৩৩৩ দিন পর স্কুলে ফিরল পশ্চিমবঙ্গের শিক্ষার্থীরা

৩৩৩ দিন পর শুক্রবার (১২ ফেব্রুয়ারি) থেকে পশ্চিমবঙ্গের রাজ্যজুড়ে আংশিকভাবে খুলে গেল স্কুল। অনলাইন ক্লাসের মানসিক চাপ কাটিয়ে ফের সত্যি সত্যি ক্লাসে ফিরল পড়ুয়ারা। চেনা ক্লাসরুম, বেঞ্চের ধুলো সরিয়ে শুরু হল পঠনপাঠন। তবে কোভিড-উত্তর স্কুলের ছবি আগের থেকে অনেক আলাদা। সকলের মাস্কে ঢাকা মুখ, কোথাও কোথাও বসানো হয়েছে স্যানিটাইজারের যন্ত্র। মেনে চলতে হচ্ছে দূরত্ববিধি।

বন্ধুদের সঙ্গে হইহুল্লোড়ের সুযোগ না থাকলেও এতদিন পর দু’দণ্ড দাঁড়িয়ে কথা বলতে পেরে, চেনা ব্ল্যাকবোর্ড আর শিক্ষকের সামনে বসে পড়া বোঝায় সুযোগ পেয়ে স্বস্তিতে পড়ুয়ারা। ঘটনাচক্রে, স্কুল খোলার দিনই হরতাল ডেকেছে বামদলগুলি। সমর্থন করেছে তাদের জোটসঙ্গী কংগ্রেসও। ফলে আশঙ্কা ছিল, ক্লাস আদৌ শুরু হবে কি না তা নিয়ে। কিন্তু কলকাতা ও তার পার্শ্ববর্তী এলাকার স্কুলগুলো মনের জোর নিয়েই খুলে দিয়েছে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের দরজা। পড়ুয়ারাও এসেছে। কারণ, অনলাইন ক্লাসে হাঁফিয়ে উঠেছিল তারা।

সম্প্রতি রাজ্যের শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় নির্দেশ দেন, ১২ ফেব্রুয়ারি থেকে রাজ্যে স্কুল চালু করার। কোভিড আতঙ্কের মধ্যেই নবম থেকে দ্বাদশ শ্রেণি পর্যন্ত পঠন পাঠন শুরু হওয়ার নির্দেশ আসে। সেই সঙ্গেই ২৮ পাতার নির্দেশিকা জারি করে শিক্ষা দফতর। সেই নির্দেশিকায় বলা হয়ে ছিল স্কুল খুললে কী করা যাবে, কী যাবে না। নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল, এই নির্দেশিকা স্কুলের নোটিস বোর্ডে টাঙিয়ে রাখতে হবে। স্কুলে তৈরি রাখতে হবে একটি ‘আইসোলেশন রুম’। ছাত্রছাত্রীদের গতিবিধি, বন্ধুবান্ধবের মধ্যে মেলামেশার উপর পুরোপুরি নজর রাখতে হবে শিক্ষকদের। ক্লাসের মধ্যেও যাতে পড়ুয়ারা সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখে, একে অন্যের সঙ্গে খাবার বা জল ভাগ করে না খায়, স্কুল শেষ হওয়ার আগে বেরিয়ে না যায়, আর সব সময় যাতে মাস্ক পরে থাকে— সে বিষয়ে কড়া নজর রাখার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে শিক্ষকদের উপর।

সেই সব নিয়ম মেনেই শুক্রবার থেকে স্কুল খুলল। দক্ষিণের যাদবপুর বিদ্যাপীঠে চেনা ভিড় না থাকলেও পড়ুয়াদের হাজিরা ছিল চোখে পড়ার মতো। নবম-দশম এবং একাদশ-দ্বাদশের ক্লাস শুরু হয়েছে সময়মতোই। স্কুলে পৌঁছে উচ্ছ্বসিত নবম শ্রেণির ছাত্রী স্নেহা মণ্ডল বলল, ‘‘অনলাইনের ক্লাসে এতদিন পড়াশোনা ঠিকমতো হচ্ছিল না। ইন্টারনেটের সমস্যা লেগেই থাকত। পুরনো পদ্ধতিতে ক্লাস চালু হওয়ায় এ বার ফের মন ফিরবে পড়ার বইয়ে।’’ স্কুলগুলির তরফেও শিক্ষা দফতরের দেওয়া নির্দেশিকা মেনে আলাদা করে করোনা-পরবর্তী সময়ের জন্য প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। একটি বেঞ্চের দু’পাশে বসছে একজন করে। কোথাও আবার আলাদা আলাদা চেয়ার টেবিলে দূরত্ব মেনে বসছে পড়ুয়ারা।

ক্লাস শুরু হওয়ায় বেশ কিছু সমস্যার সমাধান এমনিতেই হয়ে যাবে বলে মনে করছেন শিক্ষকরাও। যাদবপুর বিদ্যাপীঠের শিক্ষক সুদীপ্তময় নস্করের মতে, ‘‘প্র্যাকটিক্যাল ক্লাসের সমস্যা এ বার মিটবে। যা হাতেকলমে শেখাতে হয়, তা অনলাইন ক্লাসে বোঝানো সম্ভব নয়। সামনেই বোর্ডের পরীক্ষা। তার আগে স্কুলের পরীক্ষাগারে পড়ুয়াদের শিখিয়ে-পড়িয়ে নিতে পারলে অনেকটা সুবিধা হত। তাই স্কুল খোলায় লাভবান হবে ছাত্রছাত্রীরা।’’

এতদিন পর বন্ধুদের সঙ্গে দেখা হওয়ায় খুশি পড়ুয়ারাও। দীর্ঘদিন ক্লাসের বন্ধুদের সঙ্গে দেখা নেই। বান্ধবহীন জীবন কাটাতে কাটাতে মানসিকভাবে কিছুটা হাঁফিয়ে উঠছিল তারা। টানা অনলাইন ক্লাসে চোখের উপরও চাপ বাড়ছিল। সব মিলিয়ে অভিভাবকদের দুশ্চিন্তা বেড়েছিল অত্যাধিক। যেমন অভিভাবক সোমা দত্ত বললেন, ‘‘ছেলেমেয়েরা স্কুলে এসে বন্ধু-বান্ধবের সঙ্গে একসঙ্গে মিলেমিশে পড়াশোনা করবে। শিক্ষকরা সামনে থেকে বোঝাবেন। তাহলেই শিক্ষা সঠিক পথে এগোবে। অনলাইন ক্লাসে সত্যিই ভীষণ অসুবিধার মধ্যে পড়তে হয়েছিল। এ বার স্কুল খুলে যাওয়ায় শান্তি।’’

সূত্র: আনন্দবাজার পত্রিকা