আদালত অবমাননা রাবি ভিসির এবং আদালতের ভৎসনা

প্রফেসর ড. মু. আলী আসগর

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) উপাচার্য এম আবদুস সোবহান বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশনের (ইউজিসি) তদন্ত কমিটির উন্মুক্ত শুনানিতে অংশগ্রহণ না করার জন্য অন্ততম প্রধান কারণ হিসেবে উল্লেখ করে ইউজিসির চেয়ারম্যানকে গত ৯ সেপ্টেম্বর ২০২০ তারিখের স্মারক নং -উপা/২১ পত্রে লিখেন, “এখানে বিশেষভাবে উল্লেখ্য যে, আমার বিরুদ্ধে যে সব মিথ্যা অভিযোগ উত্থাপিত হয়েছে এ বিষয়ে বাংলাদেশ সুপ্রীম কোর্টের হাইকোর্ট ও আপীল বিভাগে বিচারাধীন আছে (Writ Petition  No. 8242/2019 এবং 350/2020, C.M.P No. 104/2020 ও 120/2020)। একই বিষয়ে নিয়ে তাই UGC- কর্তৃক তদন্ত বা প্রশ্ন উত্থাপন করা আদালত অবমাননার সামিলও বটে।”

উপর্যুক্ত নম্বরের রীট পিটিশনগুলি হচ্ছে- রাবি উপাচার্য এম আবদুস সোবহান কর্তৃক মহামান্য রাষ্ট্রপতি ও আচার্য মহোদয়কে অসত্য তথ্য দিয়ে শিক্ষকতা থেকে স্বেচ্ছায় অবসর গ্রহণ, রাবির ক্রপ সায়েন্স এন্ড টেকনোলজি বিভাগের ৩ জন শিক্ষক বাতিল,  ১৯৭৩ এক্ট লঙ্ঘন করে রাবির ক্রপ সায়েন্স এন্ড টেকনোলজি বিভাগে আমার পরিবর্তে আমার চেয়ে জুনিয়র শিক্ষককে সভাপতি নিয়োগ সংক্রান্ত বিষয়ে। আমি সহ রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের চার (০৪) জন শিক্ষক ইউজিসির ১৭ সেপ্টেম্বর ২০২০ তারিখের উন্মুক্ত শুনানিতে অংশগ্রহণ করেছিলাম। আমরা উপর্যুক্ত নম্বরের রীট পিটিশনগুলি সম্পর্কে উক্ত উন্মুক্ত শুনানিতে কোন আলোচনা করিনি এবং ইউজিসি এ বিষয়ে কোন সুপারিশ করে নাই।  

রাবির ক্রপ সায়েন্স এন্ড টেকনোলজি বিভাগের ৩ জন শিক্ষক বাতিলের হাইকোর্টের পূর্ণাঙ্গ রায়ে উল্লেখ আছে “ অত্র মোকদ্দমা শুনানীকালে সংশ্লিষ্ট আইনজীবিকে মৌখিকভাবে অত্র আদালত নির্দেশ প্রদান করেছিল যে, মোকদ্দমাটি নিস্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত নিয়োগ কার্যক্রম যেন স্থগিত রাখা হয়। সংশ্লিষ্ট আইনজীবি ততবিষয়ে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে করেন।” আদালত উক্ত রায়ে আরোও উল্লেখ করেন “এনেক্সার-পি(১) দৃষ্টে এটা স্পষ্ট প্রতীয়মান যে, অত্র আদালতে শুনানী চলমান জানা সত্ত্বেও এবং অত্র আদালতের মৌখিক নির্দেশ সত্ত্বেও রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য বিগত ইংরেজি ২৬. ০১. ২০২০ তারিখে নিয়োগ প্রদান সম্পন্ন করেছেন।”

আদালত উক্ত রায়ে আরোও উল্লেখ করেন, “সর্বোচ্চ বিদ্যালয় তথা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সর্বোচ্চ উঁচু মানের হবেন। আবার বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদেরসহ সকল কার্যক্রমের পরিচালনাকারী উপাচার্য হবেন আরোও উঁচু মানের। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকতা জাতীয় অন্যতম শ্রেষ্ঠ সন্মানজনক পেশা। এ পেশার কোন ব্যক্তি আইন এবং আদালতের আদেশ ভঙ্গ করতে পারে এটা সাধারণ মানুষ চিন্তাও করতে পারে না। কিন্তু রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য সেই অকল্পনীয় কাজটি করলেন। তিনি প্রকৃত পক্ষে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকসহ সকল শিক্ষককে অপমান করেছেন।” হাইকোর্টের উক্ত রায়ে উপাচার্যের স্বেচ্ছাচারীমূলক কর্ম, অসৎ অভিপ্রায়, অসৎ উদ্দেশ্য এবং সর্বোপরী বেআইনি কর্মের জন্য আদালত ভৎসনা করেছেন।

রাবি উপাচার্য এম আবদুস সোবহানসহ তিনজনের বিরুদ্ধে ২০১৯ সালে অন্য একটি আদালত অবমাননার মামলা হয়েছে। রাজশাহীর সিনিয়র সহকারী জজ আদালতে বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন ও ভূমি প্রশাসন বিভাগের শিক্ষক মো. শাহরিয়ার পারভেজ এ মামলা করেন।

উক্ত মামলার আরজি সূত্রে জানা গেছে, ২১ এপ্রিল ২০১৯ তারিখে রাবির সাবেক ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার এম এ বারী স্বাক্ষরিত এক চিঠিতে আইন বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক মো. রফিকুল ইসলামকে প্রেষণে আইন ও ভূমি প্রশাসন বিভাগে তিন বছরের জন্য সভাপতি নিয়োগ দেওয়া হয়। ২৫ এপ্রিল থেকে নিয়োগের আদেশ কার্যকর হওয়ার কথা। কিন্তু ২৪ এপ্রিল আইন ও ভূমি প্রশাসন বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক মো. শাহরিয়ার পারভেজ এই নিয়োগাদেশের বিরুদ্ধে আদালতে মামলা করেন। ওই দিনই আদালত মো. রফিকুল ইসলামকে সভাপতি নিয়োগ ও বিভাগে সভাপতি হিসেবে যোগদান না করার ব্যাপারে অস্থায়ী নিষেধাজ্ঞা জারি করেন।

মামলার বাদী  আইন ও ভূমি প্রশাসন বিভাগের শিক্ষক (বর্তমানে উক্ত বিভাগের সভাপতি) মো. শাহরিয়ার পারভেজ গণমাধ্যমকে বলেন, ‘২৪ এপ্রিল আদালতের অস্থায়ী নিষেধাজ্ঞা জারির পর ২৫ এপ্রিল সকাল ৯টার আগেই আমরা আদালতের আদেশ নিয়ে রেজিস্ট্রার দপ্তরে হাজির হই। কিছুক্ষণের মধ্যে আদালতের বাহক অস্থায়ী নিষেধাজ্ঞার আদেশ নিয়ে আসেন। কিন্তু সেখানে আদালতের আদেশের প্রতি অবজ্ঞা ও তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য করে আদালতের জারিকৃত আদেশ গ্রহণে সময়ক্ষেপণ করা হয়। ৯টা ৫০ মিনিটের দিকে আদেশ গ্রহণ করা হয়। এই পরিপ্রেক্ষিতে আদালত অবমাননার মামলা করা হয়েছে।’

লেখক: প্রফেসর, ক্রপ সায়েন্স এন্ড টেকনোলজি বিভাগ, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়