকেও ছয়দিন কম আছি। সতুরাং এ সময়ের মধ্যে আমি চাই যে, আমাদের যে পরিকল্পনা অনুযায়ী অবকাঠামো তৈরি হবে, একই পরিকল্পনা অনুযায়ী যেন শিক্ষকতা, শিক্ষার্থীর পড়াশোনার বিষয়টা সমান গুরুত্ব পায়।

দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাস: বিশ্ববিদ্যালয় পরিচালনার ক্ষেত্রে আপনার উত্তরসূরীকে কি ধরনের বার্তা দিতে চান?
উপাচার্য ফারজানা ইসলাম: প্রথমত বিশ্ববিদ্যালয় পরিচালনার জন্য যে বিষয়টা জরুরি, সেটা হচ্ছে ধৈর্য এবং শোনার অভ্যাস করা। অপর পক্ষ কি বলছে, শুনে তা মাথায় রেখে কাজ করা। কোন কোন সময় আমরা শুনতে পাই না এবং চাইও না। যেমন এখন আমরা ছাত্রদের দাবি সমূহ শুনতে পারবো। কিন্তু সবগুলো বাস্তবায়ন করতে পারবো না। কিন্তু ছাত্ররা কেন চাইছে সেটা শুনতে পারবো। সেক্ষেত্রে কিছু সহযোগিতা করতে পারবো। আমার উত্তরসূরীর প্রতি পরামর্শ হচ্ছে ধমক দিয়ে থামিয়ে দেওয়া নয় শোনার চেষ্টা করা, বোঝার চেষ্টা করা এবং যতটা সম্ভব অংশগ্রহণের সুযোগ দেওয়া।

দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাস: আপনার প্রারম্ভে জাহাঙ্গীরনগরের সাথে বর্তমান জাহাঙ্গীরনগরের মৌলিক পার্থক্য কী?
উপাচার্য ফারজানা ইসলাম: ভালো কিছু পার্থক্য তৈরি হয়েছে। এটা হলো শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের মান আগের চেয়ে বেড়েছে। মানসম্মত শিক্ষক এবং শিক্ষার্থী আমরা পেয়েছি। কিন্তু যা বিশালভাবে ক্ষতিগ্রস্থ করেছে, সেটা হলো শিক্ষার্থীদের নেশাগ্রস্থ হওয়া। মাদকগ্রহণের মধ্যে দিয়ে অত্যন্ত ভালোমানের মেধাবী শিক্ষার্থী শেষ পর্যন্ত তাদের ডিগ্রিটা নিয়ে যেতে পারছে না। এই একটাই অনেক কিছুর সাথে জড়িত।

দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাস: আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ।
উপাচার্য ফারজানা ইসলাম: দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকেও ধন্যবাদ।