ব্যক্তির বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলায় করণীয়

রানা খায়রুল ইসলাম

পত্রপত্রিকা বা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলো খুললে মিথ্যা মামলার খবরাখবর কমবেশি চোখে পড়ে। ব্যাপারগুলো আজকালকার সমাজে ডালভাত হয়ে দাঁড়িয়েছে। মিথ্যা অভিযোগে কারো নামে মামলা হলে করণীয় না জানার কারণে অনেক সময় নির্দোষ হয়েও ব্যাপক হয়রানির শিকার হতে হয়। অনেকে মামলার কথা শুনে হতাশায় ভুগতে শুরু করেন। উদ্বেগ দুশ্চিন্তায় কাটতে থাকে দিন।

কোনো অপরাধ না করেও শত্রুতাবশত অথবা সামাজিকভাবে হেয় করার জন্য উদ্দেশ্যমূলকভাবে যদি কেউ আপনার বিরুদ্ধে থানা বা আদালতে মামলা করে তাহলে নিশ্চয় সেটা হতাশজনক ব্যাপার হয়ে দাঁড়ায়। পরিবারে বাড়তি একটি পেরেশানি যোগ হয়। অবিশ্বাস এবং হতাশায় দিনাতিপাত করতে হয় অনেক সময়। কি করবেন? কোথায় যাবেন? জানা থাকে না অনেকের।

কিছুদিন আগের ঘটনা, আমার নিজ এলাকা জয়পুরহাটের আদালতে গত কয়েকমাসে বেশ কয়েকটি ধর্ষণ মামলার রায় হয়েছে। যেখানে দুটি মামলা মিথ্যা প্রমাণিত হয়ে বাদীকেই উল্টো যথাক্রমে পাঁচ ও সাত বছর করে কারাদণ্ড দিয়েছেন স্থানীয় আদালত।

তাই হতাশ হওয়ার কিছু নেই। আপনার নামে কেউ যদি কোনো মিথ্যা মামলা করে তবে ভয় না পেয়ে আগে জানতে চেষ্টা করতে হবে কে, কোথায় মামলাটি করেছেন? মামলাটি থানায় হয়েছে নাকি আদালতে। এটা নিশ্চিত হওয়ার পর একজন নির্ভরযোগ্য আইনজীবীর মাধ্যমে মামলার আরজি বা এজাহারের কপি তুলতে হবে। পরে ঐ আইনজীবীর সঙ্গে কথা বলে নিশ্চিত হওয়া যাবে মামলাটির ধারা বা অভিযোগ জামিনযোগ্য কিনা।

মামলা জামিনযোগ্য হলে:

অভিযোগ যদি তেমন গুরুতর না হয় অথবা যদি জামিনযোগ্য হয় তবে নিম্ন আদালতে আত্মসমর্পণ করে জামিনের আবেদন করতে পারেন মামলার আসামি।

মামলাটি জামিনঅযোগ্য হলে:

অভিযোগ যদি জামিনঅযোগ্য হয় তবে সুপ্রিমকোর্টের হাইকোর্ট বিভাগে উপযুক্ত কারণ দেখিয়ে আগাম জামিন চাইতে পারবেন সেই আসামি। তবে হাইকোর্ট বিভাগ আগাম জামিন সাধারণত নির্দিষ্ট মেয়াদ পর্যন্ত দিয়ে থাকেন। এ মেয়াদের মধ্যেই নিম্ন আদালতে গিয়ে জামিননামা সম্পাদনের জন্য আবেদন করতে হবে। তবে আদালতে বিচার চলাকালে নির্দিষ্ট তারিখে অবশ্যই হাজিরা দিতে হবে। কোনো যুক্তিসংগত কারণ ছাড়া অনুপস্থিত থাকলে আসামির জামিন বাতিল করে দিতে পারেন আদালত।

জামিন কখন চাইবেন:

