গোয়ালঘরেই সারাদিন পড়াশোনা, প্রথম চেষ্টাতেই বিচারক সোনাল

সোনাল শর্মা
গোয়ালঘরে বসে পড়ায় ব্যস্ত সোনাল শর্মা

রাতে ঘুমনো ছাড়া সারা দিন গোয়ালেই কাটত তাঁর। গরু এবং গরুর পাশে জড়ো করে রাখা গোবরের মাঝেই চলত অক্লান্ত পরিশ্রম। দু’চোখে ভরা বিচারক হওয়ার স্বপ্ন। সেই স্বপ্নে ভর করে গোয়ালে বসেই দিন-রাত এক করে আইন নিয়ে পড়াশোনা করতেন। সেই পরিশ্রমেরই ফল পেতে চলেছেন তিনি। মাত্র ২৬ বছর বয়সে প্রথম চেষ্টাতেই রাজস্থান সেশনস আদালতে প্রথম শ্রেণির ম্যাজিস্ট্রেট হিসাবে কাজে যোগ দিতে চলেছেন সোনাল শর্মা।

ভারতের রাজস্থানের উদয়পুরের মেয়ে সোনাল। বাবা দুধ বেচে জীবিকা নির্বাহ করেন। দুধ বেচার টাকাতেই সংসারের যাবতীয় খরচ চালান তিনি। তার উপর ছেলে-মেয়েদের পড়াশোনার খরচ তো রয়েছেই। ছোট থেকেই বাবাকে কাজে সাহায্য করেন সোনাল। রোজ ভোর ৪টায় ঘুম ভাঙে তাঁর। উঠে বাবার সঙ্গে গোয়ালে চলে যান তিনি।

তারপর সারাদিন গোয়ালেই কাটে। গোবর তোলা, গরুকে স্নান করানো, খাওয়ানোর কাজ সেরে নিজে পড়তে বসেন। গোয়ালেরই এক কোণায় তেলের টিনের ফাঁকা বাক্স পাশাপাশি সাজিয়ে টেবিল বানিয়ে নেন। তাতে বই-খাতা রেখে চলে পড়াশোনা। গরুর ডাক, গোবরের গন্ধ কোনও কিছুই তাঁকে বিভ্রান্ত করতে পারেনি। শুধু খাবার সময়টুকু গোয়াল থেকে বার হন তিনি।

অভাবের সংসারে কোনওদিন কোচিং সেন্টার বা টিউশন নিতে পারেননি। সাইকেল চালিয়ে সময়ের অনেক আগেই কলেজে পৌঁছে যেতেন। সেখানে লাইব্রেরিতে বসে নোট নিতেন। পড়াশোনা এগিয়েছিল এ ভাবেই। তাঁর কলেজের নাম ছিল মোহনলাল সুখোদিয়া বিশ্ববিদ্যালয়। কলেজের পরীক্ষাতেও ভাল ফল করেছিলেন তিনি। ২০১৮ সালে রাজস্থান জুডিশিয়াল সার্ভিস পরীক্ষায় বসেন। মাত্র ১ নম্বরের জন্য চূড়ান্ত তালিকায় জায়গা করতে পারেননি।

ওয়েটিং লিস্টে ছিলেন তিনি। পরবর্তী পরীক্ষার জন্য প্রস্তুতিও নিতে শুরু করেছিলেন। কিন্তু চূড়ান্ত তালিকা থেকে সাতজন চাকরিতে যোগ দেননি। পদ ফাঁকা থাকার ফলে ওয়েটিং লিস্ট থেকে আরও সাত জন ডাক পান। সেই তালিকায় সোনালও রয়েছেন। খুব তাড়াতাড়ি সেশনস আদালতে প্রথম শ্রেণির ম্যাজিস্ট্রেট হিসাবে কাজে যোগ দেবেন তিনি।

লক্ষ্য এখনও পূরণ হয়নি তাঁর। কাজে যোগ দেওয়ার পর তাঁর প্রথম কাজ হবে মা-বাবাকে একটি ভাল জীবন দেওয়া। তাঁদের যাতে আর দুধ বেচে সংসার টানতে না হয় সেটা দেখা। প্রথম শ্রেণির ম্যাজিস্ট্রেট হিসাবে এমন একটি সুযোগ পাওয়ার পর শৈশবের দিনগুলির কথা খুব বেশি করে মনে পড়ছে সোনালের। অনেক সময়ই তিনি স্কুলে যেতেন, জুতোয় গোবর লেগে থাকত। সারা গায়েও যেন গোবরের গন্ধ মিশে থাকত তাঁর। দুধওয়ালার মেয়ে হিসাবে শুনতে হয়েছে কটাক্ষও। এখন এই পরিচয়ই তাঁর গর্বের কারণ। শুধু তাঁর পরিবারের কাছেই নয়, সারা দেশের অনুপ্রেরণা তিনি। সূত্র: আনন্দবাজার।