‘সত্য বললে বুকে গুলি করব, পিঠ দিয়ে বের হবে’

আদালতে ৩ কনস্টেবলের জবানবন্দি

এসআই আকবর হোসেন ভূইয়া
এসআই আকবর হোসেন ভূইয়া

সিলেটের বন্দর বাজার পুলিশ ফাঁড়িতে পুলিশি নির্যাতনে রায়হান আহমদ হত্যার ঘটনার কথা কাউকে না বলতে দুই কনস্টেবলকে গুলি করে মারার হুমকি দিয়েছিলেন ফাঁড়ির তৎকালীন ইনচার্জ ও রায়হান হত্যার ঘটনায় প্রধান সন্দেহভাজন এসআই আকবর হোসেন ভূইয়া।

পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)-এর হাতে মামলার তদন্তভার পাওয়ার পরই ঘটনার সময় ফাঁড়িতে থাকা তিন কনস্টেবল- দেলোয়ার, শামীম ও সাইদুরকে মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের বিচারক জিহাদুর রহমানের খাস কামরায় নেয়া হয়।

আদালতে কনস্টেবল সাইদুর রহমান ও দেলোয়ার হোসেনের ১৬৪ ধারায় দেয়া জবানবন্দিতে এই তথ্য উঠে এসেছে।

জবানবন্দিতে কনস্টেবল সাইদুর রহমান বলেন, ঘটনার দিন রাত ১২টা থেকে ভোর ৪টা পর্যন্ত ফাঁড়ির সেন্ট্রি ডিউটিতে ছিলেন সাইদুর রহমান। জবানবন্দিতে তিনি বলেছেন, রায়হানকে থানায় ধরে নিয়ে আসা এবং নির্যাতনের ঘটনা তিনি দেখেছেন। ফাঁড়ির সেন্ট্রি পোস্ট থেকে তিনি রায়হানের চিৎকার শুনতে পেয়ে রুমের দরজায় দাঁড়িয়ে দেখেন, কনস্টেবল হারুন রায়হানের দুই পা উঁচু করে ধরে রেখেছেন, আকবর ও টিটু লাঠি দিয়ে লোকটির পায়ের পাতায় আঘাত করছেন। তিনি মারধরের কারণ জানতে চাইলে এসআই আকবর বলেন, ‘সে একজন ছিনতাইকারী। সঙ্গে থাকা দুজনের নাম জানতে জিজ্ঞাসাবাদ করছি।’ এ সময় পাশ থেকে এএসআই আশেক এলাহি বলেন, ‘সে পুলিশের সঙ্গে খুব খারাপ ব্যবহার করেছে। পায়ে মারেন, পায়ে মারেন…সমস্যা নাই।’ এ অবস্থায় আকবর সাইদুরকে ধমক দিয়ে সেন্ট্রি পোস্টে ডিউটিতে যেতে বলেন। এরপর তিনি ডিউটিরত অবস্থায় বেশ কয়েকবার রায়হানের চিৎকার শোনেন।

জবানবন্দিতে সাইদুর বলেছেন, ‘পরদিন দুপুর সাড়ে ১২টায় ফাঁড়িতে ডিসি (উপকমিশনার) স্যার আসবেন বলে আমাকে আসতে বলা হয়। আকবর স্যার তখন আমাকে বলেন, “ডিসি স্যার জানতে চাইলে বলবা রাতে ফাঁড়িতে কোনো লোক এনে নির্যাতন করা হয় নাই। সে (রায়হান) কাস্টঘর থেকে গণপিটুনি খেয়ে ধরা পড়েছে, তাকে (রায়হান) সরাসরি হাসপাতালে নেওয়া হয়েছে।” এই কথা বলে আকবর স্যার হুমকি দেন। আকবর স্যার বলেন, “আমি যা বলব, তাই বলবে। সত্য কথা বললে বুকে গুলি করব, পিঠ দিয়ে বের হবে।” এই হুমকি দিয়ে আকবর স্যার আমার বুকে হাত বুলান।’

সাইদুরের মতো একইভাবে এসআই আকবর কনস্টেবল দেলোয়ার হোসেনকেও হুমকি দিয়েছেন বলে তিনি আদালতে দেয়া জবানবন্দিতে জানিয়েছেন।

দেলোয়ার আদালতে বলেন, কনস্টেবল তৌহিদ ফাঁড়ির সেন্ট্রি পোস্টে তার সঙ্গে গল্প করছিল এ সময় আকবর স্যার তৌহিদকে ডেকে নেন। এরপর তৌহিদ এসে জানায়, আকবর স্যার তার মোবাইল নিয়ে রায়হানকে দিয়ে তার বাসায় কল দিয়ে ১০ হাজার টাকা নিয়ে ফাঁড়িতে আসতে বলেছেন। এরপর আকবর স্যার এএসআই আশেক এলাহীকে বলেন, আমি ঘুমিয়ে গেলাম। কিছুক্ষণ পর রায়হানকে হাসপাতালে নিয়ে যেও।

ফজরের আজানের পরপর রায়হানের চাচা এলে তাকে নিয়ে নামাজে যান এএসআই আশেক এলাহী। নামাজ থেকে এসে আশেক এলাহী রায়হানের চাচাকে বলেন, স্যার ঘুমিয়ে গেছেন আপনি সকাল ৯টার পর আসেন। সকাল ৬টা ২০ মিনিটের দিকে এএসআই আশেক এলাহী ও কনস্টেবল হারুন রায়হানকে ধরে বের করে নিয়ে আসেন এবং সিএনজি আটোরিকশায় তোলেন। তারা আমাকে জানান তাকে ওসমানী হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। আধাঘণ্টা পর আকবর স্যার ঘুম থেকে উঠে তাড়াহুড়া করে ফাঁড়ি থেকে বেরিয়ে যান।