সিআরদের সাথে যবিপ্রবি উপাচার্যের মতবিনিময় সভা

হল খুলে পরীক্ষা নেয়ার দাবি যবিপ্রবি শিক্ষার্থীদের

মতবিনিময় সভা
মতিবিনিময় সভায় বক্তব্য রাখছেন যবিপ্রবি উপাচার্য

আগামী ফেব্রুয়ারি মাসের শেষ সপ্তাহ কিংবা মার্চ মাসের শুরুতে পরীক্ষা আয়োজনের মত দিয়েছেন যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (যবিপ্রবি) বিভিন্ন বিভাগের শ্রেণি প্রতিনিধিরা (ক্লাস রিপ্রেজেন্টেটিভ-সিআর)। একইসঙ্গে পরীক্ষা নেয়ার পূর্বে বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক হলগুলো খুলে দেওয়ার দাবিও জানিয়েছেন তারা।

মঙ্গলবার (১৯ জানুয়ারি) দুপুরে বিশ্ববিদ্যালয়ের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব একাডেমিক ভবনের কেন্দ্রীয় গ্যালারিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের সকল বিভাগের সকল বর্ষের শ্রেণি প্রতিনিধিদের সাথে যবিপ্রবি উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আনোয়ার হোসেনের মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় শ্রেণি প্রতিনিধিরা কোভিড-১৯ অতিমারীর সময় শিক্ষার্থীদের করণীয় বিষয়ে উন্মুক্তভাবে তাদের মতামত তুলে ধরেন। একইসঙ্গে শ্রেণি প্রতিনিধিদের মতবিনিময় সভায় আমন্ত্রণ জানানোয় যবিপ্রবি উপাচার্যসহ সংশ্লিষ্টদের ধন্যবাদ জানান তাঁরা।

সভায় অধ্যাপক ড. মো. আনোয়ার হোসেন বলেন, এ বিশ্ববিদ্যালয়ের সবচেয়ে বড় শক্তি হলো এর অধিকাংশ শিক্ষক। তাঁরা তাদের পরিশ্রম ও মেধা দিয়ে এ বিশ্ববিদ্যালয়কে সামনের দিকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন।

তিনি বলেন, করোনা অতিমারী শেষ হওয়ার পর অনেক শিক্ষার্থীর হয়তো ঝরে পড়ে যাওয়ার উপক্রম হবে। কিন্তু তাঁরা যেন ঝরে না পড়েন, এ জন্য আমাদের প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা নিতে হবে। শিক্ষার্থীদের সকল সুবিধা প্রদানের বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে অন্তর্ভুক্তিমূলক পদ্ধতিতে সকলের পরীক্ষা নেওয়া হবে। কাউকে বাদ দিয়ে পরীক্ষা নেওয়া হবে না। একইসঙ্গে তিনি ইলেক্ট্রনিক ডিভাইস কেনার জন্য আবেদনকৃত প্রায় ৫৭০ জন শিক্ষার্থীকেই ঋণ প্রদানের ঘোষণা দেন। একইসঙ্গে শিক্ষার্থীদের কল্যাণ তহবিলে অগ্রণী ব্যাংক লিমিটেড তাদের সিএসআর তহবিল থেকে এক কোটি টাকা প্রদানের প্রতিশ্রুতি দিয়েছে বলে শিক্ষার্থীদের জানান তিনি।

যবিপ্রবির উপাচার্যের বক্তব্য শেষ হলে অনুষদভিত্তিক বিভিন্ন বিভাগের বিভিন্ন বর্ষের শিক্ষার্থীরা তাদের মতামত ও প্রশ্ন তুলে ধরেন। ইন্ডাস্ট্রিয়াল অ্যান্ড প্রডাকশন ইঞ্জিনিয়ারিং (আইপিই) বিভাগের একজন শিক্ষার্থী বলেন, ‘হল না খুলে পরীক্ষা গ্রহণের সিদ্ধান্ত কোনোভাবেই বাস্তবায়ন করা যাবে না। কারণ চতুর্থ বর্ষ প্রথম সেমিস্টারের সকল বই, নোট, শিট সবকিছু হলে রয়েছে। আর পরীক্ষার প্রস্তুতি গ্রুপভিত্তিক করতে হয়। সেটা একমাত্র হলেই করা হতো। এ জন্য পরীক্ষা গ্রহণের সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে, হল খুলে দিতে হবে।’

বায়ো-মেডিকেল ইঞ্জিনিয়ারিং (বিএমই) বিভাগের একজন শিক্ষার্থী বলেন, ফেব্রুয়ারি মাসে আমাদের চতুর্থ বর্ষ দ্বিতীয় সেমিস্টারের ক্লাস শেষ হয়ে যাবে। দুটি সেমিস্টারের পরীক্ষার মাঝখানে অন্তত এক মাসের একটি বিরতি দেওয়া উচিত। কারণ চতুর্থ বর্ষ প্রথম সেমিস্টারের ক্লাসের অনেক কিছুই আমরা ভুলে গেছি।

