তুরস্কে একসঙ্গে ৩৩৭ জনের যাবজ্জীবন কারাদণ্ড

তুরস্কে ব্যর্থ সামরিক অভ্যুত্থানের পর আটককৃতদের কয়েকজন
তুরস্কে ব্যর্থ সামরিক অভ্যুত্থানের পর আটককৃতদের কয়েকজন

২০১৬ সালের জুলাই মাসে এক অভ্যুত্থানের মাধ্যমে এরদোয়ান সরকারকে উৎখাতের চক্রান্তে যুক্ত থাকার অভিযোগে ৩৩৭ জন সেনা কর্মকর্তা এবং অন্যান্য ব্যক্তিকে যাবজ্জীবন সাজা দিয়েছেন তুরস্কের আদালত। প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়েপ এরদোয়ানকে উৎখাত করার এই ষড়যন্ত্রে জড়িত থাকার জন্য প্রায় পাঁচশো মানুষের বিরুদ্ধে অভিযোগ আনা হয়েছিল, যাদের অনেকে এখনো পলাতক।

এরদোয়ান বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থানরত ধর্মীয় নেতা ফেতুল্লাহ গুলেন ছিলেন এই চক্রান্তের মূল হোতা। তবে তিনি এই ঘটনায় জড়িত থাকার কথা অস্বীকার করেন। অভিযোগে বলা হয়, আঙ্কারার কাছে আকিনঞ্চি বিমানঘাঁটি থেকে এই ষড়যন্ত্র পরিচালনা করা হয়। তুরস্কের সবচেয়ে বড় আদালতের এজলাসে যখন বিচারক আজ রায় পড়ে শোনাচ্ছিলেন, তখন সেখানে ছিল চাপা উত্তেজনা।

আদালত কক্ষে হাজির করা হয়েছিল অভিযুক্তদের। তাদের বিরুদ্ধে প্রেসিডেন্ট এরদোয়ানকে হত্যার মাধ্যমে সরকার উৎখাতের ষড়যন্ত্রের যুক্ত থাকার অভিযোগ আনা হয়েছিল। এ মামলার বিচার শুরু হয়েছিল ২০১৭ সালে। অভিযুক্তদের মধ্যে আছেন ২৫ জন জেনারেল এবং দশ জন বেসামরিক ব্যক্তি। যাদের দোষী সাব্যস্ত করা হয়েছে তাদের মধ্যে আছেন অনেক সেনা অফিসার। আছেন তুরস্কের বিমান বাহিনীর কয়েকজন পাইলট, যারা আঙ্কারায় পার্লামেন্ট ভবনে বোমা বর্ষণ করেছিলেন।

চার বছর আগের সেই ব্যর্থ অভ্যুত্থান প্রচেষ্টার সময় নিহত হয় ২৫১ জন এবং আহত হয় দুই হাজারের ওপর মানুষ। এরদোয়ান সেসময় একটি অবকাশযাপন কেন্দ্রে ছুটি কাটাচ্ছিলেন। অভিযোগে বলা হয়, ওই অভ্যুত্থানে প্রেসিডেন্ট এরদোয়ানকে হত্যার এবং দেশটির গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনাগুলো দখলের চক্রান্ত করা হয়। এটি ছিল তুরস্কের রাজনৈতিক ইতিহাসে এক গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্ত।

অভ্যুত্থান বিফল হওয়ার পর দেশজুড়ে হাজার হাজার মানুষকে গ্রেফতার করা হয়। শিক্ষক ও বিচারপতিসহ প্রায় এক লাখ সরকারি কর্মচারীকে চাকুরিচ্যুত করা হয়। অভিযোগ করা হয়, তাদের সাথে গুলেনের যোগাযোগ ছিল। দেশজুড়ে জরুরি অবস্থা জারি করা হয়। তখন অভিযোগ উঠেছিল, প্রেসিডেন্ট এরদোয়ান এই সুযোগে শুদ্ধি অভিযান চালিয়ে তুরস্কে তার রাজনৈতিক বিরোধীদের নির্মূল করার চেষ্টা করছেন।

কিন্তু সরকার বলেছিল, তুরস্কের জাতীয় নিরাপত্তার স্বার্থেই তাদেরকে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান থেকে বহিষ্কারের প্রয়োজন ছিল। গুলেনের নেতৃত্বাধীন হিজমেত আন্দোলন গোষ্ঠীকে এরদোয়ান ‘সন্ত্রাসী’ সংগঠন বলে আখ্যা দিয়েছিলেন। ব্যর্থ অভ্যুত্থানের পর থেকে ৭৯ বছর বয়স্ক ধর্মীয় নেতা গুলেন যুক্তরাষ্ট্রের পেনসিলভেনিয়ায় বসবাস করছেন। তুরস্ক সরকার তাকে প্রত্যাপর্ণের দাবি জানিয়েছে বলে বিবিসি বাংলার প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে।