দেড় যুগেও পদোন্নতি পাননি বঙ্গবন্ধু মেডিকেলের ২৫০ চিকিৎসক

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) আড়াইশ চিকিৎসক দেড় যুগের বেশি সময় ধরে পদোন্নতি বঞ্চিত হয়ে আছেন। দেশের প্রথম ও সবচেয়ে বড় চিকিৎসা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে এসব বঞ্চিত চিকিৎসকরা সেবা কার্যক্রম চালিয়ে গেলেও মানুষিকভাবে তারা বিপর্যস্ত। অধ্যাপক হওয়ার স্বপ্ন দেখা এসব চিকিৎসকদের অনেকেরই অবসরে যাওয়ার সময় হয়ে আসছে।

চিকিৎসা পেশায় স্ব-স্ব ক্ষেত্রে সহকারি, সহযোগি বা অধ্যাপক হিসাবে পদোন্নতি পাওয়ার জন্য যতগুলো শর্ত রয়েছে সবই পূরণ করছেন তারা। চিকিৎসা শাস্ত্রের ওপর উচ্চতর ডিগ্রিও নিয়েছেন সবাই। এত কিছুর পরও কর্তৃপক্ষ একটা আইন রহিত করায় আটকে আছে সবার পদোন্নতি। এমন পরিস্থিতিতে আজ রোববার অনুষ্ঠিত হতে যাওয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ৮১তম সিন্ডিকেট সভায় তাদের পদোন্নতির শতভাগ আশ্বাস দিতে পারছেন না কর্তৃপক্ষ। তারপরও আশায় বুক বেধেছেন বঞ্চিতরা।

ভুক্তভোগী চিকিৎসকরা বলছেন, দেশের বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি মেডিকেল কলেজ থেকে এমবিবিএস কোর্স শেষে প্রতিযোগীতামূলক পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেলের চিকিৎসক হয়েছেন। বিএসএমএমইউর নিয়মিত চিকিৎসক হিসেবে দেড় যুগের বেশি সময় ধরে রোগীদের নিরলসভাবে সেবা দিয়ে যাচ্ছেন। হাতে-কলমে সেবা দেওয়ার পাশাপাশি বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক হওয়ার স্বপ্নে একাধিক বিষয়ে উচ্চতর ডিগ্রিও সম্পন্ন করেছেন।

তারা বলছেন, দেশি-বিদেশি মেডিকেল জার্নালে চিকিৎসা গবেষণা বিষয়ক তাদের একাধিক আর্টিকেল প্রকাশিত হয়েছে। তবে এতকিছুর পরও বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের অবহেলায় মেডিসিন, নিউরোমেডিসিন, নিউরোলজি, নিউরোসার্জারি, গাইনি, কার্ডিওলজি, অর্থোপেডিকস, রিউম্যোটোলজিসহ প্রায় ৫৪টি বিভাগের আড়াইশ জন চিকিৎসক পদোন্নতি পাননি।

এদিকে পদোন্নতির দাবিতে ২০১৯ সালের ১ ডিসেম্বর চিকিৎসকরা বিএসএমএমইউ উপাচার্য বরাবর স্মারকলিপি প্রদান ও অবস্থান ধর্মঘট পালন করলে কর্তৃপক্ষ দ্রুত সমস্যা সমাধানের আশ্বাস দেয়। তবে দীর্ঘ অপেক্ষার পর দাবি পুরণ না হওয়ায় ২০২০ সালের ১৪ জানুয়ারি আরও একবার স্মারকলিপি দিয়ে দাবি দাওয়া পেশ করা হয়।

সে সময় (২০২০ সালের জানুয়ারিতে অনুষ্ঠিত) বিশ্ববিদ্যালয়ের ৭৬তম সিন্ডিকেট সভায় চিকিৎসকদের পদোন্নতির নীতিমালা প্রণয়োনের জন্য একটি কমিটি গঠন করা হলেও উদ্যোগ কার্যক্রম ভাটায় ১৩ আগস্ট তৃতীয়বারের মতো মানববন্ধন শেষে উপাচার্য বরাবর স্মারকলিপি জমা দেন। এবার ওই কমিটি একটি সুনির্দিষ্ট সুপারিশমালা তৈরি করে। যা আজকের সিন্ডিকেট বৈঠকে আলোচনার মাধ্যমে সর্বস্মতিক্রমে পাশ হলে আড়াইশ’ অধিক সিনিয়র চিকিৎক দীর্ঘ দিনের পদোন্নতি বঞ্চনা থেকে মুক্তি পাবেন।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে একাধিক চিকিৎসক বলেন, তাদের বঞ্চনার এই বিষয়টি মানবিকভাবে বিবেচনা করার জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য, উপ-উপাচার্য, কোষাধ্যক্ষ, সব সিন্ডিকেট সদস্য, সব বিভাগের বিভাগীয় প্রধান, স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদের কেন্দ্রিয় সভাপতি, বিশ্ববিদ্যালয় স্বাচিপের সভাপতি সেক্রেটারি ও প্রধানমন্ত্রীর ব্যক্তিগত চিকিৎসক অধ্যাপক এবিএম আব্দুল্লাহসহ সব পর্যায়ের নীতি-নির্ধারণী ব্যক্তিদের কাছে উপস্থাপন করা হয়েছে। তারা প্রতিবারই পদোন্নতির আশ্বাস দিয়েছেন।

পদোন্নতির জন্য গঠিত সুপারিশ কমিটির সভাপতি, বর্তমান সংসদ সদস্য ও বিএসএমএমইউর সিন্ডিকেট সদস্য অধ্যাপক ডা. মো. আব্দুল আজিজ বলেন, যেহেতু তারা দীর্ঘদিন ধরে চিকিৎসা সেবা দিচ্ছেন। সেহেতু চাকরির বিধি মোতাবেক স্ববেতনে পদোন্নতির জন্য আমরা সুপারিশ করছি। সেখানে জেষ্ঠতার ভিত্তিতে পদন্নোতির কথাও বলা হয়েছে। তবে পাশ হবে কিনা সেটা বলা যাচ্ছেনা, সিন্ডেকেটে যারা আছেন তারা সিদ্ধান্ত নেবেন।

বিশ্ববিদ্যালয়টির উপাচার্য অধ্যাপক ডা. কনক কান্তি বড়ুয়া বলেন, সিন্ডিকেটর সিদ্ধান্তের আগে এ বিষয়ে কিছু বলা যাবেনা। তবে পদোন্নতির বিষয়টা বিবেচনা করে এজেন্ডাটা (আলোচ্য সূচী) দেওয়া হয়েছে। এ জন্য একটা সুপারিশও আছে। আলোচনা শেষে বলা যাবে। সিন্ধান্ত ভালো হলে সবার জন্য ভালো হবে। আমরাও খুশি হব।