উচ্চশিক্ষা: কাভার লেটার কীভাবে লিখবেন?

শুধু প্রশ্ন নয়, বিষয়টি নিয়ে মাঝে মধ্যে আমাকে দেখতে হয়। কাভার লেটারগুলো সম্পাদনা করতে গিয়ে বুঝতে পারি, আমাদের সম্ভবত এই জায়গাটিতে একটু যত্নশীল হওয়া প্রয়োজন। আপনার সিভি হয়তো খুবই ভাল. কিন্তু এই কাভার লেটার বা মোটিভেশন লেটারটির কারণে, আপনার সম্ভবনাকে হয়তো দূরে ঠেলে দিতে পারে। তাই ভাল একটি কাভার লেটার খুলে দিতে পারে আপনার উচ্চশিক্ষার প্রবেশ দ্বার।

দেখুন, আপনি নিশ্চয় টেলিভিশন কিংবা ইউটিউবে সিনেমা/নাটকের ট্রেলার দেখেছেন। সিনেমা দেখার আকর্ষণ করার জন্য আপনাকে জিস্ট বিষয়গুলো এই ট্রেলারে যেমন তুলে ধরা হয়, ঠিক তেমনি কাভার লেটার আপনার সিভির ট্রেলার। যে ট্রেলারে থাকবে কেবলই গুরুত্বপূর্ণ বাক্য।

বিদেশে সুপারভাইজার সাধারণত অনেক ব্যস্ত থাকেন। প্রতিদিন কয়েক ডজন ই-মেইল চালাচালি করতে হয়। সারা বিশ্ব থেকে আপনার মত অনেকেই মাস্টার্স কিংবা পিএইচডি করার জন্য তার কাছে ইমেল করছে। আপনি মেইলের প্রথমে এমন কিছু বললেন যার জন্য হয়তো আপনার মূল্যবান সিভিটা তার দেখার ইচ্ছে হলো না। তাই কাভার লেটার হতে হবে, সিভির সারাংশ এবং মার্জিত।

কাভার লেটার লেখার ক্ষেত্রে যেসব বিষয়ের প্রতি খেয়াল রাখবেন-

আমাদের দেশে সাধারণত শিক্ষকদের স্যার বলে সম্বোধন করি। তাই আমরা যখন উচ্চশিক্ষার জন্য দেশের বাহিরে আবেদন করি, সেখানেও Dear Sir/Madam বলে সম্বোধন করি, যা ভিনদেশী অধ্যাপকদের কাছে দৃষ্টিকটু। অনেক সুপারভাইজারই এই স্যার বা ম্যাডাম সম্বোধন দেখে আপনার ইমেইলের পরবর্তী তথ্য জানতে অনীহা প্রকাশ করতে পারেন কিংবা আপনার মেইলটি ট্রাস বিনে যাওয়ার পথ সুগম করে দেয়। দেশের বাহিরের অধ্যাপক/সুপারভাইজারদের নূন্যতম যোগ্যতা থাকে পিএইচডি। তাই অধ্যাপকদের সম্বোধন করার জন্য Dr.X দিয়ে শুরু করুন।

এরপর প্রথম লাইনটি নিজের পরিচয় না দিয়ে, সরাসরি লিখুন আপনি কেন তাকে ইমেইল করেছেন। লাইনটি হতে পারে এই রকম, “I am interested to apply for the masters/PhD position in your laboratory that was advertised on website (.....)। অথবা আপনি যদি কোন আর্টিকেল পড়ে তাকে খুঁজে পেয়ে থাকেন তাহলে লিখুন, I have read several of your recent papers on this topic, including: A/B/C (authors name) et al., জার্নালের নাম (ইটালিক) এবং সাল (ব্যাকেটে)। এরপর দ্বিতীয় লাইনে লিখুন, আপনার বর্তমান পরিচয়, কোথায় পড়াশুনা করেছেন কিংবা গবেষণা করছেন সেইসব তথ্য। লাইনটি হতে পারে এই রকম, I recently graduated with a BSc. in Y (subject) from X University in Z (country).

দ্বিতীয় অনুচ্ছেদে লিখতে হবে, আপনি কেন তার ল্যাবে মাস্টার্স বা পিএইচডি করার জন্য যোগ্য। এটি খুবই স্ট্রং পয়েন্ট, যে আপনাকে অধ্যাপককে কনভিন্সড করতে হলে, অবশ্যই আপনার একাডেমিক গুণ বা দক্ষতা তুলে ধরতে হবে। কিভাবে আপনি নিজেকে গবেষক হিসেবে তৈরি করেছেন, তা তুলে ধরা কাম্য। এখানে ২/৩ টি বাক্যের বেশি হওয়া উচিত নয়।

তৃতীয় অনুচ্ছেদে আপনাকে লিখতে হবে, আপনার কোন গবেষণাপত্র আছে কী না, কয়টি আছে, আপনার কোন একাডেমিক আওয়ার্ড আছে কী না এইসব ১/২ বাক্যের মধ্যে শেষ করা।

চতুর্থ বা সবশেষ অনুচ্ছেদে আপনাকে সারাংশ টানতে হবে।সেখানে আপনি লিখতে পারেন My research/academic experiences and technical skills I could bring to your lab and written communication skills would make me an excellent match for this position. আপনার মূল্যবান এই পত্র পড়ার জন্য আপনি অবশ্যই অধ্যাপককে ধন্যবাদ দিবেন। আপনি যে সিভি ই-মেইলের সাথে যুক্ত করেছেন, সেই কথা জানাবেন।

আপনি কোন সাক্ষাতকার দিতে আগ্রহী কী না সেটি লিখতে ভুলবেন না। এরপর কীভাবে অধ্যাপকের সাথে যোগাযোগ রক্ষা করতে চান, তা লিখবেন। যেমন Please feel free to contact me (আপনার ই-মেইল আড্রেস)। আর সবশেষে আপনার নাম-ঠিকানা দিবেন।

আমার বিশ্বাস এই নিয়ম অনুসরণ করলে, অনেক অধ্যাপকই আপনার ই-মেইল পড়ার আগ্রহ থাকবে। আপনার উচ্চশিক্ষার পথ সুগম হবে বলে বিশ্বাস করি।

লেখক: পিএইচডি গবেষক, ওসাকা বিশ্ববিদ্যালয়, জাপান