দেশে যুগোপযোগী শিক্ষা ব্যবস্থার অভাব, বাড়ছে বেকারত্ব

চাকরি প্রত্যাশিত মানুষ
চাকরি প্রত্যাশিত মানুষ

আমাদের দেশের বেশিরভাগ শিক্ষার্থীদের শিক্ষাজীবন অতিবাহিত হয় গতানুগতিক ধারার শিক্ষা অর্জনের মধ্যে দিয়ে। বর্তমান শিক্ষা ব্যবস্থায় সামান্য মুখস্থ বিদ্যা পড়া দিয়ে পরীক্ষা দিয়েই শিক্ষার্থীরা অর্জন করছে একের পর এক সার্টিফিকেট। দেশে উচ্চশিক্ষিত ছেলেমেয়ের অভাব নেই। স্নাতক পাশ করেই শিক্ষার্থীরা জীবিকার জন্য চাকরি খুঁজছে কিন্তু চাকরির বাজারে গিয়ে চাকরি পাচ্ছে না বেশিরভাগ শিক্ষার্থী।

কারণ কর্মসংস্থান এর জন্য প্রয়োজনীয় দক্ষতা অর্জন করতে পারছে না শিক্ষার্থীরা, এছাড়া  আমাদের দেশের শিক্ষা ব্যবস্থায় ব্যবহারিক চর্চা একেবারে নেই বললেই চলে। শিক্ষার্থীদের একটি নির্দিষ্ট ছকের ভেতর দিয়ে পার হতে হয়, ফলে উচ্চশিক্ষিত হয়েও তাত্ত্বিক জ্ঞানকে বাস্তবে রূপ দিতে না পারায় চাকরির বাজারে পিছিয়ে পড়ছে অধিকাংশ শিক্ষার্থী। এর জন্য পুরো দায়ী আমাদের দেশের শিক্ষা ব্যবস্থা।

দেশের প্রচলিত শিক্ষা ব্যবস্থা শিক্ষার্থীদের চাকরির বাজারের চাহিদা পূরণ করতে ব্যর্থ হচ্ছে। একটু ভালো করে লক্ষ্যে করলে দেখা যায়, অধিকাংশ শিক্ষার্থীর পড়ালেখার মূল উদ্দেশ্য একটা  ভালো চাকরি করা, জ্ঞান অর্জন মূখ্য নয়। তাদের কাছে জীবিকায় টিকে থাকাই মূখ্য বিষয়। তাই আমাদের প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা কর্মজীবনের জন্য পরিপূর্ণ রূপ তৈরি করতে পারছে না। 

প্রতিবছর দেশের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো থেকে লক্ষ লক্ষ শিক্ষার্থী ডিগ্রি অর্জন করে বের হয় কিন্তু প্রশ্ন হলো এদের ভেতর কতজন চাকরির জন্য উপযুক্ত শিক্ষা অর্জন করতে পেরেছে। আমাদের দেশের শিক্ষার্থীরা পাশ করে সার্টিফিকেট নিয়ে  বের হলেও বেশিরভাগ শিক্ষার্থী এখন ও ইংরেজিতে ভালো করে চিঠি লিখতে পারে না, এছাড়া  ইংরেজিতে কথা বলতে পারে না, চাকরির বাজারে মৌখিক পরীক্ষায় ইংরেজিতে বিভিন্ন প্রশ্নের সঠিকভাবে উত্তর করতে পারছে না।

দক্ষ মানবসম্পদ তৈরি করতে ব্যর্থ হচ্ছে দেশের শিক্ষা ব্যবস্থা, বাড়ছে উচ্চশিক্ষিত বেকার। এছাড়া  দেশের বিশ্ববিদ্যালয় গুলোতেও চাহিদা অনুযায়ী দিতে পারছে না উপযুক্ত শিক্ষা। আবার শিক্ষায় কম বিনিয়োগের কারণে দেশের শিক্ষা ব্যবস্থা নিম্ন মানে পরিণত হয়েছে।

এছাড়া  স্কুল, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয় গুলোতে মানহীনতার পাশাপাশি প্রশিক্ষণের অভাব, দক্ষ জনবলের ঘাটতি, কর্মক্ষেত্রে তরুণদের পেছনে ফেলছে। কর্মক্ষেত্রে টিকে থাকার জন্য শিক্ষার্থীদের যেসব দক্ষতা প্রয়োজন সেগুলো পাচ্ছে না বর্তমান শিক্ষা ব্যবস্থা থেকে।

