জাবি অধ্যাপকের বিতর্কিত কর্মকাণ্ড

হলে ছাগল পালনের পর এবার লাশের গাড়িতে ইট বহন

আলী আজম তালুকদার
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক আলী আজম তালুকদার

কুরবানী ইদের আগে আবাসিক হলে ছাগল পালন করে তীব্র সমালোচনার পর এখন আরেক বিতর্কিত কর্মকাণ্ড জড়িয়েছেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক আলী আজম তালুকদার। এবার তিনি নিয়মবর্হিভূতভাবে বিশ্ববিদ্যালয়ের নির্দেশনা অমান্য করে এক অফিসের রাস্তার ইট নিয়ে অন্য অফিসের ভবন তৈরিতে ব্যবহারের চেষ্টা করছেন। আর এ ইট বহন করেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের লাশবাহী গাড়িতে। আর তার এ অবিবেচনাপ্রসূত কাজ নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-কর্মকর্তা কর্মচারীদেও মধ্যে সমালোচনার ঝড় বইছে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবহন কার্যালয়ের কর্মকর্তা সূত্রে জানা যায়, শহীদ সালাম-বরকত হলের অফিস কক্ষ নির্মাণ কাজের জন্য ৫০ লাখ টাকার বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। এ ভবনের ইটের জোগান দিতে বিশ^বিদ্যালয়ের পরিবহন চত্বর ও পরিবহনের রাস্তা থেকে ইট কুড়িয়ে হলের কাজে লাগিয়েছেন হলের প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক আলী আজম তালুকদার। আর কুড়িয়ে আনা ইট তিনি পরিবহন করেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের লাশবাহী গাড়িটি ব্যবহার করে। যা নিশ্চিত করেছেন পরিবহন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা।

অধ্যাপক আলী আজম তালুকদার একই সাথে শহীদ সালাম-বরকত হলের প্রভোস্ট ও পরিবহন কার্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত শিক্ষকের দায়িত্ব পালন করছেন। এই সুযোগে তিনি বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে পরিবহন কার্যালয়ের ইট হলের অফিস নির্মাণের কাজে ব্যবহার করেছেন। তবে বিশেষ প্রয়োজনে এক অফিসের দ্রব্যাদি অন্য অফিসের কাজে ব্যবহারের ক্ষেত্রে রেজিস্ট্রারের অনুমতি নেওয়ার কথা বলা হয়েছে।

জানা যায়, পরিবহন কার্যালয়ের ইট ব্যবহারে রেজিস্ট্রার অফিসের কোন অনুমতি দূরের কথা অবগতও করেননি অধ্যাপক আজম।

সংশ্লিষ্ট সূত্র হতে আরো জানা যায়, হল অফিস নির্মাণে ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। এই প্রতিষ্ঠানই ইটসহ যাবতীয় দ্রব্যসামগ্রী ক্রয় পূর্বক অফিস নির্মাণের কাজ করবে। কিন্তু অধ্যাপক আজম নিয়ম ভেঙে এক অফিসের ইট কেন অন্য অফিসে কাজে লাগালে অবৈধ অর্থ বিনিময় হয়েছে বলে ধারণা করেন হল ও পরিবহন অফিস সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। এছাড়া লাশবাহী গাড়িতে অবৈধভাবে ইট বহন করায় ক্ষোভ প্রকাশ করেন তারা।

এক অফিসের জিনিস অন্য অফিসে ব্যবহার ও বিশ্ববিদ্যালয়ের নিষেধাজ্ঞার ব্যাপারে অধ্যাপক আলী আজম তালুকদার বলেন, ‘হ্যা, কিছু ইট পরিনহন অফিস থেকে আনা হয়েছে হলের একটা কুয়া তৈরির জন্য। তবে তার সমপরিমান টাকা আবার বিশ্ববিদ্যালয়কে ফেরত দেওয়া হবে। এজন্য সব প্রক্রিয়াই অবলম্বন করেছি। ইট ব্যবহারের জন্য মৌখিকভাবে সবধরনের অনুমতি নিয়েছি।’

লাশবাহী গাড়িতে ইট পরিবহনের বিষয়ে তিনি বলেন, ‘পরিবহন অফিসে বিশ্ববিদ্যালয়ের এধরনের কোনো গাড়িই নাই। মেডিকেল অফিসের থাকতে পারে। তবে আমি তা ব্যবহার করিনি।’

অন্যদিকে লাশবাহী গাড়ির বিষয়টি নিশ্চিত করে ভারপ্রাপ্ত প্রধান মেডিকেল অফিসার ডা. মো. শামছুর রহমান বলেন, ‘আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ে লাশ বহনের জন্য একটি লাশবাহী পিকআপ আছে। তবে এটি পরিবহন অফিসের আওতাধীন। আমরা চাইলে তারা এটি আমাদেরকে ব্যবহার করতে দেন।’

এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার রহিমা কানিজ বলেন, ‘আমি এ বিষয়ে কিছুই জানিনা। আমার কাছ থেকে কোনো ধরনের অনুমতি নেওয়া হয়নি। আর এটি ইঞ্জিনিয়ারিং অফিসের দায়িত্বে। তারাই ভালো জানে।’

অধ্যাপক আলী আজম তালুকদারের এধরনের কর্মকাÐের বিষয়ে উপ-উপাচার্য (প্রশাসন) অধ্যাপক আমির হোসেন বলেন, ‘আমি পরিবহন অফিসের দায়িত্বে। কিন্তু আমি কিছুই জানিনা। সে তার মতো করে কাজ করে। তার বিষয়ে উপাচার্যই ভালো বলতে পারবেন।’

উল্লেখ্য এর পূর্বেও বিভিন্ন গণমাধ্যমে অধ্যাপক আজমের বিরুদ্ধে নিয়মবর্হিভূতভাবে বিশ্ববিদ্যালয় পরিবহন অফিসের ৩০ লক্ষ টাকা দামের একটি মাইক্রোবাস ও একজন ড্রাইভারকে ব্যক্তিগত ব্যবহারের জন্য বছরে ৯ লাখ ১৩ হাজার টাকা খরচ ও পরিবহন অফিসের জ্বালানি ক্রয়ে ব্যাপক জালিয়াতির অভিযোগ অনুসন্ধানে উঠে আসে।

এছাড়াও নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করে বিশ্ববিদ্যালয়ের সম্পদ ব্যক্তিগত কাজে ব্যবহার, নিয়োগে অনিয়ম, বিশ্ববিদ্যালয়ের অভ্যন্তরে পুকুর তৈরি এবং নিয়মবহির্ভ‚তভাবে বাসা সংস্কারে অঢেল অর্থ খরচের অভিযোগ আছে তার বিরুদ্ধে।