বিভাগ পরিবর্তনের ইউনিট নিয়ে সিদ্ধান্ত পরিবর্তন হবে না

বিভাগ পরিবর্তনের ইউনিট রাখার দাবিতে ভর্তিচ্ছুদের মানববন্ধন
বিভাগ পরিবর্তনকারী ইউনিট রাখার দাবিতে আন্দোলন করছেন ভর্তিচ্ছুরা

করোনাভাইরাসের কারণে শিক্ষার্থীদের ভোগান্তি কমাতে দেশের ১৯টি সাধারণ এবং বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় গুচ্ছ পদ্ধতিতে ভর্তি পরীক্ষার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। তিনটি ইউনিটে ১০০ নম্বরের এমসিকিউ প্রশ্নে এ পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে। তবে এতে বিভাগ পরিবর্তনের জন্য কোনো ইউনিট থাকছে না। ভর্তি পরীক্ষার পর সংশ্লিষ্ট বিশ্ববিদ্যালয় তাদের নিজস্ব নিয়ম অনুযায়ী বিজ্ঞান, বাণিজ্য এবং মানবিক ইউনিট থেকে বিভাগ পরিবর্তনের সিদ্ধান্ত ঠিক করবে।

এদিকে, বিভাগ পরিবর্তনকারী ইউনিট না থাকায় ভর্তিচ্ছু শিক্ষার্থীদের একাংশ আপত্তি তুলেছেন। তারা বলছেন, দীর্ঘদিন ধরে তারা আগের নিয়মেই ভর্তি পরীক্ষা দিতে প্রস্তুতি নিচ্ছেন। এখন বিভাগ পরিবর্তনকারী ইউনিট না থাকলে তারা বিপাকে পড়বেন। এ অবস্থায় বেশ কিছুদিন ধরে আন্দোলন করছেন তারা। বাংলা, ইংরেজি এবং সাধারণ জ্ঞানের মাধ্যমে বিভাগ পরিবর্তনের জন্য আলাদা ইউনিটে পরীক্ষা নেয়ার দাবি জানিয়েছেন তারা। মানববন্ধনসহ কয়েকদফা কর্মসূচিও তারা পালন করেছেন। এই আন্দোলনকারীদের বড় অংশই বিজ্ঞান বিভাগের এবং দ্বিতীয়বার ভর্তিচ্ছু বলে জানা গেছে।

বিভাগ পরিবর্তনের দাবিতে আন্দোলনকারী ভর্তিচ্ছু শিক্ষার্থী রাকিব বলেন, ‘আমাদের দাবি মূলত দুটি। প্রথমত বিভাগ পরিবর্তনের ইউনিট রাখতে হবে। দ্বিতীয়ত মানবিকের সঙ্গে পরীক্ষা নিতে হবে। কারণ আমাদের নিজ নিজ ইউনিটে পরীক্ষা দেয়া এখন সম্ভব না। আমরা সেজন্যই আন্দোলন করছি। দাবি না মানা হলে আমাদের কঠোর আন্দোলন করা ছাড়া উপায় থাকবে না।’

তবে তাদের সে দাবি আগেই নাকচ করে দিয়েছে গুচ্ছ ভর্তি পরীক্ষা গ্রহণকারী কর্তৃপক্ষ। সিদ্ধান্ত আর পরিবর্তন হবে না বলে সাফ জানিয়ে দিয়েছেন তারা। সূত্র জানায়, এবার গুচ্ছ ভর্তি পরীক্ষায় বিজ্ঞানের শিক্ষার্থীদের জন্য পদার্থ বিজ্ঞান বিষয়ে ২০ নম্বর, রসায়নে ২০, জীববিজ্ঞান-গণিত এবং আইসিটি মিলে ৪০ নম্বরের প্রশ্ন থাকবে। জীববিজ্ঞান, আইসিটি ও গণিতের মধ্যে যে কোনো দুইটি বিষয়ের উত্তর দিতে হবে। আর বাংলা ও ইংরেজি বিষয়ে ১০ নম্বর করে মোট ২০ নম্বরের প্রশ্ন থাকবে।

