৪১, ৪২, ৪৩ ও ৪৪তম বিসিএস প্রার্থীদের উদ্দেশ্যে

শরীফ হোসাইন আহমদ চৌধুর
শরীফ হোসাইন আহমদ চৌধুর

করোনা বিপর্যয়ের কারণে যে সকল চাকুরি প্রার্থীরা হতাশায় আচ্ছন্ন হয়ে পড়েছিলেন, ৪৩তম বিসিএসের সার্কুলার তাদেরকে নতুনভাবে উজ্জীবিত করেছে। যারা এই পরীক্ষাগুলোতে অংশগ্রহণ করতে পারবে, তাদের উদ্দেশ্যে আমার কয়েকটি ব্যক্তিগত অভিব্যক্তি বিচ্ছিন্নভাবে তুলে ধরলাম।

আমার মতে, ৪৩তম বিসিএস পরীক্ষাটি ৪১তম বিসিএস প্রার্থীদের ক্ষতি পুষিয়ে নেয়ার একটি অনবদ্য সুযোগ। মূলত, ৪১তম বিসিএসের প্রার্থীরাই ৪৩তম বিসিএসের প্রার্থী। কারণ, করোনা মহামারীর কারণে অনার্স চতুর্থ বর্ষে অধ্যয়নরত অধিকাংশ শিক্ষার্থীর ফাইনাল পরীক্ষা আটকে যাওয়ায় তারা ৪৩তম বিসিএসে অংশগ্রহণ করতে পারছেন না। ফলে ৪৩তম বিসিএসে প্রার্থী সংখ্যা উল্লেখযোগ্য পরিমাণে বৃদ্ধি পাওয়ার কথা নয়।

শুধু ৪১ এবং ৪৩তম বিসিএসে ক্যাডার এবং নন ক্যাডার মিলে কমপক্ষে ৮,০০০ প্রার্থী চাকরি পাবে বলে আমার বিশ্বাস। অতএব এখনো যাদের ঘুম ভাঙেনি, তাদের জন্য আফসোস।

অনার্স ফাইনাল পরীক্ষা শেষ না হওয়ার কারণে যারা ৪৩তম বিসিএসে আবেদন করতে পারছো না, তাদের খুব হতাশ হওয়ার প্রয়োজন নেই। কারণ, ২০২১ সালের শেষ দিকে ৪৪তম বিসিএসের সার্কুলার প্রকাশিত হওয়া একদমই অস্বাভাবিক কিছু নয়। অতএব, keep hope alive. প্রস্তুতির ধারাবাহিকতা অব্যাহত রাখো।

গ্রিক নাট্যকার সফোক্লিসের Oedipus Rex নাটকের একটি বিখ্যাত উক্তি ছিল, ‘When wisdom brings no profit, to be wise is to suffer.’ অর্থাৎ, জ্ঞান যখন কোনো কাজে আসেনা, জ্ঞানী হওয়াটা তখন শুধু দুর্ভোগের কারণ হয়ে দাঁড়ায়। বাক্যটিকে আমি আধুনিক ভার্সনে এভাবে বলে থাকি, ‘সার্টিফিকেট যখন কোনো কাজে আসে না, সার্টিফিকেট অর্জন তখন শুধুই দুর্ভোগের কারণ হয়ে দাঁড়ায়।’

কোনো কোনো শিক্ষাবিদ সার্টিফিকেটকে ‘Brain Child’ হিসেবে আখ্যায়িত করে থাকেন। বাংলাদেশে সাধারণত এটির মেয়াদ থাকে ৩০/৩২ বছর বয়স পর্যন্ত। এই সময়ের মধ্যে ব্রেন চাইল্ডকে কাজে লাগাতে না পারলে সেটি ‘ডেড চাইল্ড’-এ পরিণত হয়। অতএব দীর্ঘ সাধনায় অর্জিত এই সার্টিফিকেট কাজে লাগানোর জন্য এর চেয়ে সোনালী সুযোগ হয়তো অনেকের জীবনে আগে কখনো আসেনি।

