রিকশাচালকের পা ভেঙ্গে দিলেন জাবি কর্মকর্তা

রিকশাচালকের পা ভেঙ্গে দিলেন জাবি কর্মকর্তা
সুদীপ্ত শাহীন ও রিকশাচালক মো. নাহিদ

কন্ট্রোল রুমে নিয়ে রিকশাচালক মো. নাহিদের পা ভেঙ্গে দিয়েছেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় (জাবি) প্রধান নিরাপত্তা কর্মকর্তা সুদীপ্ত শাহীন। শুক্রবার (১৬ অক্টোবর) রাতে এ ঘটনায় ঘটে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, প্রধান নিরাপত্তা কর্মকর্তা সুদীপ্ত এর আগেও এ ধরনের বেশকিছু ঘটনায় ক্যাম্পাসে পরিচিত মুখ।

জানা গেছে, শুক্রবার সন্ধ্যা ছয়টার দিকে রিকশাচালক নাহিদ মাইক্রোবায়োলজি বিভাগের একজন শিক্ষকের ছোট বোনকে তার ভ্যানে করে বাসায় পোঁছে দেন। পরবর্তীতে ফেরার সময় তাকে আটক করেন সুদীপ্ত শাহিন। আটকের পর তাকে কনট্রোল রুমে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে রাত সাড়ে নয়টা তার উপর নির্যাতন চালানো হয়।

প্রশাসনিক সূত্রে জানায়, করোনাকালে বিশ্ববিদ্যালয়ের অভ্যন্তরে যেকোন ধরনের রিকশা প্রবেশ নিষিদ্ধ। কোন চালক রিকশা নিয়ে প্রবেশ করলে তার বিরুদ্ধে জরিমানাসহ আইনি ব্যবস্থা নেওয়ার বিধান রয়েছে। শিক্ষার্থীদের বলছেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের কোন ধরনের নিয়ম-নীতির তোয়াক্কা না করে রিকশাচালকের সাথে মধ্যযুগীয় কায়দায় বর্বর আচারণ দেখিয়েছেন সুদীপ্ত।

এদিকে শিক্ষার্থীদের উদ্যোগে ভুক্তভোগী রিকশাচালকের চিকিৎসার ব্যবস্থা করা হয়েছে। নাহিদের চিকিৎসা খরচ সংগ্রহে সাহায্যকারী আইন ও বিচার বিভাগের শিক্ষার্থী ইমরান হোসেন বলেন, ‘একজন বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান নিরাপত্তা কর্মকর্তা কতটা অনিরাপদ, সুদীপ্ত শাহীন তার জ্বলন্ত উদাহরণ। ইতঃপূর্বে বহু ন্যাক্কারজনক ঘটনার সৃষ্টিকারী হিসেবে তিনি বহুল আলোচিত ও পরিচিত।’

বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান নিরাপত্তা কর্মকর্তার এ ধরনের কর্মকাণ্ডের মাত্রা বৃদ্ধির ঘটনায় ক্যাম্পাস জুড়ে নিন্দার ঝড় উঠেছে। অনেকেই সামাজিত যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে প্রতিবাদমূলক পোস্ট দিয়ে প্রধান নিরাপত্তা কর্মকর্তা সুদীপ্ত শাহীনের অপসারণ দাবি করছেন।

এ বিষয়ে রেজিস্ট্রার রহিমা কানিজ বলেন, সুদীপ্ত শাহীনের নামে একাধিক অভিযোগ ইতোমধ্যে আমাদের কাছে এসেছে। প্রো-ভিসি নুরুল আলমকে প্রধান করে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। তদন্ত কমিটির রিপোর্ট জমা দিলে আমরা প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবো। আর নাহিদের মারধরের বিষয়টি আমি শুনেছি। আগামীকাল নিরাপত্তা কর্মকর্তা ও অন্যান্যদের সাথে কথা বলবো। অভিযোগের সত্যতা পেলে প্রযোজনীয় ব্যবস্থা নিবো।

সুদীপ্ত শাহীনের বিরুদ্ধে গঠিত তদন্ত কমিটির প্রধান প্রো-ভিসি নুরুল আলম দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, সুদীপ্ত শাহীনের বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগগুলোর তদন্ত শেষ হয়েছে। তিনি বলেন, শুধু একজন আইন কর্মকর্তাকে দিয়ে অভিযোগগুলো লেখার কাজ বাকি আছে। আমরা খুব তাড়াতাড়ি তদন্তের রিপোর্ট জমা দিবো।

এর আগে, সুদীপ্তের বিরুদ্ধে নারী সংবাদকর্মীকে উত্ত্যক্ত করা, বিশ্ববিদ্যালয়ের দুই প্রভাষক ও প্রাক্তন শিক্ষার্থীর সাথে অসৌজন্যমূলক আচরণ, বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মকর্তা-কর্মচারীকে মারধর এবং ক্যাম্পাসে মাদক বাণিজ্যের অভিযোগ রয়েছে। তাঁর বিরুদ্ধে বেশ কয়েকটি ঘটনায় তদন্ত চললেও তিনি স্বপদে বহাল আছেন তিনি।

তবে রিকশাচালককে মারধর বিষয়টি অস্বীকার করেছেন সুদীপ্ত শাহীন। আজ রবিবার রাতে তিনি মুঠোফোনে দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, আইন অমান্য করে নাহিদ শুক্রবার সন্ধ্যায় ক্যাম্পাসে ভ্যান চালিয়েছে। এ কারণে তাকে আটক করা হয়েছিল। পরে রাতেই তাকে ভ্যানসহ ছেড়ে দেয়া হয়েছে। এসময় মারধরের কোন ঘটনা ঘটেনি।