ভোগান্তি লাঘব আশ্বাসেই সীমাবদ্ধ, ‘প্রতারণা’ বলছেন জবি শিক্ষার্থীরা

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়

করোনাকালীন সংকটে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের (জবি) শিক্ষার্থীদেরকে একাধিক আশ্বাস দিয়েও পূরণ করেনি বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। শিক্ষার্থীরা বলছেন, বারবার দাবির মুখে বিভিন্ন আশ্বাস দেখিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন শিক্ষার্থীদের সাথে ‘প্রতারণা’ করেছে। করোনায় বাসা ভাড়া সংকট নিরসনে শিক্ষার্থীদের দাবির মুখে গত ১২ জুন এক সদস্য বিশিষ্ট কমিটি গঠন করে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। কমিটিতে ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক প্রক্টর ও মনোবিজ্ঞান বিভাগের চেয়ারম্যান ড. নূর মোহাম্মদ।

কমিটি গঠনের ২৯ দিন পর তিনি বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে শিক্ষার্থীদের একটি তালিকা ও শিক্ষাবৃত্তি দেয়ার সুপারিশ করেন। এরপর চার মাস পার হয়ে গেলেও এর ফল পায়নি শিক্ষার্থীরা। বরঞ্চ, শিক্ষার্থীদের মেস ভাড়া নিয়ে মালিকদের রেষারেষিতে হয়রানি ও থানা-পুলিশ পর্যন্ত ধরনা দিতে হয়েছে। গত ২৭ মে ‘ইন্সট্রুমেন্টাল এক্সেস এ্যাওয়ার্ড’ অর্জনের পর দু’টি পিসিআর মেশিন স্থাপন করে জুলাই থেকে করোনাভাইরাস টেস্ট করার কথা জানানো হয়। ঘোষণার পর চার মাস পেরিয়ে গেলেও এর কোনো প্রক্রিয়া দেখা যায়নি।

এদিকে মেডিকেল সেন্টার আধুনিক ও উন্নত করতে শিক্ষার্থীদের দাবির মুখে গত আগস্ট মাসে বলা হয়, সেপ্টেম্বরের মধ্যে রফিক ভবনের নিচতলায় আধুনিক মেডিকেল সেন্টার স্থাপন করা হবে। আধুনিক মেডিকেল সেন্টারে প্রাথমিক চিকিৎসার সকল সুবিধাসহ রক্ত পরীক্ষা, ইসিজি রুম ও বিভিন্ন ধরনের মেডিকেল সরঞ্জামাদি থাকবে। নারী ও পুরুষের জন্য থাকবে আলাদা ওয়ার্ডে ৫-৬টি শয্যা এবং এসি সংযুক্ত একটি আধুনিক রুম। কিন্তু সেপ্টেম্বর শেষ হয়ে অক্টোবরের শেষ হতে চললো, তবুও আধুনিক মেডিকেল সেন্টারের কাজ শুরুর দেখা পায়নি শিক্ষার্থীরা।

শিক্ষার্থীরা জানিয়েছেন, অনলাইন ক্লাসে শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি নিশ্চিত করতে স্মার্টফোন ও উচ্চগতি সম্পন্ন ইন্টারনেট ব্যবস্থা দেয়ার আশ্বাস তিন মাসেও কার্যকর হয়নি। গত ২০ সেপ্টেম্বর বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ড. মীজানুর রহমান সংবাদমাধ্যমকে জানান, ‘বিশ্ববিদ্যালয় দিবসের পূর্বে সকল শিক্ষার্থীকে প্রাতিষ্ঠানিক ই-মেইল দেওয়া হবে। এ বিষয়ে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।’ এছাড়াও তিনি আরো বলেন, ‘প্রত্যেক শিক্ষার্থী অনলাইন ক্লাসের জন্য ৩০ জিবি করে ডাটাপ্যাক পাবে।’

গত ২০ অক্টোবর বিশ্ববিদ্যালয় দিবস পার হয়ে গেলেও প্রাতিষ্ঠানিক ই-মেইল কিংবা ৩০ জিবি ডাটাপ্যাক, কোনোটাই পায়নি শিক্ষার্থীরা। তাছাড়া বাংলা বর্ষবরণ, মুজিববর্ষ পালন না হওয়ায় এ জন্য বরাদ্দ থাকা টাকা করোনায় ক্ষতিগ্রস্থ শিক্ষার্থীদের উন্নয়নে খরচ করার প্রতিশ্রুতিও রাখেনি বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে জবি ছাত্র অধিকার পরিষদের সংগঠনের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহমুদুল হাসান মিশু বলেন, ‘করোনা মহামারির শুরু থেকেই নানা ধরনের দাবি জানিয়ে আসছে সাধারণ শিক্ষার্থীরা । কিন্তু প্রশাসন শুধু আশ্বাস দিচ্ছে, সাথে নতুন আশ্বাস যুক্ত করছে। ফলাফলের ক্ষেত্রে উদাসীনতা দেখাচ্ছে প্রশাসন। অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়ে আবাসিক ব্যবস্থা থাকার পরেও উনারা উনাদের সাধারণ শিক্ষার্থীদের প্রতি অনেক আন্তরিক। কিন্ত আমাদের আবাসিক ব্যবস্থা না থাকা সত্ত্বেও আন্তরিক না। প্রশাসন যদি এভাবে সাধারণ শিক্ষার্থীদের প্রতি উদাসীন থাকে, প্রতারণা করে, তবে সাধারণ শিক্ষার্থীরা এর প্রতিবাদ করবে ও প্রশাসনের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান নেবে।’

জবি শাখা ছাত্রলীগের সাবেক সহ-সভাপতি ও সম্মেলন প্রস্তুত কমিটির আহবায়ক আশরাফুল ইসলাম টিটন বলেন, ‘প্রশাসনের প্রতি আমাদের কোন আস্থা নেই। তাই প্রশাসন নিয়ে আমাদের কোন মন্তব্য করার ইচ্ছে নেই। সাধারণ শিক্ষার্থীদের অধিকার আদায়ে আমরাও প্রশাসনের কাছে পাঁচ দফা দাবি জানিয়েছিলাম। তারা আমাদেরকেও আশ্বাস দিয়েছিল, কিন্তু তা রাখেনি।’

জবি ছাত্রফ্রন্টের সাধারণ সম্পাদক অনিমেষ রায় বলেন, ‘বর্তমান প্রশাসনের দীর্ঘদিনের দায়িত্ব-জ্ঞানহীনতার ধারাবাহিকতা। আমরা করোনা মহামারিতে সাধারণ শিক্ষার্থীদের দাবি আদায়ের জন্য আন্দোলনে যেতে চেয়েছিলাম। আমাদেরকেও দাবি পূরণের আশ্বাস দিয়েছিল। কিন্তু প্রশাসন যদি এভাবে দায়িত্ব-জ্ঞানহীনভাবে কাজ করতে থাকে, তবে শিক্ষার্থীরা কঠোর আন্দোলনে যাবে। আমরা চিন্তাভাবনা করছি এ বিষয়ে কঠোর অবস্থান নেব।’

সার্বিক বিষয়ে জানতে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ড. মীজানুর রহমানকে মোবাইল ফোনে জিজ্ঞেস করা হলে তিনি বলেন, ‘এসব নিয়ে আমি এভাবে কথা বলতে চাই না, আপনি আমার অফিসে আসেন।’