এছাড়া বাণিজ্য বিভাগের জন্য অ্যাকাউন্টিংয়ে ২৫ নম্বর, বিজনেস অর্গানাইজেসন ও ম্যানেজমেন্টে ২৫, আইসিটিতে ২৫, বাংলায় ১৩ এবং ইংরেজি বিষয়ে ১২ নম্বরের প্রশ্ন থাকবে। আর মানিবক বিভাগে বাংলায় ৪০, ইংরেজিতে ৩৫ এবং আইসিটি বিষয়ে ২৫ নম্বরের প্রশ্ন থাকবে। তবে কোনো লিখিত পরীক্ষা থাকছে না। এসব ইউনিটে উত্তীর্ণরাই বিশ্ববিদ্যালয়ের নিজস্ব সিদ্ধান্ত মোতাবেক বিভাগ পরিবর্তন করতে পারবেন।

এছাড়া গুচ্ছ পদ্ধতির ভর্তি পরীক্ষায় ১৯টি বিশ্ববিদ্যালয়ে আবেদনের জন্য ন্যূনতম যোগ্যতা নির্ধারণ করা হয়েছে। বিজ্ঞান বিভাগে মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিকের মোট জিপিএর চতুর্থ বিষয় ছাড়া সাত। ব্যবসায় শিক্ষায় মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিকের মোট জিপিএর চতুর্থ বিষয় ছাড়া সাড়ে ছয় এবং মানবিকে মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিকের মোট জিপিএর চতুর্থ বিষয় ছাড়া ছয়।

এ প্রসঙ্গে ১৯টি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যদের সমন্বয়ের গঠিত কমিটির যুগ্ম-আহবায়ক ও জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের (জবি) উপাচার্য অধ্যাপক ড. মীজানুর রহমান আজ রোববার (১৭ জানুয়ারি) দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, ‘বিভাগ পরিবর্তন নিয়ে একেকদিন একেকটা সিদ্ধান্ত দেওয়া যাবে না। আমরা আরও দুইমাস আগে বলে দিয়েছি, কী পরীক্ষা হবে। এটার মধ্যে কোনো পরিবর্তন হবে না। আরেকটা সিদ্ধান্ত হলে দেখা যাচ্ছে আরেকটা আন্দোলন হবে। অন্য গ্রুপ করবে। ডি গ্রুপ থাকবে না এটা বহু আগে বলে দিয়েছি। এতে বিভাগ পরিবর্তনে কোনো সমস্যা হয় না।’

জানা গেছে, গুচ্ছ পদ্ধতির ভর্তি পরীক্ষা কমিটি শুধু পরীক্ষা নেবে। নেগেটিভ মার্কিংও প্রচলিত নিয়মে থাকবে। পরীক্ষার ফল দেয়ার পর কোন বিশ্ববিদ্যালয় কীভাবে ভর্তি নেবে সেটা সংশ্লিষ্ট বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ ঠিক করবে। এসএসসি ও এইচএসসির জিপিএর কত মার্ক যোগ করা হবে, গ্রুপ পরিবতর্ন ইত্যাদি সংশ্লিষ্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের উপরে নির্ভর করবে। বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভাগগুলো তাদের ভর্তির শর্ত নির্ধারণ করবে। চলতি মাসে এইচএসসি পরীক্ষার ফলাফল ঘোষণা করার পর এ বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত আসবে এবং বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হবে বলে সূত্র জানায়।

যে ১৯টি বিশ্ববিদ্যালয়ে গুচ্ছ পদ্ধতিতে ভর্তি পরীক্ষা হবে: ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়, শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়, হাজী মোহাম্মদ দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, মাওলানা ভাসানী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়, কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়, জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়, যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়, পাবনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়, রাঙামাটি বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ডিজিটাল ইউনিভার্সিটি, শেখ হাসিনা বিশ্ববিদ্যালয় এবং বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়।