বলা হয়ে থাকে, ‘Identity is more important than existence.’ তাই, এ কথা অস্বীকার করার কোন জো নেই যে, বর্তমান গ্লোবালাইজড ওয়ার্ল্ডে ব্যক্তির চেয়ে ব্যক্তির পদমর্যাদা অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ। অতএব আইডেন্টিটি তৈরি করার একটি সুবর্ণ সুযোগ চাকরিপ্রার্থীদেরকে হাতছানি দিয়ে ডাকছে।

এপিজে আবদুল কালাম বলেছিলেন, ‘‘Success is when your 'signature' changes to 'autograph'.’’ স্বাক্ষর যখন অটোগ্রাফে রূপান্তরিত হয় সেটিকে সাফল্য বলে। স্বাক্ষরকে অটোগ্রাফে রূপান্তর করার দুর্দান্ত সুযোগ তৈরি হয়েছে।

বিসিএসের প্রস্তুতি মূলত all-inclusive। অতএব, ভালোভাবে বিসিএসের প্রস্তুতি নিলে বাংলাদেশের অন্য যেকোনো পরীক্ষা যেমন ব্যাংক, নন ক্যাডার, প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগ, এনটিআরসিএ ইত্যাদির জন্যও ভালো একটা প্রস্তুতি নেয়া হয়ে যায়।

উদ্যোক্তা হওয়ার বিষয়টিকে আমি সবসময় সাধুবাদ জানাই। বাংলাদেশের বর্তমান ডেমোগ্রাফিক ডিভিডেন্ডকে (Demographic Dividend) যথাযথভাবে কাজে লাগানোর জন্য উদ্যোক্তা হওয়ার কোনো বিকল্প নেই। তবে যদি কারো উদ্যোক্তা হওয়ার সুযোগ এবং সক্ষমতা না থাকে তাহলে সে এই সময়টি চাকুরি পরীক্ষার প্রস্তুতিতেই ভালোভাবে সময় কাটানো উচিত।

আমার যদি বিসিএস প্রার্থী একটি ছোট ভাই থাকতো! তাহলে এ মুহূর্তে আমি তাকে সব কাজ থেকে অব্যহতি দিয়ে একটি রুমে আবদ্ধ করে রাখতাম। প্রয়োজনে হাজার পঞ্চাশেক টাকা তার পেছনে বিনিয়োগ করতাম। মোবাইল ফোন, সোশ্যাল মিডিয়া, সকল ধরনের রিলেশনশিপ এবং ফেসবুক থেকে একদমই দূরে সরিয়ে তাকে প্রচণ্ডভাবে টেক্সট বইমুখী করতাম। আমি তার সুপ্ত সম্ভাবনাময় প্রতিভাকে সাফল্যে রূপান্তরের জন্য যা করণীয় সবই করতাম।

Time is the best healer. সময় সবচেয়ে বড় নিরাময়কারী। আমি জানি, এ সময় অনেক শিক্ষার্থীরাই প্রচণ্ডভাবে আর্থ-সামাজিক দুর্বিপাকে আছে। এই হতাশা থেকে সম্পূর্ণভাবে ঘুরে দাঁড়াতে হবে। মনে রাখা উচিত, সময় গেলে সাধন হবে না।

আমার অভিজ্ঞতা থেকে দেখেছি, চাকরিপ্রার্থীদের দিকে তাদের বাবা-মা, আত্মীয়-স্বজন ও এলাকাবাসী তীর্থের কাকের মতো তাকিয়ে থাকে। একটা বড় সুসংবাদ শুনতে চান তারা। অতএব, নিজের প্রিয় স্বজনদেরকে একটি গৌরবময় সুখবর যারা দিতে চান, আপনার বংশধরদের কাছে আপনার একটি সম্মানজনক পদবী উপহার দিতে চান, তারা সর্বাত্মকভাবে এ যুদ্ধে নেমে পড়ুন।

লেখক: একাডেমিক উপদেষ্টা, অদিতি লিমিটেড