বর্তমান শিক্ষা ব্যবস্থা যাচ্ছে একদিকে চাকরির বাজার যাচ্ছে অন্যদিকে ফলাফলে চাকরির বাজারে পরাজিত হচ্ছে শিক্ষার্থীরা। আবার অনেক সময়  চাকরি দেওয়ার ক্ষেত্রে স্বজনপ্রীতি দৃষ্টিগোচর হয়।ঘুষ দিয়ে চাকরি হয়ে যাচ্ছে অনেক শিক্ষার্থীর ফলে সঠিক মূল্যায়নের বিপরীতে সৃষ্টি হচ্ছে বৈষম্য।

আবার দেশের কর্মসংস্থানের পরিধিও বিস্তৃত নয়। বর্তমানে স্নাতক পাশ শেষে অনেক শিক্ষার্থী উদ্যোক্তা হয়েছে যা এক নতুন ট্রেন্ড কিন্তু বেশিরভাগ উদ্যোক্তার মিলছে না আশানুরূপ সাফল্য। অনলাইন ব্যবসা করলে দেখা যায় অধিকাংশ ভুয়া মালামাল দেয়। এজন্য আস্থা হারাচ্ছে ক্রেতারা।ফলে উদ্যোক্তাদের টিকে থাকা কঠিন হয়ে পড়েছে।

অন্যদিকে প্রতিবছর আমাদের  দেশের শিল্প-প্রতিষ্ঠান গুলো শত কোটি টাকা আয় করছে কিন্তু তাদের নেই কোনো উপযুক্ত প্রশিক্ষণ কেন্দ্র এছাড়া দেশের উন্নতিতে ভূমিকা  রাখা গবেষণা খাতেও রয়েছে বিরাট প্রতিবন্ধকতা, ফলে দক্ষ জনবলের অভাব লক্ষ্যে করা যায়।

এছাড়া বিশ্বায়নের যুগে প্রযুক্তির যথাযথ ব্যবহার অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ কিন্তু আমাদের দেশের অধিকাংশ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান গুলোতে আইসিটি  বিষয়ে দেওয়া হয় না হাতে-কলমে শিক্ষা। বেশিরভাগ স্কুল কলেজে এই বিষয়ের পড়া পাঠ্যবইয়ের ভিতর সীমাবদ্ধ থাকে, ফলে মুখস্থ বিদ্যায় ঝুঁকছে শিক্ষার্থীরা। এছাড়া অনেক প্রতিষ্ঠানে নেই আইসিটি বিষয়ের শিক্ষক, আবার শিক্ষক থাকলেও রয়েছে যথাযথ প্রশিক্ষণের অভাব, নেই ভালো ল্যাব। ফলে আধুনিকতার ছোঁয়া থেকে বঞ্চিত হচ্ছে দেশের তরুণ প্রজন্ম।

এছাড়া দেশের গ্রামের শিক্ষার্থীদের সাথে শহরের শিক্ষার্থীদের মধ্যে রয়েছে এক ধরনের বৈষম্য। শহরে শিক্ষক, শিক্ষার আনুষঙ্গিক উপকরণ সহজলভ্য হলেও গ্রামের অধিকাংশ শিক্ষার্থী শহরের মতো সুযোগ সুবিধা থেকে বঞ্চিত। এছাড়া দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে অনেক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে নেই শিক্ষার আসল পরিবেশ ফলে শহরের শিক্ষার্থীদের তুলনায় গ্রামের শিক্ষার্থীরা অনেক ক্ষেত্রে পিছিয়ে পড়ছে। 

আমাদের দেশে অনেক বাবা-মা অতিরিক্ত অর্থ ব্যয় করে সন্তানকে প্রাইভেট  শিক্ষকের কাছে পাঠান। এক্ষেত্রে অস্বচ্ছল পরিবারের ছেলেমেয়েরা এ প্রতিযোগিতায় পিছিয়ে পড়ছে। এছাড়া  আমাদের দেশের শিক্ষার্থীরা এখন জিপিএ নির্ভর, ফলে শিক্ষার আসল উদ্দেশ্য অর্জিত হচ্ছে না। প্রচলিত শিক্ষা ব্যবস্থার ছক থেকে বেরিয়ে যুগোপযোগী শিক্ষা ব্যবস্থা তৈরি করতে হবে, কর্মজীবনের জন্য পরিপূর্ণ শিক্ষার ব্যবস্থা করতে হবে, বাড়াতে হবে কর্মসংস্থান। তবেই দেশে চাকরির বাজারের চাহিদা মিটবে এবং দেশের উন্নয়ন ত্বরান্বিত হবে।