চাকরিতে ১০ শতাংশ কোটা চায় মন্ত্রী, যা বললেন নুর-রাশেদরা

চাকরিতে ১০ শতাংশ কোটা চায় মন্ত্রী, যা বললেন নুর-রাশেদরা
চাকরিতে ১০ শতাংশ কোটা চায় মন্ত্রী

সরকারি চাকরিতে মুক্তিযোদ্ধা কোটা বাতিল হয়েছে প্রায় দুই বছর আগে। কিন্তু এখন নতুন করে কোটা পদ্ধতি নিয়ে কথা বলেছেন মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক। সরকারি চাকরিতে কোটা বাতিলের সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনা করতে আহবান জানিয়েছেন তিনি। তবে এ বিষয়ে আপাতত পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণের কথা জানিয়েছে সংস্কারপন্থী শিক্ষার্থীরা।

কোটা সংস্কারের দাবিতে গড়ে ওঠা সংগঠন বাংলাদেশ ছাত্র অধিকার পরিষদের ভারপ্রাপ্ত আহবায়ক মুহাম্মদ রাশেদ খাঁন বলেন, সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কারের আন্দোলনটি ছিল সাধারণ শিক্ষার্থীদের, জনগণের। বাতিলের সিদ্ধান্তটি এখন অনুমোদন হয়ে গেছে। দেশের শিক্ষার্থীরা এ সিদ্ধান্তের মাধ্যমে একটা বড় বৈষম্য থেকে মুক্ত হয়েছে।

রাশেদ বলেন, বর্তমানে শিক্ষার্থীরা এর সুফল ভোগ করতে শুরু করেছে। আন্দোলন করতে গিয়ে আমরা বেশ হামলা-মামলার শিকার হয়েছি। এর পরে দীর্ঘ আন্দোলন-সংগ্রামে সরকার এটির যৌক্তিকতা বুঝতে পেরেছে। বিভিন্ন গবেষণা সংস্থাও সে সময়ে আমাদের পক্ষে কথা বলেছেন। আমরা সরকারকে ধন্যবাদ জানিয়েছি।

কোটা পুরোপুরি বাতিল নয়, সংস্কার চেয়েছেন জানিয়ে রাশেদ বলেন, আমরা কিন্তু কোটা পুরোপুরি বাতিল করতে বলিনি। আমরা সংস্কারের আন্দোলনই করেছিলাম। কিন্তু সরকার মনে করেছে সংস্কার নয়, বাতিল প্রয়োজন। তারা সেটিই করেছে। এখন নতুন করে পুনর্বহালের যে দাবির বিষয়ে নিয়ে কথা হচ্ছে আমরা সেটিকেও সাধুবাদ জানাই।

৩০ শতাংশ কোটা পুনর্বহালের দাবিকারীদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় সকলের দাবি-দাওয়া উত্থাপনের অধিকার রয়েছে। আমরাও চাই এটি অব্যাহত থাকুক। তবে আমাদের মনে হয় না, বাতিলের সিদ্ধান্তের পরে সরকার আবার নতুন করে পুনর্বহালের বিষয়ে ভাববে। সরকার তার এ সিদ্ধান্তেই অটল থাকবে। কারণ সে সময় এ সিদ্ধান্ত গবেষকদের পরামর্শ অনুযায়ী নেয়া হয়েছিল।

নতুন করে কোটা সংস্কারের বিষয়ে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক বলেছেন, ১০ শতাংশ মুক্তিযোদ্ধা কোটা রাখার সুপারিশ করে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগে চিঠি পাঠাবেন তিনি। এর আগে কোটা পদ্ধতি পুনর্বহালের জন্য প্রধানমন্ত্রীর প্রতি আহবান জানিয়ে বিষয়টি আলোচনায় এনেছেন মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক।

এদিকে সরকারি চাকরিতে মুক্তিযোদ্ধা প্রজন্মের জন্য ৩০ শতাংশ কোটা পুনর্বহালের দাবি জানিয়েছে বাংলাদেশ সচেতন মুক্তিযোদ্ধা ও প্রজন্ম পরিষদ। একইসঙ্গে মুক্তিযোদ্ধাদের মাসিক সম্মানী ভাতা ১২ হাজার থেকে বাড়িয়ে ২০ হাজার টাকা করারও দাবি সংগঠনটির।

মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী বলেন, ‘ত্রিশ শতাংশের বদলে দশ শতাংশ মুক্তিযোদ্ধা কোটা রাখার সুপারিশ করে চলতি মাসেই মন্ত্রিপরিষদ বিভাগে চিঠি দেওয়া হবে। ১০ শতাংশ কোটা রাখলে কারো জন্যই অবিচার করা হবে না।’

নুর-রাশেদরা যেহেতেু কোটা সংস্কারের আন্দোলন করে আসছিলেন, সেক্ষেত্রে এখন যদি নতুন করে সরকার কোটা সংস্কারে উদ্যোগ নেয় সেক্ষেত্রে তাদের অবস্থান কি থাকবে? এমন প্রশ্নের জবাবে রাশেদ খাঁন বলেন, আমরা এখন এটা নিয়ে ভাবছি না। আমাদের রাজনৈতিক দলকে মূলত সংগঠিত করতে কাজ করছি। গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় আমরা যদি সরকারে যেতে পারি সে সময় জনগণের চাহিদা অনুযায়ী বিবেচনা করবো।

ডাকসু সাবেক ভিপি ও বাংলাদেশ ছাত্র অধিকার পরিষদের যুগ্ম আহবায়ক নুরুল হক নুর বলেন, কোটা সংস্কার আন্দোলন শুরু হলে সারাদেশের ছাত্র সমাজ আমাদের এ আন্দোলনে সাড়া দিয়ে স্বতঃস্ফূর্তভাবে অংশ নেয়। সেই শুরু থেকে এ ভুঁইফোড় চক্রটি আমাদের আন্দোলনকে নস্যাৎ করার জন্য কাজ করেছে। সকল ষড়যন্ত্রের অবসান ঘটিয়ে অবশেষে এ আন্দোলন সফল হয়েছে।

নুর বলেন, এখন কোটা পুনর্বহালের যে কথাটি বলা হচ্ছে, আমরা বলবো একটি পক্ষ থেকে তাদেরকে উস্কে দেয়া হয়েছে। এছাড়া সরকারও বিভিন্ন সময় বিভিন্নভাবে এসব করে থাকে। এটা সরকারের রাজনৈতিক পলিসি। কয়েকদিন আগে ভাস্কর্য ইস্যু নিয়ে যেটা হয়েছে এটিও তার থেকে ভিন্ন কিছু নয়।

‘‘আমরা দেশের ছাত্র সমাজ এবং গণ মানুষের অধিকার নিয়ে কথা বলে আসছি। সে ধারাবাহিকতায় বর্তমানে নিজেরা রাজনৈতিক প্ল্যাটফের্মের দিকে এগুচ্ছি। আমারা সারাদেশের মানুষের ভালোবাসা এবং সমর্থন পাচ্ছি। সরকার আমাদের এ কাজের এটেনশনকে বাধাগ্রস্ত করতেও এটি করতে পারে। হয়তো তারা চাচ্ছে আমরা আবার সেসব আন্দোলন-সংগ্রামে ফিরে যাই।’’

কোটা পুনর্বহালের দাবির বিষয়ে নিজেদের অবস্থান জানিয়ে নুর বলেন, আমরা এসব ভুঁইফোড়দের কথায় গুরুত্ব দিচ্ছি না। যে যাই বলুক, আমরা পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছি। এখন যারা কোটা পুনর্বহালের দাবি করছে এটা তাদের সঠিক উদ্দেশ্য নয়, রাজনৈতিক ফায়দা নেওয়াই তাদের উদ্দেশ্য। আমরা বিচলিত নই, সময়-সুযোগ বিবেচনায় আমাদের করণীয় ঠিক করবো।

সরকারি চাকরিতে কোটা ৩০ শতাংশ থেকে ১০ শতাংশে নামিয়ে আনার দাবিতে ২০১৮ সালে সারাদেশে আন্দোলন গড়ে তোলে বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদ। পরে প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির চাকরি থেকে কোটা পদ্ধতি বাতিল করে দেওয়া হয়। এরমধ্য দিয়ে কোটা পদ্ধতির অবসান হয়। তবে কোটা পদ্ধতি পুনর্বহালের দাবিতে আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছে কয়েকটি সংগঠন।