বসন্তের গানে গানে আন্দোলনের শ্লোগান

আন্দোলন
মিছিল করছেন শিক্ষার্থীরা

এল খুলমাখা তূণ নিয়ে

খুনেরা ফাগুন

রিক্ত শীতের বিদায় ঘটেছে, রেখে গেছে তাঁর মেজাজ। বসন্তের আগমন তারুণ্যকে দিয়েছে বিদ্রোহী সত্তা। বাংলাদেশের স্বায়ত্তশাসিত ক্যাম্পাসগুলো একুশের এই বসন্তকে স্বাগত জানিয়েছে রাজপথের বিপ্লবী সব শ্লোগানে। দাবি তাঁদের একটিই ‍প্রিয় ক্যাম্পাসেকে প্রাণোচ্ছল করতে প্রশাসনের ভূমিকা।

বসন্ত একটি রোগের নাম যা ইংরেজিতে চিকেন পক্স বলে অভিহিত। তিন দশক পিছনে ফিরলে এই রোগের প্রতিপত্তি দেখা দিতো মহামারি আকারে। জনপদ সমূহ তাদের অস্তিত্ব নিয়ে পড়তো সংকটে। এ জন্য মধ্যযুগের কবিরা বসন্তকে তুষ্ট করতে রচিত শীতলা-মঙ্গল। করোনা মহামারি গ্রাস করছে শিক্ষার্থীদের স্বপ্ন। নিজেদের স্বপ্নকে রক্ষা করতে বসন্তের প্রারম্ভে রাজপথে তৈরি করছে শ্লোগান সাহিত্য।

ঋতুরাজ বসন্ত বাঙালি আর বাংলাদেশের মানুষের জীবনে নিয়ে আসে প্রেম ও বিদ্রোহের যুগল আবাহন। এরকম এক বসন্তেই ব্রিটিশ সাম্রাজ্যবাদীরা ‘ধূমকেতু’ প্রকাশের কারণে কারাগারে আটকে রেখেছিল বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলামকে। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর তখন ‘বসন্ত’ নামক গ্রন্থটি তাকে উৎসর্গ করে প্রকাশের মাধ্যমে নজরুলের সঙ্গে নিজের একাত্মতা প্রকাশ করেছিলেন। আলীপুর কেন্দ্রীয় কারাগারে নজরুল সে গ্রন্থ পাওয়ার পর রচনা করেছিলেন তার বিখ্যাত কবিতা ‘প্রলয়োল্লাস’ (আজ সৃষ্টি সুখের উল্লাসে)।

দুই কবির ঐক্যবন্ধনে প্রতিবাদের ভাষা খুঁজে পেয়েছিল পরাধীন জনগোষ্ঠী। আমাদের চেতনায় ভাস্বর মাতৃভাষার আন্দোলন তুঙ্গে পৌঁছেছিল এই কৃষ্ণচূড়া-পলাশ ফোটার বসন্তকালে। মহান গণঅভ্যুত্থান ও মুক্তিযুদ্ধ-পূর্ব অসহযোগ আন্দোলনও দানা বেঁধেছিল বসন্ত ঋতুতে। স্বাধীন বাংলাদেশেও গণতন্ত্রের দাবিতে স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলন বার বার পথ খুঁজে পেয়েছে বসন্তকালে। বসন্ত তাই বাঙালির জীবনে বাঁধনহারা হয়ে সৃষ্টির উল্লাসে প্রেমের তরঙ্গে ভাসার সময়।

হাসির আঘাতে তার
মৌন রহে না আর
কেঁপে কেঁপে ওঠে খনে খনে

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়, কোলাহলপূর্ণ রাজধানীর অদূরেই একটুকরো সবুজের নগর। শীতের রুক্ষতা ও প্রিয় শিক্ষার্থীদের প্রেমে বিরহ-নিমজ্জিত স্থানটি বসন্তকে সম্ভাষণ জানায় আন্দোলনের শ্লোগানে। অন্য ক্যাম্পাস সমূহ (ঢাকা, রাজশাহী, চট্টগ্রামসহ অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়) সেটাকেই বসন্তের গান হিসেবে মেনে নেয়। এ গানের সুরে তাল মেলাতে বদলে যায় প্রশাসনের নানা সমীকরণ। তাই কৃঞ্ষ চূড়া, শিমুল ও পলাশদের মিছিল অনেকের চেতনায় সৃষ্টি করে নবদ্যোতানা।

‘এলো বনান্তে পাগল বসন্ত।
বনে বনে মনে মনে রং সে ছড়ায় রে,
চঞ্চল তরুণ দুরন্ত।
বাঁশীতে বাজায় সে বিধুর পরজ বসন্তের সুর,
পান্ডু-কপোলে জাগে রং নব অনুরাগে
রাঙা হল ধূসর দিগন্ত।’
-বিদ্রোহের প্রতিমূর্তি, প্রেরণাদাত্রী কবি কাজী নজরুল

বসন্তের প্রকৃতি, এক অপরূপ সৌন্দর্যের মাঝে তারুণ্য হারিয়ে যেতে চায়, জীবনকে প্রকৃতির রং, রূপ ও গন্ধের মধ্যেই স্বপ্নকে সত্যে রুপে প্রতিষ্ঠিত করতে সংগ্রামরত। শুরুটা বিদ্রোহাত্মক হলেও সকলের প্রত্যাশা বসন্ত শেষ হবে বিশ্বকবির অমিয় সুধা কাব্যের চরণের মতো!

‘রাঙিয়ে দিয়ে যাও যাও যাও গো এবার যাবার আগে--
তোমার আপন রাগে,
তোমার গোপন রাগে,
তোমার তরুণ হাসির অরুণ রাগে
অশ্রুজলের করুণ রাগে॥

রঙ যেন মোর মর্মে লাগে,
আমার সকল কর্মে লাগে,
সন্ধ্যাদীপের আগায় লাগে,
গভীর রাতের জাগায় লাগে॥