কেমিকৌশল (সিএইচই) বিভাগের একজন শিক্ষার্থী বলেন, চতুর্থ বর্ষ প্রথম সেমিস্টারের অনেক কিছু আমরা ভুলে গেছি এ জন্য আমাদের কিছু রিভিউ বা অতিরিক্ত ক্লাস নেওয়া প্রয়োজন। এ বিষয়ে শিক্ষকদের সহযোগিতা প্রত্যাশা করেন তিনি।

এ্যাগ্রো প্রডাক্ট প্রসেসিং টেকনোলজি (এপিপিটি) বিভাগের একজন শিক্ষার্থী বলেন, পরীক্ষার প্রস্তুতিকালীন ছুটির (পিএল) সময় যেন অতিরিক্ত ক্লাস, ল্যাব না নেওয়া হয়। এ সময় যেন শিক্ষার্থীরা নিরবিচ্ছিন্নভাবে পরীক্ষার প্রস্তুতি নিতে পারেন। করোনার কারণে অনেক শিক্ষার্থী মেস বা বাসা নিয়ে থাকার সামর্থ্য হারিয়ে ফেলেছে, তাদের কথাও আমাদের বিবেচনা নিতে হবে। শিক্ষার্থীদের প্রকৃত সমস্যা সমাধান করেই পরীক্ষা নেওয়া উচিত। একইসঙ্গে পরীক্ষা শুরুর তিন সপ্তাহ পূর্বে নোটিশ, কমপক্ষে তিন সপ্তাহ পরীক্ষার প্রস্তুতিকালীন ছুটি এবং সমন্বিত পরীক্ষা না নিয়ে বিভাগভিত্তিক নেওয়ার প্রস্তুাব দেন তিনি।

রসায়ন বিভাগের একজন শিক্ষার্থী জানান, এখন থেকে যেকোনো সময় তারা পরীক্ষা দিতে প্রস্তুত। কিন্তু দুটি সেমিস্টারের পরীক্ষার মাঝখানে এক মাসের বিরতি দিতে হবে।

অ্যাকাউন্টিং অ্যান্ড ইনফরমেশন সিস্টেমস (এআইএস) বিভাগের একজন শিক্ষার্থী প্রস্তুাব দেন, চলমান সেমিস্টারের পরীক্ষা গ্রহণের পর পূর্বের সেমিস্টারের পরীক্ষা নেওয়া উচিত। কারণ এ সেমিস্টারে সকলেই পড়াশোনার মধ্যে রয়েছে।

ফার্মেসী বিভাগের মাস্টার্সের একজন শিক্ষার্থী বলেন, সবাই শুধু স্নাতক পর্যায়ের শিক্ষার্থীদের কথা ভাবছে। অতিদ্রুত মাস্টার্স শেষ সেমিস্টারের পরীক্ষা নিয়ে নিলে আমরা কর্মজীবনে প্রবেশ করতে পারব।

প্রায় দুই ঘণ্টাব্যাপী অনুষ্ঠিত মতবিনিময় সভায় প্রায় ৩০ জন শিক্ষার্থী বিভিন্ন বিষয়ে তাদের মতামত তুলে ধরেন। সকল শিক্ষার্থীই পরীক্ষা গ্রহণের পূর্বে হল খুলে দেওয়ার দাবি জানান। বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য, ডিন ও চেয়ারম্যানবৃন্দ তাদের মতামত শোনেন, কোনোটির তাৎক্ষণিক উত্তর দেন এবং যেটি বাস্তবায়নে আইন পরিবর্তন করতে হবে বা নীতিগত সিদ্ধান্তের বিষয় তা পরবর্তীতে জানানো হবে বলে শিক্ষার্থীদের আশ্বস্ত করেন।

মতবিনিময় সভায় আরও বক্তব্য রাখেন যবিপ্রবির ডিনস কমিটির আহ্বায়ক ড. মো. নাসিম রেজা, প্রকৌশল ও প্রযুক্তি অনুষদের ডিন ড. সৈয়দ মো. গালিব, ফলিত বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি অনুষেদের ডিন অধ্যাপক ড. মৃত্যুঞ্জয় বিশ্বাস, জীববিজ্ঞান ও প্রযুক্তি অনুষের ডিন অধ্যাপক ড. মো. জিয়াউল আমিন, কলা ও সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের ডিন ড. মো. আব্দুল্লাহ আল মামুন, বিজ্ঞান অনুষদের ডিন ড. সুমন চন্দ্র মোহন্ত, শিক্ষক সমিতির সহ-সভাপতি ড. এস এম নুর আলম, সাধারণ সম্পাদক মো. আমজাদ হোসেন, ড.ইঞ্জি. প্রমুখ। মতবিনিময় সভা পরিচালনা করেন যবিপ্রবির ছাত্র পরামর্শ ও নির্দেশনা দপ্তরের পরিচালক ড. মোঃ আলম হোসেন।