আত্মহত্যা করা সেই কর্মীর পরিবারের লাখ টাকা ঋণ পরিশোধ রাব্বানীদের

আর্থিক সংকট আর মানসিকভাবে ভেঙে পড়ার বিষয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে পোস্ট দিয়ে আত্মহত্যার পথ বেছে নেওয়া নেত্রকোনার কমলাকান্দা উপজেলার ছাত্রলীগ কর্মী মামুনের পরিবারের পাশে দাঁড়িয়েছে টিম পজিটিভ বাংলাদেশ (টিপিবি)।

আজ শুক্রবার মামুনের পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে দেখা করতে যান সংগঠনটির প্রতিষ্ঠাতা গোলাম রাব্বানীসহ অন্যান্যা সদস্যরা। এসময় মামুনের পরিবার এক লাখ টাকার ঋণ পরিশোধ করেছে টিপিবি। তাছাড়া সংগঠনটির পক্ষ থেকে মামুনের মায়ের ইচ্ছে অনুযায়ী, তাকে শিগগির একটি বাছুরসহ দুধ দেয়া গাভী উপহার দেয়া হবে বলে জানিয়েছেন রাব্বানী।

জানা যায়, আজ বিকেলে গোলাম রাব্বানীর নেতৃত্বে টিপিবি সদস্যরা মামুনের পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে দেখা করতে যান। এসময় কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদের (ডাকসু) সদ্য সাবেক সাধারণ সম্পাদক (জিএস) গোলাম রাব্বানী মামুনের বাবাসহ পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে কথা বলেন।

এসময় তিনি বলেন, নেত্রকোনার কলমাকান্দা উপজেলার কমিটি নেই আজ ২৩ বছর! দুর্গম হাওর এলাকার নিন্মবিত্ত পরিবারের বড় সন্তান মামুন, একটা পরিচয়ের আশায় বছরের পর বছর ছাত্র রাজনীতি করতে করতে ঋণগ্রস্ত ও হতাশাগ্রস্ত মামুন, মানসিক চাপ থেকে চির মুক্তির পথ খুঁজে নিতে আত্মহত্যা করেছে। সারাদেশে এমন মানসিক চাপে আছে লাখো মামুন! এই দায় কার?

রাব্বানী জানান, টিপিবির পক্ষ থেকে মামুনের বাবাকে ‘মামুন স্টোর’ নামে একটি মুদি দোকান, সাথে বিকাশের এজেন্ট করে দেয়ার পরিকল্পনা ছিল। সেজন্য সকল প্রস্তুতিও ছিলো। কিন্তু উনি অসুস্থ শরীর আর মামুনের স্মৃতি নিয়ে দোকান করতে অপারগতা প্রকাশ করেন। পরে পরিবার ও স্থানীয়দের সাথে কথা বলে জানলাম, এই মুহুর্তে তাদের মূল সমস্যা এক লাখ টাকা ঋণের বোঝা। যার বেশিরভাগই মামুন রাজনীতির জন্য ব্যয় করেছে। ঋণটুকু শোধ হলে তারা খেয়ে পরে বাঁচতে পারবে। তাই আমরা মামুনের পরিবারের ঋণের এক লাখ টাকা ‘দেশরত্ন শেখ হাসিনার ভালোবাসার উপহার’ হিসেবে মামুনের বাবা-মায়ের হাতে তুলে দিয়েছি।

তিনি আরও জানান, শিগগির মামুনের মায়ের ইচ্ছে অনুযায়ী, টিপিবির পক্ষ থেকে দেশরত্ন শেখ হাসিনার আরেকটি উপহার বাছুরসহ একটি দুধ দেয়া গাভী উপহার দেয়া হবে। এছাড়া যেকোনো নৈতিক ও যৌক্তিক প্রয়োজনে মামুনের পরিবারের পাশে ‘টিম পজিটিভ বাংলাদেশ’ থাকবে বলে জানান তিনি।

প্রসঙ্গত, দীর্ঘদিন ধরেই আওয়ামী লীগের সহযোগী সংগঠন ছাত্রলীগের কর্মী হয়ে কমলাকান্দা উপজেলা বিভিন্ন মিটিং মিছিল থেকে শুরু করে দলীয় বিভিন্ন কাজেই প্রতিনিয়ত অংশগ্রহণ করে আসছিলো আল মামুন। তবে পরিবারের আর্থিক অবস্থা খারাপ হওয়ায় প্রতিনিয়তই হিমশিম খেতে হতো তাকে। পরিবারের বড় ছেলে হয়েও পরিবারের জন্য কোন কিছু করতে না পারায় প্রতিনিয়তই হতাশায় ভুগতো। স্থানীয়রা সব সময় মামুনকে সহায়তার পাশাপাশি মানসিক হতাশা কাটাতে পরামর্শ দিয়েছেন। পাঁচ সদস্যের পরিবার মামুনের। বাবা চায়ের দোকানদার এবং বোন গার্মেন্টস শ্রমিক হিসেবে কাজ করছেন।

মামুন নিজেও টিউশনি ও টিফিনের টাকা বাঁচিয়ে পরিবারের দুবেলা দুমুঠো ভাত জোগাড়ের চেষ্টায় থাকতো সবসময়। গত দুই বছরে পরিবারের আর্থিক অবস্থা দিনে দিনে খারাপের দিকে যেতে থাকে। পরিবর্তী করুণ অবস্থা দেখে গত বছরের ডিসেম্বরের ১ তারিখ রংছাতি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান তাহেরা খাতুন নিজে প্রধানমন্ত্রী বরাবর মামুনের পরিবারের জন্য সাহায্যের আবেদন করেন।

সর্বশেষ গত ২৫ অক্টোবর আত্মহত্যার পূর্বে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে পরিবারের আর্থিক সংকট কথা জানিয়ে প্রধানমন্ত্রীর কাছে সহায়তায় একটি পোস্ট করেন। এর পরপরই নিজ ঘরেই গলায় রশি বেঁধে আত্মহত্যা করেন এই ছাত্রলীগ কর্মী।