কর্মকর্তা হওয়ার দৌড়ে শিক্ষার্থীদের ‘পতিতা’ বলা কর্মচারী!

খোরশেদ আলম
খোরশেদ আলম

বেগম রোকয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের (বেরোবি) সাংবাদিক শিক্ষার্থীদের ‘পতিতা, কুলাঙ্গার, হকার’ বলা তৃতীয় শ্রেণীর সেই কর্মচারী খোরশেদ আলম কর্মকর্তা (সেকশন অফিসার, গ্রেট-২) হওয়ার ব্যাপক তদবির চালাচ্ছে বলে গুঞ্জন উঠেছে। সম্প্রতি বিশ্ববিদ্যালয়ের দুটি পদে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তির বিপরীতে তিনি সেকশন অফিসার পদে আবেদন করেন এবং এই পদে নিয়োগ পেতে মরিয়া হয়ে উঠেছেন বলে অভিযোগ রয়েছে। বিষয়টি নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভেতরে এবং বাইরে চলছে সমালোচনা।

জানা যায়, গত ২৮ সেপ্টেম্বর বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার আবু হেনা মোস্তফা কামাল স্বাক্ষরিত একটি নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়। সেখানে হিসাবরক্ষণ কর্মকর্তা একজন এবং সেকশন অফিসার (গ্রেড-২) একজন শূন্য পদ পূরণে আগ্রহী প্রার্থীদের জন্য আবেদন আহবান করা হয়। আবেদনের শেষ সময় ছিলো গত ২০ অক্টোবর পর্যন্ত। এরই প্রেক্ষিতে গত ১৮ অক্টোবর ওই কর্মচারি ক্যাম্পাসে এসে রেজিস্ট্রার দপ্তরে আবেদন জমা দেন। তার আবেদনের পর অনেক আগ্রহী প্রার্থী হতাশ হয়েছেন। তাদের অভিযোগ, শিক্ষার্থীরা হলো একটা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণ। সেখানে শিক্ষার্থীদের পতিতা, কুলাঙ্গার, হকার বলার পরেও যখন প্রশাসন নিরব থাকে, তখন বোঝার কিছু বাকি থাকে না।

তারা আরো অভিযোগ করে বলেন, উপাচার্যের এলাাকার লোক হওয়ার কারণেই শিক্ষার্থীদের এত অপমান করা সত্ত্বেও উপাচার্য কোন পদক্ষেপ গ্রহণ করেনি বরং খোরশেদের বাসায় দাওয়াত খেয়ে তাকেই মৌন সমর্থন করেছেন উপাচার্য। সেকশন অফিসার পদে খোরশেদ নিয়োগ পেতে ব্যাপক তদবির চালাচ্ছে একং উপাচার্যের কাছের হওয়ায় তারই (খোরশেদ) নিয়োগ হতে পারে বলে শঙ্কাও প্রকাশ করেছেন তারা।

এদিকে খোরশেদ ক্যাম্পাসে প্রবেশ করায় ফুঁসে উঠেছে শিক্ষার্থীরা। শিক্ষার্থীদের পতিতা, হকার ও কুলাঙ্গার বলার পরেও তিনি কীভাবে ক্যাম্পাসে প্রবেশ করে এ নিয়ে ফেসবুকসহ বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে চলছে ব্যাপক সমালোচনা। খোরশেদের স্থায়ী বরখাস্তসহ শিক্ষার্থীদের স্বার্থ সংশ্লিষ্ট কয়েক দফা দাবিতে আগামীকাল (বুধবার) সকাল ১০টায় মানববন্ধনের ডাক দিয়েছে সাধারণ শিক্ষার্থীরা।

সার্বিক বিষয়ে জানতে বিশ্বাবিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. নাজমুল আহসান কলিমউল্লাহর মুঠোফোনে একাধিকবার ফোন দেয়া হলেও তিনি রিসিভ করেনি।

পড়ুন: ‘অফিসিয়াল প্রসিডিউর মেনেই বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের পতিতা বলেছি’

প্রসঙ্গত, কর্মচারী খোরশেদ সাংবাদিক ও শিক্ষার্থীদের নিয়ে ফেসবুকে ‘পতিতা, হকার, চাটুকার, কুলাঙ্গার’ উল্লেখ করে স্ট্যাটাস দেন। পাশাপাশি শিক্ষার্থীদের ঝাড়ুপেটা করে ক্যাম্পাস থেকে বের করে দেয়ার হুমকিও দেন এ কর্মচারী। এতে করে এ কর্মচারী ও নবপ্রজন্ম শিক্ষক পরিষদ তীব্র সমালোচনার মুখে পড়ে। এর প্রতিবাদে শিক্ষার্থীরা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটকের সামনে কর্মচারীর খোরশেদের কুশ পুত্তলিকা দাহ করেন। এদিকে শিক্ষার্থীদের উদ্দেশ্য করে এমন মন্তব্য করার আগে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসিকে অবগত করেই লিখেছেন বলে স্বীকার করেছেন বর্তমান ভিসির আমলে নিয়োগপ্রাপ্ত কর্মচারী খোরশেদ আলম।

খোরশেদ বলেন, আমি ফেসবুকে যা লিখেছি সবকিছুই অফিসিয়াল প্রসিডিউর মেইনটেইন এবং আমাদের উপাচার্য মহোদয়কে অবগত করে তারপর লিখেছি। এছাড়া নব প্রজন্ম শিক্ষক সংগঠনের নেতৃবৃন্দ ও কর্মচারীসহ প্রশাসনের সব সংবাদ বয়কট করে শাস্তির দাবিতে ভিসিকে স্মারকলিপি দেয় বিশ্ববিদ্যালয় সাংবাদিক সমিতি। বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন সংগঠনের পাশাপাশি দেশের ৩০টি সাংবাদিক সংগঠন থেকে তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ এবং অবিলম্বে নবপ্রজন্ম শিক্ষক পরিষদের নেতৃবৃন্দদের ও কর্মচারীর দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করার দাবি জানানো হয়।