করোনাকালে উচ্চশিক্ষায় বৈষম্য

প্রতীকী

ঈদের পরে বৃদ্ধির কথা থাকলেও বৃদ্ধি পেল না, শীতে সংক্রমনের হার বাড়ার কথা থাকলেও এখনো বাড়ে নাই, এখন নতুন করে মার্চে আরেকটা আঘাত আসতে পারে বলা হচ্ছে। এটা হলো আমাদের করোনা সংক্রমণ বৃদ্ধির আশংকা; যেটা বিশেষজ্ঞরা যথেষ্ট তথ্যের ভিত্তিতে বললেও বাস্তবতা এর চেয়ে ভিন্ন।

আর এ কারণেই এই সব আশংকা তার গুরুত্ব হারাচ্ছে এবং মানুষকে উদাসীন করছে। এর পাশাপাশি এই সকল আশংকার উপরে ভিত্তি করে শিক্ষার্থীদের স্বাস্থ্য সুরক্ষা বিবেচনা করে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ রাখা হচ্ছে। যার জন্য প্রায় স্থবির উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো বিশেষ করে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলো।

অনলাইনে ক্লাস শুরু করা হলেও শিক্ষার্থীদের ডিভাইস সংকট আর ইন্টারনেট কানেকশনের জন্য সেটা চালিয়ে নেওয়া দুস্কর। এর পাশাপাশি অনলাইনে পরীক্ষা না হওয়াটা আরেকটা কারণ হলো অনলাইন ক্লাসের প্রতি অনাগ্রহের জন্য।

তাই এখন সময় পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য প্রচলিত ব্যবস্থার বাইরে বিকল্প ভাবা। কারণ বর্তমানে উচ্চশিক্ষায় যে বৈষম্য সৃষ্টি হচ্ছে সেটা এখনই যদি সমাধান না করা হয় তাহলে ভবিষ্যতে সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়ার জন্য শিক্ষার্থীদের আগ্রহ কমে যাবে। মেধাবী শিক্ষার্থীরা সেশনজটের শংকায় পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় বিমুখ হতে থাকবে।

যখন কোন শিক্ষার্থী দেখবে প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ৪ বছরে যে ডিগ্রি অর্জন করা যাচ্ছে সেটা সরকারি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অর্জন করতে ৫-৬ বছর লেগে যাচ্ছে। তখন তার সামর্থ্য ও মেধা থাকলেই সে প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ের দিকে ঝুকবে। কারণ এই প্রতিযোগিতার সময়ে প্রায় ২ বছরের পার্থক্য অনেক।

সরকার এবং বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ চাইলে প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়কেও যথাযথ ব্যবস্থায় অনলাইনে সকল বর্ষের ফাইনাল পরীক্ষা নেওয়ার অনুমতি দিতে পারে। বর্তমানে ১০ মাস ধরে চলা পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের অনলাইন ক্লাসে যেহেতু কোন ফাইনাল পরীক্ষা হবে না তাই আগ্রহও কম দেখা যাচ্ছে।

কিন্তু পরিস্থিতি সম্পূর্ণ ভিন্ন প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্ষেত্রে সেখানে ক্লাস পরীক্ষা প্রায় স্বাভাবিক সময়ের মতোই চলছে। তাই একই সেশনে ভর্তি হওয়া প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের ৩য় বর্ষের ক্লাস, মেডিকেল শিক্ষার্থীদের পরীক্ষার জন্য প্রস্তুতি চলছে সেখানে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের ভরসা সেই ২য় বর্ষের অনলাইন ক্লাস।

মেডিকেল কলেজের যে পরীক্ষা হবে সেটা হোস্টেলে ১ মাস আগে থেকে অবস্থান করে হবে। তাহলে বিশ্ববিদ্যালয়েও ইয়ার ভিত্তিক ১ মাস ক্রাস কোর্সের পরে করোনাভাইরাস পরীক্ষা করে হল খুলে ইয়ার ফাইনাল নেওয়া হোক। যেমন মেডিকেলে হচ্ছে।

কিন্তু সেটা করার কোন ইচ্ছে বা আগ্রহ কোন বিশ্ববিদ্যালয়ের দেখা যাচ্ছে না। প্রকৃতপক্ষে সরকারি ও বেসরকারি মেডিকেলের পরীক্ষা একত্রে নেওয়ার কারণ হলো- সরকারি মেডিকেলে ফাইনাল পরীক্ষা না হলে বেসরকারি মেডিকেল পরীক্ষা নিতে পারবে না। যেহেতু একই বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনস্থ কলেজ।

যদি এই নিয়ম না থাকতো তাহলে সরকারি মেডিকেলের শিক্ষার্থীদেরও পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের মতো অবস্থা হতো। আসলে বর্তমানে উচ্চশিক্ষার ক্ষেত্রে ব্যক্তি মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠানগুলো তাদের শিক্ষার্থীদের শিক্ষা বর্ষ সঠিক সময়ে শেষ করে সার্টিফিকেট দিতে পারলেও সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলো এই ব্যপারে কোন পদক্ষেপ নিচ্ছে না। এতে দীর্ঘ সেশন জটের আশংকা দেখা যাচ্ছে।

তাই উচ্চশিক্ষায় যে বৈষম্য সৃষ্টি হচ্ছে সেটি ভবিষ্যতের জন্য কোন শুভ বার্তা বয়ে আনবে না বলে মনে হয়। এই বৈষম্য যেন আর বৃদ্ধি না পায় সে লক্ষে সংশ্লিষ্ট সকলের অতিদ্রুত বিকল্প ব্যবস্থা নেওয়া আহবান করছি।

লেখক: শিক্ষার্থী, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়