খুবি শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে সংহতি জানিয়ে রাবিতে মানববন্ধন

বহিস্কার
মানববন্ধনে উপস্থিত শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা

খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ে (খুবি) ছাত্র আন্দোলনের সাথে সংহতি প্রকাশের ঘটনায় দুই শিক্ষার্থীকে বহিস্কার ও তিন শিক্ষককে অপসারণের সিদ্ধান্ত বাতিলের দাবি জানিয়ে মানববন্ধন করেছে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) শিক্ষার্থীরা।

বৃহস্পতিবার (২১ জানুয়ারি) বেলা ১১টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্যারিস রোডে এ কর্মসূচি পালিত হয়। এসময় সেই আন্দোলনে সংহতি প্রকাশ করে বিশ্ববিদ্যালয়ের কয়েকজন শিক্ষকও এই কর্মসূচিতে অংশ নেন।

মানববন্ধনে শিক্ষার্থীরা বলেন, ক্লাসে বড় বড় লেকচার দেওয়া আর বাইরে শিক্ষকতা আলাদা জিনিস। আমরা মিলাতে গিয়ে ভ্রান্তিতে পরে যাই। যারা ক্লাসে মানবতার কথা বলেন, ন্যায়ের কথা বলেন, আমরা যখন বেরিয়ে তাদের মুখোশটা দেখি, তখন তাদের শিক্ষার্থী হিসেবে পরিচয় দিতে আমাদের লজ্জা লাগে। বর্তমানে বিশ্ববিদ্যালয়ে উপাচার্যরা পরিবারতন্ত্র চর্চা করেন, এখানে গণতন্ত্রের কথা হয়না।

তারা আরও বলেন, বঙ্গবন্ধু যখন ১৯৪৯ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সাথে সংহতি প্রকাশ করেন তখন ঢাবি কর্তৃপক্ষও তাকে বহিষ্কার করেছিলেন। অতীত থেকে ছাত্রদের দিয়েই সকল আন্দোলন হয়ে আসছে। ছাত্রদের দমিয়ে রাখা যাবে না। এসময় তারা খুবি প্রশাসনকে অবিলম্বে তাদের সিদ্ধান্ত বাতিলের দাবি জানান।

মানববন্ধনে শিক্ষার্থীদের সাথে সংহতি প্রকাশ করে পদার্থ বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক সালেহ হাসান নকীব বলেন, আজকের মানববন্ধনে দাড়ানোটা একজন শিক্ষক হিসেবে আমার নৈতিক দায়িত্ব। খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ে চলমান ঘটনাটি অত্যন্ত লজ্জার এবং ন্যাক্কারজনক। বর্তমানে বিভিন্ন প্রক্রিয়ায় দেশ এমন এক জায়গায় দাঁড়িয়েছে, যেখানে উঁচু উঁচু চেয়ারগুলোতে খুব নিচু মানের মানুষগুলো বসে আছে। অথচ তাদের এই চেয়ারগুলো হোল্ড করার মতো যথেষ্ট জ্ঞান, প্রজ্ঞা এবং ধ্যান-ধারনা নেই। এই বিষয়টা আমাদের উপলব্ধি করা দরকার। এটা রাতারাতি হয়নি। এর দায় আমাদের সবার।

তিনি আরও বলেন, বর্তমানে ক্ষমতাসীনরা সর্বদা গদি হারানোর ভয়ে থাকেন। নিজের অবস্থানের উপর তাদের কোনও আস্থা নেই। এভাবে বিশ্ববিদ্যালয় চলতে পারে না। খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের চলমান ঘটনা নিয়ে আমাদের প্রত্যেকের সোচ্চার হওয়া উচিত।

মানববন্ধনে গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের অধ্যাপক কাজী মামুন হায়দার রানা বলেন, শিক্ষার্থীদের ন্যায্য আন্দোলনে কিছু সংখ্যক শিক্ষক সংহতি প্রকাশ করেন। এটা যুগে যুগে হয়ে আসছে। খুবির জানুয়ারি মাসের ঘটনার তদন্ত কমিটি গঠন করা হলো অক্টোবর মাসে। দীর্ঘ নয়মাস খুবি প্রশাসন কোথায় ছিলো? তারা জানুয়ারি মাসের ঘটনায় সেই মাসেই তদন্ত কমিটি গঠন করলো না কেনো? এটা উদ্দেশ্য প্রণোদিত। শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে খুব জঘন্য একটা সিদ্ধান্ত নিয়েছে খুবি প্রশাসন। আশা করি তারা দ্রুত তাদের ভুল বুঝতে পেরে এই সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসবেন।

মানববন্ধনে ফোকলোর বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক আমিরুল ইসলাম কনক সহ প্রায় অর্ধশতাধিক শিক্ষার্থী অংশ নেন।

প্রসঙ্গত, ২০২০ সালের ১ জানুয়ারিতে খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা পাঁচ দফা দাবিতে আন্দোলনে নামেন। ওই আন্দোলনে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে সংহতি জানানোয় গত ১৮ জানুয়ারি তিন জন শিক্ষককে অপসারণের সিদ্ধান্ত নেয় বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেট কমিটি। একই ঘটানায় আন্দোলনের সময় শিক্ষকদের সঙ্গে অসদাচরণ, তদন্ত ও একাডেমিক কার্যক্রমে বাধা দেওয়ার অভিযোগে গত ১৩ জানুয়ারি দুই শিক্ষার্থীকে বিভিন্ন মেয়াদে বহিষ্কার করে খুবি প্রশাসন।