জামিন সাধারণত পুলিশ প্রতিবেদন হওয়ার আগেই চাইতে হয়। পুলিশ অভিযোগপত্র দাখিল করার আগে উপযুক্ত তথ্যপ্রমাণ দিয়ে আপনার বিরুদ্ধে যে মিথ্যা অভিযোগটি দায়ের করা হয়েছে, সেটা প্রমাণের চেষ্টা করতে হবে। তদন্তকারী কর্মকর্তা আপনার বিরুদ্ধে অভিযোগটির সত্যতা না পেলে আপনাকে নির্দোষ দেখিয়ে চূড়ান্ত প্রতিবেদন বা ফাইনাল রিপোর্ট আদালতে দাখিল করবেন। অভিযোগপত্র হয়ে গেলে মামলাটি বিচারিক আদালতে বদলি হবে। অভিযোগ গঠনের দিন আসামিকে হাজির হয়ে নতুন করে পূর্বশর্তে জামিন চাইতে হবে এবং জামিননামা সম্পাদন করতে হবে। এই আবেদনে আসামি মামলা থেকে অব্যাহতি চাইতে পারেন। অব্যাহতির আবেদন নাকচ হলে উচ্চ আদালতে প্রতিকার চাইতে পারবেন সেই আসামি।

মিথ্যা মামলায় গ্রেপ্তার হলে:

মিথ্যা মামলা হওয়ার পর পুলিশ যদি আসামিকে গ্রেপ্তার করে থানায় নিয়ে যায়। সে ক্ষেত্রে আসামি আইনজীবীর মাধ্যমে জামিনের আবেদন করতে পারবেন। যদি পুলিশ রিমান্ড চায় সেক্ষেত্রে আইনজীবী অবশ্যই রিমান্ড বাতিলের আবেদন করবেন। যদি আদালত জামিন দেন তাহলে একজন পরিচিত জামিনদারের জিম্মায় আসামিকে জামিননামা সম্পাদন করতে হবে। আর যদি জামিন না হয়, তবে পর্যায়ক্রমে উচ্চ আদালতে আবেদন করতে হবে।

মামলাটি আদালতে করা হলে:

যদি থানায় না হয়ে মামলাটি আদালতে (সিআর মামলা) হয়, তাহলে আদালত সমন দিতে পারেন কিংবা গ্রেপ্তারি পরোয়ানাও জারি করতে পারেন। এ ক্ষেত্রেও আসামিকে আত্মসমর্পণ করে জামিন চাইতে হবে। ক্ষেত্রবিশেষে আইনজীবীর মাধ্যমে হাইকোর্ট বিভাগে আগাম জামিন চাইতে পারেন সেই আসামি।

তবে মনে রাখতে হবে, সিআর মামলায় অভিযুক্ত সব আসামি হাজির হলেই বিচারের জন্য মামলাটি বদলি করা হয়। আসামি কোনো কারণে হাজির না হলে জামিন বাতিল হতে পারে। পর্যায়ক্রমে পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি হতে পারে। এ ছাড়া হাজির না হলে আসামির মালামাল ক্রোকের আদেশসহ তার অনুপস্থিতিতেই বিচারকার্য সম্পন্ন হতে পারে। তবে সাক্ষ্যপ্রমাণে আসামি নির্দোষ প্রমাণিত হলে মিথ্যা অভিযোগকারী বা মামলাকারীর বিরুদ্ধে প্রচলিত আইনেই পাল্টা মামলা করা যাবে।

মামলাটি যদি দেওয়ানি হয়:

দেওয়ানি মামলা হলে জবাব দাখিলের জন্য আদালত আসামির কাছে সমন পাঠাবেন। নির্ধারিত তারিখে হাজির হয়ে আইনজীবীর মাধ্যমে জবাব দাখিল করতে হবে। পরবর্তীতে মামলা ধারাবাহিকভাবে চলবে।

লেখক: শিক্ষার্থী, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়