সুদের টাকার বিনিময়ে স্ত্রীকে ঋণদাতার হাতে তুলে দেন স্বামী!

সুদের টাকার বিনিময়ে স্ত্রীকে ঋণদাতার হাতে তুলে দেন স্বামী
সুদের টাকার বিনিময়ে স্ত্রীকে ঋণদাতার হাতে তুলে দেন স্বামী

সুদের টাকা পরিশোধ করতে না পেরে নিজের স্ত্রীকে ঋণদাতার হাতে তুলে দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে এক স্বামীর বিরুদ্ধে। এরপর ওই ভুক্তভোগী নারীকে জোরপূর্বক ধর্মান্তরিত করে বিয়েও করেন সেই ঋণদাতা। মাগুরার মহম্মদপুর উপজেলায় এ ঘটনা ঘটেছে।

জানা গেছে, বছর আট আগে উপজেলার রাজাপুর গ্রামের পান ব্যবসায়ী সুজয় বিশ্বাসের সঙ্গে ভুক্তভোগীর বিয়ে হয়। এক বছর পর তাদের একটি মেয়ে হয়। তবে ২০১৮ সালে সুদের টাকা পরিশোধে ব্যর্থ হয়ে তার স্বামী সুজয় একই এলাকার ইসমাইল মণ্ডলের হাতে তাকে তুলে দেন বলে অভিযোগ ওই নারীর।

এরপর নির্যাতনের মুখে গত ৩১ আগস্ট ইসমাইলকে তালাক দিয়ে মাগুরা শহরের এক নারীর কাছে আশ্রয় নেন তিনি। এক ক্লিনিকে সেবিকার চাকরিও করছেন ভুক্তভোগী এ নারী। তবে ইসমাইল তার পিছু না ছাড়ায় মীমাংসার জন্য জেলা লিগ্যাল এইড কর্মকর্তার দারস্থ হয়েছেন ওই নারী।

জেলা লিগ্যাল এইডের আইনজীবী শাহিনা আক্তার বলেন, ‘তালাক দেওয়ার পরও যদি কোনো ব্যক্তি তার সাবেক স্ত্রীকে উত্যক্ত করে অথবা ভয়ভীতি দেখায় তবে সেটা বড় ধরনের ফৌজদারী অপরাধ হিসেবে বিবেচিত হবে।’

ভুক্তভোগী ওই নারী জানান, আট বছর আগে পাশের মহম্মদপুর উপজেলার রাজাপুর গ্রামের পান ব্যবসায়ী সুজয় বিশ্বাসের সঙ্গে তার বিয়ে হয়। বিয়ের এক বছর পর তাদের একটি মেয়ে জন্মগ্রহণ করে। ছোটখাট টানাপড়েন থাকলেও সন্তান-স্বামীকে নিয়ে তারা ভালোভাবেই জীবন কাটাচ্ছিলেন। বছর দুয়েক আগে হঠাৎ তিনি জানতে পারেন, একই এলাকার ইসমাইল মণ্ডলের কাছ থেকে তার স্বামী সুদে টাকা ধার নিয়েছেন।

ইসমাইলের দাবি অনুযায়ী সুদ-আসলে যার পরিমাণ নয় লাখ টাকা। ইসমাইল তার স্বামীকে টাকার পরিশোধের জন্য নানাভাবে চাপ সৃষ্টি করেন। মূল টাকা পরিশোধ করলেও তার স্বামী দাবিকৃত সুদের টাকা পরিশোধে ব্যর্থ হন। এক পর্যায়ে ইসমাইল টাকা দিতে না পারলে স্ত্রীকে তার হাতে তুলে দিতে বলেন। চাপে পড়ে চিকিৎসক দেখানোর কথা বলে যশোরে নিয়ে ইসমাইলের হাতে স্ত্রীকে তুলে দেন ওই নারীর স্বামী। এরপর ধর্মন্তারিত করে ইসমাইল তাকে বিয়ে করে প্রথমে ঢাকার এক বাসায় আটকে রেখে স্বামী-স্ত্রী হিসেবে বসবাস করেন। পরে ইসমাইল তাকে মাগুরায় তার গ্রামের বাড়িতে নিয়ে আসেন।

এরপর থেকে ইসমাইল, তার প্রথম স্ত্রী ও ছেলে ভুক্তভোগী নারীর ওপর নানাভাবে মানসিক ও শারীরিক নির্যাতন চালিয়ে আসছেন। তাদের নির্যাতন সহ্য করতে না পেরে প্রায় পাঁচ মাস আগে সেখান থেকে পালিয়ে আসেন তিনি। গত ৩১ অগাস্ট ইসমাইলকে তালাক দেন তিনি। তবে তালাক দিলেও ইসমাইল তার পিছু ছাড়ছেন না, ফোন করাসহ তার কর্মস্থলে এসে নানা ভয়ভীতি দেখাচ্ছেন বলে তার অভিযোগ। এ অবস্থায় তিনি তার হাত থেকে মুক্তি পেতে জেলা লিগ্যাল এইড অফিসে বিষয়টি মীমাংসার জন্য আবেদন করেন। এ নারীর আকুতি পেছনের সব জঞ্জাল থেকে মুক্ত হয়ে একাকি নতুন করে বাঁচতে চান।

স্ত্রীকে অন্যের হাতে তুলে দেওয়ার দায় অস্বীকার করেছেন ওই নারীর প্রথম স্বামী সুজয়। তিনি বলেন, ‘আমি ইসমাইলের কাছ থেকে যে টাকা নিয়েছিলাম তা পরিশোধ করেছি। তারপরও আমার কাছে সুদে আসলে নয় লাখ টাকা দাবি করে ইসমাইল। টাকা দিতে না পারলে বৌকে তার হাতে তুলে দিতে বলে। যশোরে ডাক্তার দেখাতে গেলে দাবিকৃত টাকা দিতে ব্যর্থ হওয়ায় ইসমাইল আমাকে মারধর করে মাস্তান দিয়ে স্ত্রীকে জোর করে তুলে নিয়ে যায়।’

এদিকে তার বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ সত্য নয় দাবি করে ইসমাইল মণ্ডল বলেন, তিনি সুদের কারবার করেন না। জোর করে তুলে নিয়ে বিয়েও করেননি। ‘সে স্বেচ্ছায় ধর্মন্তারিত হয়ে আমাকে বিয়ে করেছে।’ এখন তার এই স্ত্রীকে ফিরে পেতে চান বলেও জানিয়েছেন তিনি।

এ বিষয়ে মাগুরার পুলিশ সুপার খান মুহাম্মদ রেজওয়ান বলেন, ওই নারী এ ঘটনায় পুলিশের কাছে কোনো অভিযোগ করেননি। তিনি অভিযোগ করলে পুলিশ আইনগত ব্যবস্থা নেবে।