ভ্রমণে চবির দুই ছাত্রী, বাসা থেকে লাখ টাকার স্বর্ণালঙ্কার লুট

পাহাড়ীকা হাউজিং সোসাইটির কামাল উদ্দিন ভবন
পাহাড়ীকা হাউজিং সোসাইটির কামাল উদ্দিন ভবন

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় (চবি) সাউথ ক্যাম্পাসের পাহাড়ীকা হাউজিং সোসাইটির কামাল উদ্দিন ভবনের একটি কক্ষ থেকে চবির দুই ছাত্রীর আনুমানিক সোয়া লাখ টাকার মালামাল চুরির ঘটনা ঘটেছে। শিক্ষার্থী দুজন হলেন, আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের শিরিণ আক্তার ও রসায়ন বিভাগের সৈয়দা সাদিয়া রহমান।

এ ঘটনায় গত ৫ অক্টোবর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অফিসে অভিযোগ পত্র জমা দেয় ওই দুই ছাত্রী। এছাড়া, একই দিনে হাটহাজারী মডেল থানায় অভিযোগ দায়ের করে ভুক্তভোগী ছাত্রী শিরিণ আক্তার। হাটহাজারী মডেল থানা পুলিশ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর ড. রবিউল হাসান ভূঁইয়া উভয়েই অভিযোগ প্রাপ্তির বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

হাটহাজারী থানায় দায়েরকৃত অভিযোগ পত্রে বলা হয়, গত ৩০ সেপ্টেম্বর আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের শিক্ষার্থী শিরিণ আক্তার এবং ১ অক্টোবর শিরিণ আক্তারের রুমমেট সৈয়দা সাদিয়া রহমান যথাক্রমে বান্দরবান পার্বত্য জেলা এবং কক্সবাজারে ভ্রমণে যায়। পরে, ২ অক্টোবর সৈয়দা সাদিয়া রহমান বাসায় ফিরে তালা দেওয়া দরজা খুলে ভেতরে প্রবেশ করে দেখে যে, ভেতরের জিনিসপত্র/মালামাল ছড়ানো ছেটান ও এলোমেলো।

পরে, তাৎক্ষণিকভাবে ওই ছাত্রী কক্ষের দেওয়ালে আটকানো তার ব্যাগ সন্ধান করে ব্যাগে রক্ষিত একটি স্বর্ণের আংটি ও নগদ কিছু টাকার অনুপস্থিতি টের পায়। যার আনুমানিক মূল্য ১১ হাজার টাকা। পরে ওই ছাত্রী তার রুমমেট শিরিণ আক্তারকে মুঠোফোনে বিষয়টি অবহিত করলে শিরিণ আক্তার ৪ অক্টোবর ওই বাসায় পৌঁছে।

শিরিণ আক্তার বাসায় পৌঁছে দেখে, তার ট্রলিব্যাগে রক্ষিত একটি স্বর্ণের চেইন, একটি লকেট, দুই জোড়া স্বর্ণের কানের দুল, একটি ডায়মন্ডের নাকফুল ও নগদ কিছু টাকা পাওয়া যাচ্ছে না। যেগুলোর আনুমানিক মূল্য এক লাখ দুই হাজার ৩০০ টাকা।

এ ব্যাপারে শিরিণ আক্তার বলেন, দীর্ঘদিন প্রক্টর অফিস ও থানায় অভিযোগ করার পরও কোনো সুরাহা হয়নি। বাসার মালিক বিভিন্নভাবে হুমকি-ধমকি দিচ্ছে। নিরাপত্তাহীনতার কারণে ঘটনার কয়েকদিন পরেই ওই বাসা ছেড়ে দিয়েছি আমরা।

শিরিণ বলেন, বাড়ির মালিকের কাছে বিকল্প চাবি থাকতো। বিভিন্ন সময় আমরা বাইরে থেকে ফিরে দেখতাম রুমের জিনিসপত্র এলোমেলো। মালিক ও তার দুই মেয়েকে জিজ্ঞাসা করলে তারা কিছু জানে না বলতো। এখানে ছোটখাটো জিনিসপত্র হারানো ছিল নিত্যনৈমিত্তিক ঘটনা। এই ঘটনার পরও মেইন দরজার তালা ও ঘরের জানালা, দরজা অক্ষত ছিল।

এ ব্যাপারে বাড়ির মালিক আয়েশা খাতুন বুধবার মুঠোফোনে বলেন, মেইন দরজার চাবি তো মালিকের কাছে থাকাটা স্বাভাবিক। গ্যাস আছে, কারেন্ট আছে- এগুলো আমাদের দেখতে হয়। কিন্তু রুমের চাবি আমাদের কাছে নেই।

অসুস্থতার কারণে মুঠোফোনে কথা বলতে পারছেন না জানিয়ে তিনি বলেন, আমি অসুস্থ আছি, আজ ১২ দিনে হাসপাতাল থেকে আসছি। কী কাহিনী হইছে না হইছে, চুরি কীভাবে হইছে এগুলো সব এসআই বিল্লাল ভাই জানে। আপনি তার সাথে বসে আমার সাথে কথা বলতে পারেন।

তবে হাটহাজারী থানায় যোগাযোগ করে এসআই বিল্লাল/বেলাল নামে সেখানে কোনো পুলিশ উপ-পরিদর্শক (এসআই) নেই বলে জানা গেছে।

এ ব্যাপারে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর ড. রবিউল হাসান ভূঁইয়া দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, পৃথক পৃথক এরকম অনেকগুলা ঘটনা ঘটছে। আমরা আন্তরিকভাবে চেষ্টা করছি সবগুলো সমাধান করার জন্য। যদিও এটা বিশ্ববিদ্যালয় বাউন্ডারির বাইরের ঘটনা। তারপরও আমরা সহকারী প্রক্টরকে দ্বায়িত্ব দিয়েছি, আমি নিজেও খোঁজ-খবর রাখছি।

প্রক্টর বলেন, শুনেছিলাম ওই বাসা-মালিক করোনাক্রান্ত। বিষয়টা মাথায় রেখেছি। আমাদের দিক থেকে আমরা শিক্ষার্থীদের জন্য সর্বোচ্চটা করার চেষ্টা করবো।

হাটহাজারী মডেল থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মাসুদ আলম বৃহস্পতিবার দ্য ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, এ ধরনের কোনো অভিযোগ আমার এখনও জানা নাই।

তবে, ওই থানার পুলিশ উপ-পরিদর্শক (এসআই) আলমগীর জানিয়েছেন, ওসি মহোদয়কে এ ব্যাপারে অবগত করা হয়েছে, খেয়াল নাই হয়তো। আমি দুইবার ঘটনাস্থলে গিয়েছিলাম, মেয়েটা অসুস্থ ছিল। আমি তাকে অন্য বাসার ব্যবস্থা করে দিছি। সে বলেছিল যে, সুস্থ হয়ে আমাকে জানাবে।